বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের মুখে খোয়াই জেলা হাসপাতাল

khw-otগোপাল সিং, খোয়াই, ৩ আগষ্ট ।। ত্রিপুরার উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১লা আগষ্ট থেকে রাজ্যের সরকারী চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ। মাঝে কেটে গেল ক’টা দিন। কিন্তু কিভাবে কাটছে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের দিনগুলি? কেমন কাটছে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের? আর কেমন করে মানিয়ে নিচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে নিয়মিত চিকিৎসা সুবিধা প্রাপকরা।
খোয়াই জেলায় কিন্তু এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নাজেহাল হচ্ছেন ঐ কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষরাই। দেখা যাচ্ছে খোয়াই জেলা হাসপাতাল সম্মুখে চিকিৎসকদের চেম্বারগুলি ফাঁকা। রাস্তা-ঘাট যেন শুনসান। চেম্বারগুলির আশপাশ জনশূন্য। অপরদিকে হাসপাতালের ভেতরে উপচে পড়া ভীড়। সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
খোয়াই হাসপাতাল এলাকায় আগরতলা থেকে প্রতি রবিবার ১০-১২ জনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের টিম খোয়াইতে আসতেন। এর মধ্যে দুজন অস্থি বিশেষজ্ঞ আসতেন এবং প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগি দেখতেন। যা প্রতি মাসে গড় হিসাবে ৭০০ থেকে ৮০০ দাঁড়ায়। দুজন অস্থি বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে শতকরা ৮০ জন গ্রামের শ্রমিক-কৃষক শ্রেনীর মানুষ উপকৃত হতেন। কিন্তু এখন উনারা কোথায় যাবেন এবং কিভাবে চিকিৎসা করাবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা শুরু। কারন অর্থনৈতিকভাবে উনারা খুবই দুর্বল। অথচ প্রতিদিন আগরতলা থেকে খোয়াইতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন আসতেন এবং গরীব অংশের জনগন অনেক দু:খ-কষ্টের মধ্য দিয়েও প্রাইভেট চিকিৎসার সুযোগ গ্রহন করতেন। কিন্তু মাঝপথে সব থমকে যাবার ফলে সেই সকল পা-ভাঙা, হাত-ভাঙা, কোমড় ভাঙা, গর্ভবতি ও প্রসূতি মায়ে’রা কিংবা দীর্ঘদিন যাবত যে সমস্ত রোগীরা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করিয়ে সুফল পাবার দোড়গোড়ায় তারা কোথায় যাবেন, ঠিক এই মুহুর্তে সেই সব প্রশ্নের উত্তর নেই কারোর কাছেই। যেহেতু খোয়াই জেলা হাসপাতালে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর অভাব রয়ে গেছে। সেই অবস্থায় রাজ্যের সাধারন শ্রমজীবি অংশের মানুষ, গরীব-মধ্যবিত্ত শ্রেনীর জনসাধারন কোথায় যাবেন, কি করবেন, তা ভেবেই আৎকে উঠছেন।
খোয়াই জেলা হাসপাতালে অনেক কিছুই নেই। কিন্তু নেই এর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ’র অভাব। খোয়াই জেলা হাসপাতালে যেমন কোন অস্থি বিশেষজ্ঞ নেই তেমনি নেই ইএনটি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ। নেই-এর তালিকা আরোও অনেক লম্বা। ডাক্তার বাবু আছেন, সোনোগ্রাফি মেশিনও আছে কিন্তু নেই পরিষেবা। ইসিজি, এক্স-রে মেশিন আছে কিন্তু পরিষেবা নেই। প্যাথলজি নিম্নমানের। ম্যাডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট যিনি দায়িত্বে আছেন, উনার প্রশাসনিক কোন দক্ষতা আছে বলে মনে করেন না জনগন। উনি সারাদিন পান চিবুতে চিবুতে শুধু সরকার এর দিকে আঙ্গুল তুলেন। সবমিলিয়ে যা দরকার খোয়াই জেলা হাসপাতালে কোন পরিকল্পনাই নেই।
এবিষয়ে সেবক-সেবিকাদেরও তেমন কোন প্রয়াস নেই। ভিড় সামলানোয় সবার দায়সারা ভাব। জনগন দিশেহারা। যার ফলে প্রতিদিন খোয়াই জেলা হাসপাতালে এবং বহি:বিভাগে প্রায় ২-৩ শতাধিক রোগীর ভীড় জমছে। সেই সাথে বহি:বিভাগে এবং হাসপাতালে একজন চিকিৎসক ডিউটিতে থাকেন। জরুরী এবং হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের উনাকেই দেখতে হয়। অবাক করার বিষয় হলো খোয়াই জেলা হাসপাতালে একটি ও.টি. বিভাগ নেই। এর মধ্য দিয়েই খোয়াই জেলা হাসপাতালে ক্রমশ: বাড়ছে রোগীদের ভীড়। সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাদের মৌলিক অধিকার।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*