অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সে ছেয়ে গেছে খোয়াই

khwগোপাল সিং, খোয়াই, ২০ ফেব্রুয়ারী ।। ‘অস্ত্রহীন পুলিশ, সিগন্যাল ছাড়া ট্রাফিক’। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে ভুটানের রাজধানী থিম্পুরে পুলিশ আছে কিন্তু অস্ত্রের প্রয়োজন হয়না, কারন সেখানে এমন কোন অপরাধ হয়না যাতে অস্ত্র ব্যবহারে আসতে পারে। অপরদিকে ট্রাফিক সিগন্যালের প্রয়োজন হয়না কারন সেখানে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় জেব্রা ক্রশিং। যানবাহন থেকে পথচারীদের বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনও পথচারীকে জেব্রা ক্রশিং করতে দেখলে গাড়ী নিজে থেকেই থামিয়ে নেন যান চালকরা। কিন্তু ১২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে এটা সম্ভব না হলেও ত্রিপুরার মতো ৩২ লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্যে সেটা সম্ভবপর হতো কি? প্রশ্নটা কিন্তু থাকছেই।
অত:পর অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থায়। ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দ্দার। এই হচ্ছে খোয়াই জেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থা। অনেকটা ছেলে খেলার মতোই চলছে। এমনটাই অভিমত জনসাধারনের। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, খোয়াইয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ মুখ থুবরেই পড়েছে। বিশেষ করে নৃপেণ চক্রবর্তী এভিন্যু, স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, সোনারতরী এলাকা এবং সুভাষপার্ক বাজার সহ বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্টগুলো কোন প্রকার ট্রেনিং বা প্রশিক্ষন ছাড়াই সাদা পোষাকে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে ট্রাফিকি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে দেখেও ভূমিকাহীন ট্রাফিক দপ্তর। প্রশিক্ষনহীন ট্রাফিক পুলিশের উল্টো দিশায় দেখানো দিক নির্দেশ মেনে মুহুর্তেই বিপাকে পড়ছেন পথচারী থেকে যানবাহন চালকরা। ভুল দিশা দেখানোর বিষয়ে আবার কোন কিছু বলতে গেলে মানুষের দিকেই তেড়ে আসছেন তারা। এছাড়া সন্ধ্যা নেমে আসতেই একটি সিগন্যাল লাইট হাতে ট্রাফিক পুলিশকেও বেকায়দায় পড়তে হয়। কারন তাদের হাতে যে সিগন্যাল লাইট দেওয়া হয়েছে তা রিচার্জেবল। দেখা যায় সন্ধ্যা নামতে নামতেই কয়েক দফা সিগন্যাল দেখানোর পর সেই সিগন্যাল লাইটটি রিচার্জ করার প্রয়োজন হয়। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির পক্ষে বারবার লাইট রিচার্জ করা কি সম্ভব? প্রশ্ন ট্রাফিক পুলিশের।
খোয়াই শহরে মাত্রারিক্তভাবে বেড়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। আর তাতেই ছুটন্ত বেগে স্ট্যান্ট দেখানোর পালাও শহরের উপর দিয়ে সিনেমেটিক কায়দায় দেখাতে ব্যস্ত বিশেষ করে নবীন প্রজন্মরা। এছাড়া ছোট-বড় গাড়ীগুলো রাস্তার দিক নির্দেশ অমান্য করে গাড়ী চালাতো আনন্দ উপভোগ করেন। এভাবেই বেপরুয়া যান চলাচল চলছে। পাল্লা দিয়ে রাস্তায় ছোট-বড় যানবাহনের যত্রতত্র রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কোনও ভুমিকা নেই ট্রাফিকের। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নকল বা ভূঁয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর রমরমা। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী রাস্তায় নেমেছিলেন ডি-টি-ও সহ এডিশন্যাল এস-পি সাহেব। ডি-টি-ও সাহেব ঠিকই বোঝে যান খোয়াই শহরে নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স ছেয়ে গেছে। রয়েছে নামে-বনামে ড্রাইভিং লাইসেন্স। ছোট-বড় অনেক গাড়ী, বাইক সহ অটো শুধু থানা বাবুদের মাসোহারা দিলেই উনারা ধৃতরাষ্ট্র। জনগনের অভিযোগ ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছাড়া, আম নাগরিকের জীবনের চিন্তা-ভাবনা মাথায় না রেখে এভাবে যদি মাসোহারার বদলে কোনও ধরনের প্রশিক্ষনহীন যান চালক বা বাইক আরোহীদের হাতে অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্বেও আরক্ষা প্রশাসন চোখ বুজে থাকে তবে জনসাধারনের কি হবে? অনভিজ্ঞ, প্রশিক্ষনহীন যান চালকদের হাতে কত জীবন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দৌঁড়ছেন এরকম অনভিজ্ঞ, প্রশিক্ষনহীন যান চালকদের উপর ভরসা করেই। পথচলতি মানুষ বাইকের তান্ডবের স্বীকার হচ্ছেন। যারা বাইক নিয়ে হিরোগিরি করতে গিয়ে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারন হয়ে উঠছে তাদের ক’জনের কাছে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে তাতে যথেষ্ট সন্দীহান জনসাধারন। তাই জনগনের প্রশ্ন এভাবে আর কত? ট্রাফিক দপ্তর যদি মাঠে-ময়দানে সরজমিনে নেমে মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদ না দেখায় তবে জনগন তো দিশেহারা হবেনই। অন্তত খোয়াইবাসীর দু:খের দিন তো কেবলই বেড়ে চলছে। বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর ফলে ইদানিংকালে যুব থেকে বৃদ্ধ বহু নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে গেছে। একমাত্র দ্রুতগতিতে বাইক চালানোর খেশারত দিয়েছেন তারা। আবার রাজ্যের বেশীরভাগ পথ দূর্ঘটনার জন্যই কিন্তু বেপরোয়া গতি যতটা দায়ী ততটাই দায়ী হেলমেট ছাড়া, অধিক যাত্রীবোঝাই, রাস্তার সঠিক দিকে যান না চালানো এবং ওভারটেক করার প্রবনতা। ত্রিপুরা পুলিশের তরফে যানবাহনের গতি বেধে দেওয়া হলেও, পুলিশের কর্তা বাবুরাই নিজেদের পকেট ভারি করে নিয়ে সব কিছুই না দেখার ভান করেন। প্রয়াস তো উনারাও করছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই জনসাধারনের। তাই প্রশাসনের সুনজরে গোটা রাজ্যেরই ট্রাফিকি ব্যবস্থার উন্নতিকরন করার দাবি জনসাধারনের।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*