রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পাকিস্তানকে হারাল ভারত

ckখেলাধুলা ডেস্ক ।। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট? নাকি, কলকাতার নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন? বুঝতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল। ইনিংসের চার নম্বর বল গড়াতেই সেই দ্বিধা ছড়িয়ে পড়ল। আশিষ নেহরার শট পিচ ঠিকঠাক সামাল দিতে পারেননি মোহাম্মদ হাফিজ। ব্যাটের কোনা ছুঁইয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে জমা হতেই গর্জে উঠল গোটা শেরে-ই-বাংলা! কিন্তু একি, পরক্ষণেই শারজিল খান বাউন্ডারি হাঁকাতেই ফের জেগে উঠল হোম অব ক্রিকেট। যেন ফের দ্বিধায় পড়া- এটি শারজা নাকি লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়াম? নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ভাল ক্রিকেটেরই জয়গান গাইলেন বাংলাদেশের দর্শকরা। তবে পদ্মাপাড়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা দ্বৈরথ লো-স্কোরিং হলেও ঠিক রোমাঞ্চ ছড়িয়ে গেল। অবশ্য ‘মওকা’ কাজে লাগাতে পারল না শহীদ আফ্রিদির দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় দিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল ধোনির ব্লুজরা।
সন্ধ্যায় টস জিতে বোলারদের ওপরই আস্থা রাখলেন ধোনি। বল তুলে দিলেন অভিজ্ঞ পেসার নেহরার হাতে। সঙ্গে অন্য বোলারদের আক্রমণে কোণঠাসা পাকিস্তান ১৭.৩ ওভারে মাত্র ৮৩ রানে অলআউট। এরপর জবাব দিতে নেমে ভারত ১৫.৩ ওভারে ৫ উইকেটে দাপটের সঙ্গেই পাড়ি দিল পথ। দল জিতল ৫ উইকেটে, ৪.৩ ওভার হাতে রেখেই। বলা হচ্ছিল সবুজে মোড়ানো উইকেটে লড়াইটা আসলে ছিল পাকিস্তানের পেস বনাম ভারতের ব্যাটিং। শুরুতে হিসেবটা উল্টে গেল। ভারতের পেস আক্রমণ সামাল দিতে গিয়েই নাভিশ্বাস শহিদ আফ্রিদির দলের। এরপর সেই সবুজ উইকেটে এভাবে পাকিস্তানের পেসাররাও ঝড় তুলবেন কে জানতো?
প্রথম ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক আবেদনে গলা ফাটিয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। তবে দু’হাত উঁচু করে উচ্ছ্বাসে ভাসার সুযোগ পেয়েছেন দ্বিতীয় বলে। তার গুডলেন্থ বল সামাল দেওয়া হলো না রোহিত শর্মার। বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়া কাপে জয়ের নায়ক ফিরে গেলেন কোন রান না করেই। এক বল বিরতিতে ফের সেই আমির ম্যাজিক। স্পটফিক্সিংয়ের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠা এই পেসারের নিচু হয়ে আসা বল আঘাত হানে আজিঙ্কা রাহানের (০) প্যাডে। লঙ্কান আম্পায়ার রুচিরা পাল্লিয়াগুরুগে আঙুল তুলতে সময় নেননি!
তৃতীয় আঘাতটিও সেই আমিরের। এবার সুরেশ রায়নাকে (১) বোকা বানালেন। রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দেন ওয়াহাব রিয়াজের হাতে। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ভারত শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন আমির। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি সতীর্থ বোলাররা। অবশ্য ৮৩ রানের মতো মামুলী পুঁজি নিয়ে কি আর লড়াই হয়! বিরাট কোহলি-যুবরাজ সিং জুটিই ভেঙ্গে দেয় পাকিস্তানের অসম্ভবকে সম্ভব করার সেই স্বপ্ন। দু’জন গড়েন ৬৮ রানের দারুণ এক জুটি। কোহলি ৪৯ রান করে আম্পায়ারের ভুল আউটের শিকার হয়ে ধরেন সাজঘরের পথ। যুবরাজের ব্যাটে অপরাজিত ১৪ রান। সঙ্গে ধোনি অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে।
এর আগে ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজকে (৪) শুরুতেই হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান। সেই বিপর্যয় আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি। এরপর ওয়ানডাউনে নামা খুররম মঞ্জুর জুটি বাধেন অন্য ওপেনার শারজিল খানের সঙ্গে। কিন্তু এই জুটিরও বেশি দূর যাওয়া হয়নি। মাত্র ১৮ রানেই শেষ! জসপ্রিত বুমরাহ হঠাৎ লাফানো বলে ব্যাট চালালে প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো আজিঙ্কা রাহানের হাতে ধরা পড়েন বাঁ-হাতি শারজিল। ৯ রানে ধরেন সাজঘরের পথ।
ভারতের বোলিং তোপে এরপর একের পর এক উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। ১১.৪ ওভারে ৫২ রান উঠতেই নেই ৭ উইকেট। খুররম মঞ্জুরের ১০ রান ছাড়া আর কেবল একজন ব্যাটসম্যান ডাবল ফিগারে পৌঁছাতে পারেলেন। দুই রানে বিদায় শহিদ আফ্রিদিও।
যদিও অষ্টম উইকেটে জুটিতে মোহাম্মদ সামিকে নিয়ে কিছুটা লড়েছিলেন সরফরাজ। কিন্তু ১৫.১ ওভারে ব্যক্তিগত ২৪ বলে ২৫ রান করে তিনিও সাজঘরে সঙ্গী হন আফ্রিদির। মনে হচ্ছিল পাকিস্তান বুঝি টি-টুয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটাও করে ফেলবে। ২০১২ সালে দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল মাত্র ৭৬ রানে। সেই লজ্জায় অবশ্য পড়তে হয়নি এবার। ৮৩ রানে ইনিংস শেষ তাদের। ভারতের হার্দিক পান্ডে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি উইকেট রবিন্দ্র জাদেজার। এশিয়া কাপের লড়াইয়েও এবার পাকিস্তানকে টেক্কা মারল ভারত। ১২ বারের লড়াইয়ে ৬ বার জিতেছে তারা। ৫ বার পাকিস্তান। ১৯৯৭-এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি বৃষ্টির জন্য পণ্ড হয়েছিল। আর ৭ বারের টি-টুয়েন্টি লড়াইয়ের ফলটাও একেবারেই একপেশে। ভারত জিতল ৫টি ম্যাচে। একটি পাকিস্তান। অন্যটিতে জয়ী বৃষ্টি! ক্রিকেটের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই সেই পুরনো উন্মাদনা দিতে পারলো কোথায়? আমিরের দুর্দান্ত স্পেল ছাড়া ক্রিকেটের সেরা দ্বৈরথের প্রায় পুরোটা জুড়েই থাকল ভারতের রাজত্ব।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*