খেলাধুলা ডেস্ক ।। সমীকরণটা জলের মতো পরিষ্কার- জিতলেই ভারতের মিলবে ফাইনালের পাসওয়ার্ড! অন্যপ্রান্তে বাংলাদেশের কাছে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার। ম্যাচটা তাদের জন্য ছিল ‘ডু অর ডাই।’ এমন মেজাজের এক ম্যাচে ফের বিরাট কোহলির ব্যাট কথা বলল। আর তাতেই ৪ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। এই জয়ে প্রথম দল হিসেবে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল ভারত। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হয়ে গেল- সেই কথাটাও বলার সুযোগ নেই! শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে রান রেটের বদান্যতায় ফাইনালে যেতেও পারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দল। তাতে অবশ্য অনেক সমীকরণ মেলাতে হতে পারে তাদের। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। তারা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে তোলে ১৩৮ রান। জবাব দিতে নেমে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ধোনির দল। দলের বিপর্যয়ে আরো একবার কথা বলেছে বিরাট কোহলির ব্যাট। যেমনটা হয়েছিল ‘চিরশত্রু’ পাকিস্তানের বিপক্ষে। চাপের মুখে দাঁড়িয়ে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৯ রান। সেই ম্যাচের জয়ের নায়ক লঙ্কানদের বিপক্ষে যখন উইকেটে গেলেন তখন ১১ রান তুলতেই ভারতের ১ উইকেট নেই। শিখর ধাওয়ান ফিরে গেছেন ১ রানে। এরপর চোট কাটিয়ে ওঠা রোহিত শর্মাও বেশিদূর যেতে পারেননি! ১৫-তেই তাকে থামিয়ে দেন লঙ্কান পেসার নুয়ান কুলাসেকারা। এরপর সুরেশ রায়নাকে নিয়ে জুটি বাধেন কোহলি। তাতেই পথ খুঁজে পায় ভারত। কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে দেখে-শুনে খেলতে থাকেন দু’জনে। গড়েন ৪৫ বলে ৫৪ রানের জুটি। পরে ২৫ রানে ফিরে যান রায়না। কোহলির সঙ্গে এরপর জুটি বাধেন যুবরাজ সিং। যেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচেরই আরেক দৃশ্য। তারা দু’জনে টেনে নিয়ে গেলেন ভারতকে। চতুর্থ উইকেটে ৩৪ বলে দু’জন গড়েছেন ৫১ রানের জুটি। মাত্র ১৮ বলে ঝড়ো গতিতে ৩৫ রান তুলে সাজঘরের পথ ধরেন যুবি। এরপর দ্রুত ফিরে যান হার্দিক পান্ডে (২)।
শেষ ২ ওভারে জিততে ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১৪ রান। ধোনিকে সঙ্গে নিয়ে কোহলি বাকীটা পথ পাড়ি দেন। আরো একবার বিপদের মুখে দলকে জেতালেন এই ডানহাতি। কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৪৭ বলে ৫৬ রানে। সঙ্গে ধোনি অপরাজিত ছিলেন ৭ রানে। ভারতের রান ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪২। শ্রীলঙ্কার হয়ে কুলাসেকারা নেন ২ উইকেট।
এর আগে ব্যাট হাতে স্বস্তিতে ছিল না শ্রীলঙ্কা। ভারতের বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম থেকেই দেখেশুনে শুরু করেন লঙ্কান দুই ওপেনার তিলকারত্নে দিলশান ও দিনেশ চান্দিমাল। আশিষ নেহরার করা প্রথম ওভার থেকে চার রান তুলে নেন চান্দিমাল। জসপ্রিত ভুমরাহর করা দ্বিতীয় ওভার থেকে আসে মাত্র এক রান। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো লঙ্কানদের তৃতীয় ওভারে। নেহেরার দ্বিতীয় বলে মিড-উইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধোনির গ্লাভসে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন চান্দিমাল (৪)। দলীয় রান তখন মাত্র ৬। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন ভুমরাহ। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১৫ রানের মাথায় ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন জয়াসুরিয়া (৩)। পরে ভারত অধিনায়ক ধোনি নেহেরাকে সরিয়ে বোলিং আক্রমণে আনেন পেসার হার্দিক পান্ডেকে। এসেই শ্রীলঙ্কার বিপদ আরো বাড়িয়ে দেন এ ডানহাতি। সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে নিজের প্রথম বলেই দিলশানকে (১৮) ফাইন লেগে অশ্বিনের ক্যাচে পরিণত করে ভারতকে ম্যাচের লাগাম এনে দেন হার্দিক। তখন লঙ্কানদের রান ৩ উইকেটে ৩১। শ্রীলঙ্কার বিপদের মুহূর্তে চামারা কাপুগেদারার সঙ্গে ৩১ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক ম্যাথুজ। কিন্তু তিনিও হতাশ করেন লঙ্কানদের। ১১তম ওভারে শেষ বলে পান্ডের অফ স্ট্যাম্পের বলে ব্যাট চালালে ইনসাইড এজ হয়ে ব্যক্তিগত ১৮ রানে বোল্ড হন তিনি। দলীয় স্কোর তখন ১১ ওভারে ৪ উইকেটে মাত্র ৫৭ রান। এরপর পঞ্চম উইকেটে কাপুগেদারার সঙ্গে আরো একটা ভালো জুটি গড়ে দলকে বেশ খানিকটা এগিয়ে দেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনে। এই জুটিতে আসে ৩১ বলে ৪৩ রান। ১৭ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২২ রান করেন সিরিবর্ধনে। এরপর অশ্বিনের বলে রায়নার হাতে ধরেন পড়েন এই বাঁ-হাতি। দলীয় ১০০ রানে সিরিবর্ধনে আউট হলে ধানুস্কা সানাকা (১) ও কাপুগেদারা (৩০) রানে সাজঘরে ফেরেন। এরমধ্যে মিরপুর দেখল অন্যরকম এক আউট। ফ্রি-হিটে রানআউট হয়ে ফিরে গেলেন সানাকা! শেষ দিকে থিসারা পেরেরার ৬ বলে ১৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে লঙ্কানরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৮ রান করে। ভারতের হয়ে জসপ্রিত ভুমরাহ, হার্দিক পান্ডে ও অশ্বিন নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। এছাড়া নেহেরা নিয়েছেন ১টি উইকেট। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল ভারত। এবার বাকীটুকুও সেরে নিলো তারা। যাতে দশ টি-টুয়েন্টির মুখোমুখি লড়াইয়ে ৬ বার জিতল ভারত। আর ৪ বার জয়ী লঙ্কানরা।