সিরিয়ায় ‘পশুখাদ্য খেতে বাধ্য হচ্ছে’ মৃত্যুপথযাত্রী শিশুরা

cldআন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সিরিয়ার অবরুদ্ধ এলাকার ‘উন্মুক্ত কারাগারগুলোতে’ অনাহারে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ শিশু, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেন।
সিরিয়াজুড়ে ১৮টি ভিন্ন অঞ্চলে হয় সরকার, নয়তো বিরোধীদের অবরোধের মধ্যে বসবাসরত প্রায় চার লাখ ৮৬ হাজার সাতশ’ শিশু ন্যূনতম খাবার, ঔষধ বা জ্বালানি পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রকৃত সংখ্যা ১৯ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কিছু সাহায্য সংস্থা। রাজধানী দামেস্ক থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত মোয়াদামিয়া এলাকার ১২৬জন বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশের সাক্ষাৎকার নিয়েছে সেইভ দ্য চিলড্রেন। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ শিশু প্রায়দিনই একবারও খেতে পাচ্ছে না। খাদ্যাভাবে শহরের এক-চতুর্থাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত মিজরাবা গ্রামের এক মা উম তারেক জানান, তার এক আত্মীয়ের নবজাতক সন্তান মায়ের দুধ এবং শিশুখাদ্য- কিছুই খেতে না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। গর্ভাবস্থায় ঠিকমতো খাবার না পেয়ে অপুষ্টিতে ভোগায় সদ্য মা হওয়া ওই নারী নবজাতক সন্তানটিকে বুকের দুধ দিতে পারেননি। মাদায়ার এক সুশীল সমাজ কর্মী আব্দুল ওয়াহাব আহমেদ বৃটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানিয়েছেন, শহরটিতে বর্তমানে তিন শতাধিক শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে। ফোলা পেটের অসংখ্য শিশু ও নবজাতকের ছবি প্রকাশিত হয়েছে টেলিভিশনে এবং অনলাইনে। গত জুলাই মাস থেকে শহরটিতে সরকার সমর্থিত বাহিনীর অবরোধ চলছে। চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই আট বছরের একটি ছেলে অনাহারে ভুগে মারা গেছে বলেও জানিয়েছেন আহমেদ। তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির পর দু’বার এলাকাটিতে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে, এটি জরুরি ছিল, কিন্তু একইসঙ্গে অপর্যাপ্তও ছিল। সর্বশেষ ত্রাণ সরবরাহের আগে এলাকাটিতে এক কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ২৩০ ডলারে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ছয় বছরে পা রাখতে যাওয়া সিরিয়ার এ গৃহযুদ্ধে স্থায়ী সমাধান না আসা পর্যন্ত অবরোধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সরকার ও সরকারবিরোধী- দু’ পক্ষই যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অবরোধের আশ্রয় নিচ্ছে। চলমান যুদ্ধবিরতি দেশটিতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বদলে দেবে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো অবরুদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছিল। এখন পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হলেও কোনোরকমে জোড়াতালি দেওয়া এ সরবরাহে খুব একটা সুবিধা হবে না বলে জানিয়েছে দাতব্য সংস্থা ও এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছালেও সরবরাহের গতি ধারাবাহিক ও সমন্বিত নয় বলে সেইভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া স্টিল জানিয়েছেন। ত্রাণবাহী প্রতিটি গাড়িবহরকে ব্যক্তিপর্যায়ে অনুমতি নিতে হচ্ছে, ফলে দীর্ঘ সময়ে খুবই স্বল্প পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে এবং পরবর্তী সরবরাহ কখন হবে- এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততায় বুধবার শান্তি আলোচনা আবারো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*