খেলাধুলা ডেস্ক ।। প্রথমে স্যামুয়েল বাদ্রের বোলিং পরে আন্দ্রে ফ্লেচারের বিধ্বংসী ব্যাটিং। মূলত এই দুটির কাছেই হারতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে লঙ্কানদের হারিয়েছে ক্যারিবিয়রা। এই জয়ে সেমি ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল ড্যারেন সামির দল। হারলেও এখনো সেমির আশা শেষ হয়ে যায়নি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দলের।
রোববার ব্যাঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ান বোলিং তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২২ রান করে লঙ্কানরা। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ বলে ৫৪ রান করেন থিসারা পেরেরা। জবাবে ১০ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের বড় জয় নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য ১২৩ রানের ছোট লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ দিন ক্রিস গেইলের পরিবর্তে জনসন চার্লসের সঙ্গে অবশ্য ওপেনিংয়ে নামেন একাদশে ফেরা আন্দ্রে ফ্লেচার। শুরুতেই লঙ্কান বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন ক্যারিবিয়ান দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও জনাথান চার্লস। ৩ ওভারেই দলীয় স্কোর বোর্ডে ২৯ রান যোগ করেন তারা। তবে দলীয় ৩৯ রানে লঙ্কান দলে মালিঙ্গার বদলি হয়ে আসা ভ্যান্ডারসের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন চার্লস (১০)। এর কিছুক্ষণ পরেই আবারো উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিলিন্দা সিরিবর্ধনের বলে স্ট্যাম্পিং হন মারলস স্যামুয়েলস (৩)। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে ছিলেন ফ্লেচার। রামদিনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করছিলেন এই ডানহাতি। কিন্তু রামদিনও ৫ রানে আগের ব্যাটসম্যানদের পথ ধরেন। দলীয় ৭২ রানে সিরিবর্ধনের ঘূর্ণিতে বোল্ড হন তিনি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা কিছুটা হলেও ধীরে ঘুরতে থাকে। শেষ দিকে জয়ের জন্য দলটির ৩০ বলে ৩১ রানের প্রয়োজন পড়ে। তবে সেই রান খুব সহজেই আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে টপকে যান ফ্লেচার। নির্ধারিত ওভার শেষ হওয়ার ১০ বল আগে ৩ উইকেটে ১২৭ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ফ্লেচার। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি চার ও ৫টি ছয়ে। এছাড়া রাসেল অপরাজিত ছিলেন ৮ বলে ৩টি চার ও ১টি ছয়ে ২০ রানে। শ্রীলঙ্কার হয়ে সিরিবর্ধনে ২টি ও ভ্যান্ডারসে নিয়েছেন ১টি উইকেট। এর আগে রোববার ব্যাঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। দলীয় ২০ রানেই সাজঘরে ফেরেন গত ম্যাচের জয়ের নায়ক তিলকারাত্নে দিলশান (১০ বলে ১২ রান)। এরপরেই দলীয় ৩২ রানে ফেরেন আরেক ওপেনার দিনেশ চান্ডিমাল (১৮ বলে ১৬)। লঙ্কানদের দলীয় স্কোরে আর ১৫ রান যোগ হতেই একে একে সাজঘরে ফেরেন লাহিরু থিরিমান্নে (৭ বলে ৫ রান), চামারা কাপুগেদারা (১০ বলে ৬ রান) ও মিলিন্দা সিরিবর্ধনে (৩ বলে শূন্য রান)। তাতেই স্কোর বোর্ডে ৮.৪ ওভারে ৪৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে লঙ্কানরা। ষষ্ঠ উইকেটে এসে অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও থিসারা পেরেরা মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। ৭.৩ ওভারে এই রান তোলেন তারা। ১৭তম ওভারে ব্রাভোর বলে ম্যাথুজ (৩২ বলে ২০ রান) আউট হয়ে গেলে এই জুটি ভাঙে। তখন লঙ্কানদের দলীয় স্কোর ৬ উইকেটে ৯১ রান। তবে লঙ্কানদের ইনিংসের এক প্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। ৫ চার ও ১ ছয়ের মারের সাহায্যে তিনি খেলেছেন ২৯ বলে ৪০ রানের এক ইনিংস। তাতেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২২ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৪ ওভার বল করে ১২ রান খরচায় ৩টি উইকেট তুলে নিয়েছেন স্যামুয়েল বাদ্রে। ডোয়াইন ব্রাভো নিয়েছেন ২টি উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল ও কার্লোস ব্রাথওয়েট। এই নিয়ে টি-টুয়েন্টিতে ৯ বারের লড়াইয়ে মাত্র ৩টিতে জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে বিশ্বকাপে ৭ বারের দেখায় পাঁচটিতেই হার মানে ক্যারিবিয়রা। এর আগে ২০১২ সালে কলম্বোয় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে কাঁদিয়ে শিরোপা জিতেছিল গেইলরা। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্রিস গেইলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারায় ক্যারিবিয়রা। এদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কা একাদশ-
দিনেশ চান্দিমাল (উইকেটরক্ষক), তিলকারত্নে দিলশান, লাহিরু থিরিমান্নে, চামারা কাপুগেদারা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (অধিনায়ক), মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, থিসারা পেরেরা, নুয়ান কুলাসেকারা, জেফরি ভ্যান্ডারসে, দুশমান্ত চামিরা ও রঙ্গনা হেরাথ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ-
জনসন চার্লস, ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে ফ্লেচার, ডোয়াইন ব্রাভো, দিনেশ রামদিন (উইকেটরক্ষক), আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন স্যামি (অধিনায়ক), কার্লোস ব্রাথওয়েট, স্যামুয়েল বদ্রি ও সুলেমান বেন।