খোয়াইয়ে বৈদ্যুতিক লাইনে অ্যালজেব্রা, নাজেহাল পুর এলাকা সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ

গোপাল সিং, খোয়াই, ২৪ এপ্রিল ।। পানীয় জলের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকটের মুখে খোয়াইবাসী। বিদ্যুৎ দপ্তরের চরম উদাসীনতায় নাজেহাল খোয়াই জেলার মানুষ। হাসপাতাল সহ সমস্ত জরুরী পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে। একদিকে তীব্র জল সংকট। অন্যদিকে জরুরী পরিষেবার মধ্যে এক্স-রে, সোনাগ্রাফী কিছুই করা যাচ্ছেনা। খোয়াই জেলা হাসপাতালেই ইমার্জেন্সি বিদ্যুৎ পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে আছে। হাসপাতালেও জলের সমস্যা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন নষ্ট হবার পথে। এই নষ্ট ভ্যাকসিনগুলি কিন্তু আমলাদের ছেলে-মেয়েদের দেওয়া হবেনা। কারন হাসপাতালের ভ্যাকসিন উনারা গ্রহন করেন না। স্বভাবতই এই নষ্ট ভ্যাকসিনগুলি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের ঘারেই চাপিয়ে দেওয়া হবে। খোয়াই জেলা হাসপাতালে সোলার প্রজেক্ট ও জেনারেটর থাকলেও সেগুলি সাক্ষীগোপাল হিসাবেই দাঁড়িয়ে আছে। জনগনের কোন কাজেই আসছেনা। 
এদিকে তীব্র গরমে ও বিদ্যুতের রশিকতার মধ্যে প্রকৃতির হাওয়া খেয়েই হাফ ছেড়ে বাঁচছে মানুষ। ঘন্টার পর ঘন্টা দেখা মিলছেনা বিদ্যুতের। কোথাও কোথাও সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মিলছেনা বিদ্যুৎ পরিষেবা। খোয়াইয়ের বিদ্যুৎ পরিষেবার গোটা চিত্রটা মোটেই আশাপ্রদ ঠেকছেনা। গত দুদিনের মধ্যেই সুভাষপার্ক বাজার এলাকায় অত্যাধুনিক এলইডি লাইট, চেঞ্জওভার সহ সিএফএল বাল্ব নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয়েছে মূল্যবান কম্পিউটার সহ ইলেক্ট্রিক মিটার সহ নানান ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। খোয়াই সিঙ্গিছড়া, দূর্গানগর এলাকায় এলইডি বাল্ব নষ্ট হয়েছে। আর এর জন্য এলটি লাইনের সাথে এইচটি লাইনের সাথে সংযোগ হওয়াতেই বাধে বিপত্তি। জনগন অভিযোগ করে বলছেন, দপ্তরের কাজ-কর্ম দেখার মতে কোন যোগ্য ব্যক্তি নেই বলেই এমনটা হচ্ছে। অথচ একসময় খোয়াই বিদ্যুৎ দপ্তরের অধিন খোয়াই, রামচন্দ্রঘাট, আশারামবাড়ী ও প্রমোদনগর সহ তিনটির বেশী এলাকা ছিল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে উন্নত পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে অঞ্চলগুলি ভাগ করা হয়। খোয়াই থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় আশারামবাড়ী, প্রমোদনগর ও রামচন্দ্রঘাট অঞ্চলকে। এতে করে খোয়াই বিদ্যুৎ দপ্তরকে হালকা করে দেওয়া হয়। চেবরী, সোনাতলা, পহরমুড়া সহ বেশ কিছু অঞ্চলে কল সেন্টার স্থাপন করা হয়। তারপরও গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরের বিদ্যুৎ পরিষেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জনগনের মতে, একসময় যেখানে খোয়াই বিদ্যুৎ দপ্তর তিনটি বিধানসভা এলাকার জনগনকে পরিষেবা দিত, সেখানে চার ভাগে বিভক্ত করেও আজ বিদ্যুৎ পরিষেবার কঙ্কাল সাড় বেরিয়ে পড়ছে। অথচ বিদ্যুৎ দপ্তর সব থেকে বেশী রেভিন্যু পাচ্ছে খোয়াই থেকে। তারপরও কেন এই দূর্বিসহ অবস্থা, জনমনে এই জিজ্ঞাসা এখন উর্দ্ধমূখী। কারন আজকালেএর কোন প্রতিবাদ করা হয়না। কোনও এক অজ্ঞাত কারনে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না কেউই। বাধ্য হয়েই সংবাদ মাধ্যমকে বরাবর তথ্য সহ সংবাদ পরিবেশন করে জনগনের দূর্বিসহ অবস্থা তুলে ধরতে হয়। তবে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে কোন সংবাদ পৌছেও না।
শুধুমাত্র খোয়াই পুর এলাকার আশপাশ সহ বিদ্যুৎ কর্মীর প্রায় চার জন করে মোট চারটি গ্রুপে পনের থেকে ষোল জন সেবক রয়েছেন এবং পুর এলাকার সন্নিকটেই পহরমুড়া চার জন, সোনাতলা চার জন, চেবরী আট জন সহ মোট বত্রিশ জন সেবক কাজ করছেন। খোয়াইবাসীকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছেন বত্রিশ জন বিদ্যুৎ দপ্তরের সেবক। অথচ জনগনের মতে, বিদ্যুৎ দপ্তরে ফোন করলে কল রিসিভ করার জন্য কাউকে পাওয়া যায়না। যদিও কল রিসিভ করার জন্য আলাদা দুজন সেবক রয়েছেন দপ্তরে। তাহলে মোট সেবকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো চৌত্রিশ জন। আবার এই চৌত্রিশ জনের মধ্যে নেতৃত্বের লড়াই আছে। তিন ভাগে বিভক্ত। যার ফলে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। পরিষেবা লাটে। 
সেই সাথে রয়েছে খোয়াই বিদ্যৎ দপ্তরে ঠিকেদার দ্বারা নিয়ন্ত্রন প্রথা। কারন বর্তমান সময়ে আশি ভাগ কাজ করেন বিদ্যুৎ দপ্তরের ঠিকেদাররা। কুড়ি ভাগ কাজ করেন বিদ্যুৎ দপ্তরের সেবকরা। আজ থেকে পঁচিশ-ত্রিশ বছর পূর্বে দপ্তরের আশি ভাগ কাজই করতেন বিদ্যুৎ দপ্তরের সেবকরা। ঠিকেদাররা কুড়ি ভাগ কাজ করতেন। বর্তমানে চিত্রটা পুরো উল্টো হয়ে গেছে। তারপরও কেন নাজেহাল খোয়াই জেলার মানুষ, প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই। আর এ প্রশ্নের উত্তরও রয়েছে জনগনের কাছে। বলছেন, এর কারন একটাই। তিন ভাগে বিভক্ত কর্মচারীরা আগে সাইকেল এবং ঠেলা গাড়ী চালিয়ে সমগ্র খোয়াই, রামচন্দ্রঘাট, আশারামবাড়ী এলাকায় কাজ করতে ছুটতেন। বর্তমানে সব আলাদা এবং গাড়ীর ব্যবস্থাও হয়েছে। তারপরও পরিষেবা নেই। 
ইদানিংকালে খোয়াই শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য এল-টি, এইচ-টি লাইন এবং ক্যাবল সংযোগ যেভাবে স্থাপন করা হয়েছে ভবিষ্যতে আরো বেশী নাজেহাল হতে হবে খোয়াইবাসীকে। সব মিলিয়ে অ্যালজেব্রা লাগানো হয়েছে অর্থ্যাৎ পরিকল্পনাবিহীন কাজ করা হয়েছে। আগামী দিনে কোথায় কোথায় লাইনে ফলটি হয়েছে খোঁজে বের করা দায় হবে। কারন খোয়াইয়ের ঠেকেদার বাবুদের নিয়ন্ত্রনে চলছে বিদ্যুৎ দপ্তর। 
খোয়াই বিদ্যুৎ দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, জেনারেল ম্যানেজার, সিনিয়র ম্যানেজার, চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সব্বাই একযোগে আগরতলা প্রজ্ঞাভবনে জ্ঞান নিতে চলে গেছেন। একমাত্র ম্যানেজার আছেন দপ্তরে। উনারও শরীর ভাল নয়। বিদ্যুৎ দপ্তরে গিয়ে দেখা গেল, দপ্তরের ঠিকেদার এর লোকজনই শেডিং নেওয়া সহ গোটা বিদ্যুৎ দপ্তরই সামলাচ্ছেন। অথচ আজ চার-পাঁচ দিন যাবত খোয়াইয়ের সিঙ্গিছড়া, পহরমুড়া, জাম্বুরা, গনকী কলোনী, তবলাবাড়ী, সোনাতলা সহ খোয়াইয়ের প্রাণকেন্দ্র সুভাষপার্ক এবং তার আশপাশ এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনে ত্রুটি রয়েছে। নানান সমস্যা রয়েছে লাইনে। ব্যহত হচ্ছে হাসপাতাল সহ জরুরী সমস্ত পরিষেবা। জনগনের নাভি:শ্বাস। কিন্তু জনগনের জন্য প্রদত্ত অন্যান্য পরিষেবার মতোই বিদ্যুৎ পরিষেবাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দেখার কেউ নেই। এভাবেই দিনের পর দিন জনগন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবাদের ভাষাও যেন হারিয়ে গেছে। শুধু বিদ্যুৎ দপ্তর নয়, প্রায় অধিকাংশ দপ্তরই পরিষেবার নামে জনগনকে হয়রান করতেই ব্যস্ত। কিন্তু সেই সব আমলারা হয়তো ভূলে গেছেন জনগনই কিন্তু শেষ কথা বলবেন।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*