গোপাল সিং, খোয়াই, ১০ মে ।। আধুনিক হচ্ছি আমরা। এযুগের মানুষ চাঁদে বাড়ি-ঘর নির্মানের স্বপ্ন দেখছেন। নিত্যদিন নতুন নতুন গ্রহের সন্ধান মিলছে। মাঝে মাঝেই আমরা স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিই এই বোধহয় মানুষের বাসযোগ্য আরও একটা পৃথিবীর ক্লোন মিলতে চলছে। কিন্তু না, এমনটা আর হয়ে উঠছে না। ঠিক তেমনিভাবে দেশ জুরে বিএসএনএল পরিষেবার মান উন্নয়ন নিয়ে যখনই দেশবাসী বুকে আশা বাধেন তখনই হোঁচট খেতে হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্য বাস্তব উদাহরন বহন করে চলছে। বিএসএনএল টেলি কোম্পানিটি রাজ্যের মানুষের সাথে চিট ফান্ডের থেকেও বড় প্রতারনা করছে। যদি এখন পর্যন্ত সেই হিসেবটা করা যায় তাহলে প্রতিশ্রুতির তুলনায় প্রতারনার পরিমানটা আকাশ ছুঁবে নিশ্চই।
বিএসএনএল-এর যত ছোট থেকে বড় ব্রডব্যান্ড প্ল্যান রয়েছে তাতে বিএসএনএল-এর দেওয়া হিসেবটাই যদি একবার মনযোগ দিয়ে চিন্তা করা যায় তবেই বেরিয়ে আসবে বিএসএনএল কতটুকু প্রতারনা করছে রাজ্যের ভোক্তাদের সাথে। সবচাইতে নীচের প্ল্যানটাই যদি ধরা যায় বিবি আনলিমিটেড প্ল্যান ৫০০। বিএসএনএল বলছে সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধির কারনে এই প্ল্যানের রেইটও বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬৫০ টাকা হয়েছে। মেনে নেওয়া যাক। এবার বিএসএনএল বলছে ৬৫০ টাকার আনলিমিটেড প্ল্যানে ৫১২ কেবি/এস স্পিড দেবে। কিন্তু তা দেওয়ার কথা থাকলেও মিলছেনা ৫০ কেবি/এস স্পিডও। মানে ১০ গুন টাকা নিয়ে ১ ভাগ স্পিড। প্রতিশ্রুতি খেলাপ তো করছেই, পাশাপাশি দিনের পর দিন ভোক্তাদের সাথে এত বড় প্রতারনা করছে বিএসএনএল। যখন প্রয়োজন তখনই মিলছেনা ব্রডব্যান্ড কানেকশন। অপ্রয়োজনীয় সময়ে বসে বসে ভোক্তারা ব্রডব্যান্ড ইউজ করছেন তাই দেখিয়ে দেন বিএসএনএল কর্তারা। দেখিয়ে দেন ডাটা ইউজ তো হচ্ছেই। দিনে এত জিবি, মাসে এত জিবি ডাটা ইউজ হচ্ছে। কিন্তু কখন হচ্ছে? প্রয়োজনে নাকি অপ্রয়োজনে সেটা কিন্তু বিএসএনএল কর্তারা দেখতে রাজি নন। যারা ব্যবসার জন্য ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়েছেন তারা ভোরবেলা কিংবা রাত ১১টার পর কি ব্রডব্যান্ড ইউজ করলেই হবে? প্রশ্ন ব্রডব্যান্ড ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের।
ইদানিং যখন সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হবার পর বেশ ঘটা করে প্রচার করা হল যে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা দেশের মধ্যে তৃতীয় ইন্টারনেট গেইটওয়ে হল, রাজ্যবাসী ফের একবার আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। কিন্তু তারপর কি হল সবটা প্রকাশ্যেই চলছে। বিএসএনএল এনজিএন পরিষেবা নিয়ে কত বড় বড় কথা বলল। প্রচার করা হল এখন থেকে ল্যান্ড ফোনেই স্মার্ট ফোনের সব সুবিধা মিলবে। প্রচার করা হল বাংলাদেশ থেকে ১০ গিগাবাইট আসছে আর কোন চিন্তা নেই। এবার হাল শুধরাবে। কিন্তু কই তখন তো কেউ বললনা যে বিএসএনএল-এর সব যন্ত্রপাতি মান্ধাতা আমলের! যেই নাকি কানেকশন হল, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, সহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে এর সূচনা করলেন তারপর থেকেই শুরু হল নানাহ গুঞ্জন। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে শুরু করল বিএসএনএল-এর যত্তসব গোলমাল। ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে বিএসএনএল-এর আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করতে বললেন। পরিনাম ৩ মাস সময় চেয়েছে বিএসএনএল।
কিন্তু এর মধ্যেই সারা রাজ্যে বিএসএনএল-এর পরিষেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। খোয়াইতে আরও বেশী করুন অবস্থা। মৃত প্রায় স্বপ্নের ‘থ্রি-জি’ পরিষেবা। ভারতের বাইরের কথা ছেড়ে দেওয়া হলেও ভারতেই যেখানে এখন ফোর-জি চালু আছে সেখানে ত্রিপুরা রাজ্যে থ্রি-জি পরিষেবা দেওয়া তো দূরের কথা, টু-জি’র অবস্থাই তথৈবচ। খোয়াইতে এমনিতেই থ্রি-জি পরিষেবা সর্বত্র মিলেনা। খোয়াই পুর এলাকার বাইরে গেলে টু-জি পরিষেবাই মুখ থুবরে পড়ে। কল-ড্রপের কথা নতুন কিছু নয়। খোয়াইয়ের বাইরে কলই করা যায়না। এক মিনিট কথা বলতেই ফোন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এমনটাইতো হচ্ছে। কথঅ বলতে বলতেই লাইন কেটে যাচ্ছে। এছাড়া স্মার্ট ফোনে এখন সকলের হাতে হাতে। থ্রি-জি প্যাক এত টাকা খরচ করে ঢুকিয়ে পরিষেবাই যখন পাচ্ছেন না ভোক্তারা তখন কি বিএসএনএল সেই টাকা ফেরত দেবে? কই দেবেনা তো! তাহলে কি চিটফান্ডের মতো প্রতারনার সামিল নয় বিষয়টি?
তার মধ্যে খোয়াইতে যেটুকুই মিলছিল থ্রি-জি পরিষেবা তাও বেশ কিছুদিন ধরে মুখ থুবরে পড়েছে। এর কারন হিসাবে বলা হচ্ছে ঝড়ের কারনে মোবাইল টাওয়ার নাকি কিছুটা ঘুরে গেছে। যাইহোক তাও মেনে নিচ্ছেন সাধারন মানুষ। কিন্তু এভাবে কতদিন মেনে নেবেন খোয়াইবাসী? মেনে নেবেন কি রাজ্যবাসী? ইন্টারনেটের যুগে এমন বেহাল পরিষেবা দেওয়ার পরও কেন বিএসএনএল কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছেনা, প্রশ্ন উঠছে জনমনে। কেন কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএনএল-এর মান উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা, এই প্রশ্নটাও কিন্তু উঠছেই। খোয়াইবাসীর প্রশ্ন, দিনের পর দিন ভোক্তাদের সাথে প্রতারনা করে চললেও কেন এর বিরুদ্ধে কেউ গর্জে উঠছেন না? চিটফান্ডের বেলায় হলে কেন বিএসএনএল-এর প্রতারনার বেলায় নয় ?