গোপাল সিং, খোয়াই, ২৪ মে ।। খোয়াই শহরে এমন ঘটনা ঘটার ছিলনা। জনগন নিজের দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে আন্দোলনে সামিল হল। খোয়াইতে এই প্রথম আন্দোলনকারীরা সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ও পেল। যখন প্রত্যেকটি বিরোধী দল অকর্মন্য এবং যার যার পায়ের তলার মাটি টিকে রাখার চিন্তায় মগ্ন তখনই জনগন নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হল। এই ঘটনা খোয়াইতে বিরল ঘটনার সামিলই বটে। কিন্তু একটা অশনি সংকেত দিয়ে রাখল। অথচ সংবাদমাধ্যমগুলি বারংবার একের পর এক ঘটনা তুলে ধরা সহ বিভিন্ন দপ্তর যেমন, বিদ্যুৎ-জল-খাদ্য-পূর্ত্ত সহ অন্যান্য দপ্তরগুলোর কাজে ফাঁকি দেওয়া এবং সরকারী আদেশ অমান্য করার জ্বলজ্যান্ত সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে চলছে।
ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ দপ্তরের ঘটনা নিয়ে জনগনের মধ্যে সমালোচনার ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। সমালোচনায় উঠে এসেছে কোন এলাকায় ৪ দিন যাবত বিদ্যুৎ নেই, কোথাও দু’দিন বা একদিন যাবত নেই। দীর্ঘদিন যাবত খোয়াই শহর, শহরতলী থেকে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবা তলানিতে। দিনের পর দিন বিদ্যুৎ দপ্তরে জানিয়েও বেহাল অবস্থার উন্নতি হয়নি। বিষয়টি মন্ত্রি-আমলাদের গোচরে নিশ্চই ছিল। কিন্তু জনগনের পাশে এসে দাঁড়ালো না। বিরোধী দলগুলির কথা তো বলেই লাভ নেই। এমন অবস্থায় আকুতি-মিনতি করে যখন কাজের কাজ কিছুই হলনা তখনই জনগন মারমুখি হয়ে উঠলেন। তীব্র ক্ষোভ নিয়ে খোয়াই বিদ্যুৎ দপ্তর ঘেরাও করেন খোয়াই জব্বরটিলা গ্রামের জনা পঞ্চাশেক মানুষ। তখন কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তরের ঘেরাও করার সংবাদ পেয়ে তড়িঘরি ছুটে এলেন মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে পুলিশের বড় কর্তারা। সবার উপস্থিতিতেই জনগন দাবি করেন এখনই বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে হবে নতুবা বিদ্যুৎ দপ্তর ঘেরাও অব্যহত থাকবে। বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে সাত-পাঁচ বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও জনবিক্ষোভ জারি থাকে। এমন যখন পরিস্থিতি ঠিক তখনই দেখা গেল ঘটনার কুড়ি মিনিটের মধ্যে খোয়াইয়ের জব্বরটিলায় বিদ্যুৎ চালু হয়ে যায়। মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যে সব গোলযোগ সারাই করে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করে ফেলার পর বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রতি জনমনে আরও ব্যাপক প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। বিগত ৭ দিন যাবত হন্নে হয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরের চক্কর কাটলেও যেখানে কোন সুরাহা হলনা, সেখানে হঠাৎ কিভাবে কুড়ি মিনিটের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে পড়ল? তাও আবার দপ্তরে বসেই! তাহলে কি জনমনে প্রশ্ন জাগেনা, যে বদ উদ্দেশ্যেই এলাকায় এলাকায় বিদ্যুৎ গোলযোগ করে রাখা হয়েছে? তাহলে কি সব দপ্তরেই এখন থেকে জনগনকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে বিভিন্ন পরিষেবা আদায় করে নিতে হবে? এমস্ত প্রশ্নই এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই যদি হাল হয় তবে জনগনের সাথে বিদ্যুৎ দপ্তরের রসিকতার এই ঘটনা কিন্তু অন্যকথাই বলছে। জনগন কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তরের আভ্যন্তরিক বিষয় জানতে পেরেছেন। যা একসময় সংবাদপত্রে প্রকাশও পেয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তরের বর্তমান একজন লাইনম্যান আছেন উনার মগজেই সমগ্র বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইনগুলি বর্তমানে অ্যালজ্যাব্রা হয়ে রয়েছে। একমাত্র উনি এই অ্যালজ্যাব্রার অঙ্কটা জানেন। উনি বিভিন্নভাবে অবহেলিত। বিদ্যুৎ দপ্তরের সংগঠন থেকে উনার ডানা ছাঁটাই করা হয়েছে। উনার শিক্ষিকা স্ত্রীকে গ্রামাঞ্চলে বদলি করা সহ তিনি নানান সমস্যায় জড়িত। বিশেষ করে উনি বিদ্যুৎ দপ্তরের ঠেকেদারের সাথে যুক্ত। সব মিলিয়ে হয়তো তিনি ক্ষোভগ্রস্থ! উনি এর মধ্যে দু’দিন ছুটি নিয়ে আগরতলায় চলে যান। যাওয়ার আগে উনি টেকনিক্যাল যা করার করে যান এবং যার খেসারত দিতে হয় খোয়াইবাসীকে। সোমবারই তিনি ছুটি কাটিয়ে ফিরেন। উনি এসেই বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিস থেকে টুকিটাকি করে কুড়ি মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করেন। জনগনের অভিমত আভ্যন্তরিক রেষারেষিতে বিদ্যুৎ দপ্তর আজ বদনামের ভাগিদার। খোয়াই বিদ্যুৎ লাইনের অ্যালজ্যাব্রা যতদিন প্ল্যান করে ঠিক না করা হবে, যত দিন যাবে আরও চরম ভোগান্তি সইতে হবে খোয়াইবাসীকে। জনগনের অভিমত এই দূর্বিসহ অবস্থার সম্মুখিন হবার থেকে রেহাই পাওয়ার একটাই উপায়। এক্ষুনি নতুন চিন্তাধারায় নতুন টেকনলজির বিষয়ে ভাবতে হবে দপ্তরকে। যোগ্য ব্যক্তি বসাতে হবে দপ্তরের চেয়ারে। তবেই আগামী দিনে নির্বিঘ্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা পাবে খোয়াইয়ের আপামর মানুষ। নয়তো আগামী দিন বিদ্যুৎহীনতা চরম আকার ধারন করবে সমগ্র খোয়াই জুড়ে।