ডাক্তারের সই জালিয়াতি করে বিদেশে পাড়ি দিল স্টাফ-নার্স

pspগোপাল সিং, খোয়াই, ২৪ মে ।। সারা রাজ্যই জাল চক্রে ছেয়ে গেছে। আধার কার্ড, পেন কার্ড, পিআরটিসি থেকে শুরু করে পাসপোর্ট জাল চক্র রাজ্যে ঘাটি গেড়ে বসেছে। সেই সাথে রাজ্যের সাথে বহি:রাজ্যের একটা যোগসূত্র বজায় রেখে চলছে এই জাল চক্রটি। এবং দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ জাল চক্রের পেছনেই রাজ্যের অসাধু কতিপয় সরকারী কর্মচারী এর সাথে যুক্ত থাকলেও বারে বারেই পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার খুদ স্বাস্থ্য দপ্তরেই মিলল জাল চক্রের সন্ধান।
খোয়াইয়ের রতনপুর স্থিত দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন খোয়াই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অরিজিৎ সিনহা। অভিযোগ এই স্টাফ নার্স ডা. অরিজিৎ সিনহার সই নকল করার চেষ্টা করে এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন খোয়াই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের সিল ব্যবহার করে অবৈধভাবে পাসপোর্ট করার আবেদনপত্র করেন। সেই সাথে গুরুতর অভিযোগের তালিকায় রয়েছে ডা. অরিজিৎ সিনহার সই নকল করার চেষ্টা করে স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মা ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের নাম ব্যবহার করে এই জালিয়াতি কান্ড সংগঠিত করেছে। রেজিনা দেববর্মার নামে যে জাল আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে পৌছায় তার লেটার নং-F.2(1-3)-DHS/Estt/2015। ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য সর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন ঐ সেবিকা। সূত্রের খবর রতনপুর দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মা বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।
ঘটনার বিবরনে ডা. অরিজিৎ সিনহা অভিযোগ করে জানান, ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে রিজিওন্যাল পাসপোর্ট অফিস, কলকাতা থেকে একখানা চিঠি ইস্যু হয়ে ১১ই মে ২০১৬ তারিখে ডা. অরিজিৎ সিনহার নিকট এসে পৌছায়। যার লেটার লেটার নং-ICV/303255003/15 এবং ফাইল নং-CA2068981369315। এই চিঠি মুলত Confirmation Regarding issuance of Identity Certificate বা পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে ছিল। তবে কেন যেটা কিনা ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে ফেরতযোগ্য, এমন গুরুত্বপূর্ণ চিঠি কলকাতা থেকে খোয়াইতে পৌছতে ৬ মাস কেটে গেল সে বিষয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এদিকে ডা. বাবু অভিযোগ করে জানালেন কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে এই কনফারমেশন লেটারটি পাওয়ার পর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে উনার উপর। চিঠিতে লেখাছিল ২৭-১১-২০১৫-তে খোয়ায়ের রতনপুর দশরথ দেব মেমোরিয়াল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার Identity Certificate ইস্যু করেছেন ডা. অরিজিৎ সিহনা। রেজিনা দেববর্মার স্বামীর নাম প্রদীপ দেববর্মা। রেজিনার আইডি কার্ড নাম্বার 56900। কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে এবিষয়ে পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত যে আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে এবং সাথে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তা জাল। কারন ডা. অরিজিৎ সিনহা এমন কোন সার্টিফিকেট ইস্যু করেননি। এবং সেই সার্টিফিকেটে যে সই রয়েছে ডা. বাবুর নামে তাও ডা. অরিজিৎ সিনহার নয়। জাল সই করে রেজিনা দেববর্মাই একান্ড ঘটিয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য দপ্তরের প্যাড ব্যবহার করে সেই চিঠিতে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে তাও খোয়াইয়ের নয়, আগরতলার। তবে চিঠিতে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা আবার খোয়াই জেলা হাসপাতালেরই। কিন্তু ডাক্তার বাবুর সই জাল ছিল ঐ চিঠিতে। প্রশ্ন উঠছে ডাক্তার বাবু এখনও কোন কনফারমেশন চিঠি পাঠানটি কলকাতা পাসপোর্ট অফিসে। তবে কি করে রেজিনা দেববর্মার পাসপোর্ট ইস্যু হল? তবে কি মস্ত বড় একটা চক্র এক্ষেত্রে কাজ করছে রেজিনা দেববর্মাকে সাহায্য করার জন্য। কারন ১০ দিনের মধ্যে কনফারমেশন লেটার না পেলে কলকাতা পাসপোর্ট অফিসের তো পাসপোর্ট ইস্যু করার কথা নয়। তাহলে কি কলকাতা অফিসে কোন কনফারমেশন লেটার পৌছে ছিল? যদি কোন লেটার পাসপোর্ট অফিসে পৌছে থাকে তবে কি জালিয়াতি করেই কনফারমেশন লেটারটিও রেজিনা দেববর্মা ও তার জাল চক্রই ঘটিয়েছে সেই কান্ড? গুরুতর অভিযোগ ও বিরাট প্রশ্ন এক্ষেত্রে পাসপোর্ট জাল চক্রের দিকেই ইসারা করছে।
গত ১১ই মে ২০১৬ তারিখে কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে যে কনাফারমেশন চাওয়া হয়েছে সেই চিঠি পেয়েই চোখ চড়ক গাছ হয় ডাক্তার বাবুর। তিনি সঙ্গে সঙ্গে খোয়াই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের গোচরে আনেন বিষয়টি। পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরে এবং সিএমও’র দৃষ্টি আকর্ষন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে ডাক্তার অরিজিৎ সিনহা উনার স্বাক্ষরের একটি নমুনাও এর সাথে জুড়ে দিয়েছেন। যাতে আগামী দিনে তদন্ত করতে সুবিধা হয়। ডাক্তার অরিজিৎ সিনহার এই চিঠি ১২ই মে ২০১৬ তারিখে ইস্যু হয়।
একজন স্টাফ নার্সের এমন বিরল কীর্ত্তি প্রকাশ্যে আসতেই খোয়াইয়ের চিকিৎসকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এমন মস্ত বড় জালিয়াতি করে বহাল তবিয়তে বিদেশ যাত্রা করছেন সেই সেবিকা। এমনই গুঞ্জন রয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে স্পিড পোষ্টের বিলম্ব নিয়েও। কারন Identity Certificate বা পরিচয় সনদপত্র নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত চিঠির জবাব দিতে হয় ১০ দিনের মধ্যে। কিন্তু কলকাতা পাসপোর্ট অফিস থেকে ১লা ডিসেম্বর ২০১৫-তে ইস্যু হয়ে সেই চিঠি খোয়াই জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অরিজিৎ সিনহার হাতে এসে পৌছায় ১১ই মে ২০১৬-তে। মানে মাঝে ৫ মাস ১১ দিন কেটে যাবার পর কলকাতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ন চিঠি এসে পৌছানোয় স্টাফ নার্স রেজিনা দেববর্মার কোন কারসাজি রয়েছে কিনা তাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। যিনি এত বড় জালিয়াতি করতে পারেন, তিনি এটাও করতে পারেন বলেই মনে করো হচ্ছে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*