প্রায় ১০০ শতাংশ বিকলাঙ্গ হয়েও বঞ্চিত ৮০ বছরের বৃদ্ধ পরিমল

oldগোপাল সিং, খোয়াই, ১৩ জুলাই ।। সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। রেডিও থেকে টেলিভিশনের যাত্রাটাও সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে। ডট কমের ক্রমাগত উন্নয়শীল পরিবর্তনের যুগে টুজি থেকে থ্রিজি কিংবা ফোরজি ব্যবহার করে খুব দ্রুত আমরা একে অপরের কাছে আরও কাছে পৌছে যেতে পারছি। বর্তমানে সমাজ গড়ার কারীগরদের হাতে রাজ্য থেকে দেশ এমনকি পৃথিবীটাও। এরা প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার পেতে সর্বদাই ব্যস্ত। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ শাসনের পর যখন স্বাধীনতা এলে তার প্রায় ৭০ বছর অতিবাহিত হবার পথে। আর এই সময়কালে বিভিন্ন রূপে সমাজ গড়ার কারিগররা সমাজের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। কারন সমাজ থাকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের জন্য ব্যস্ত। সুন্দর নির্মল সমাজ গড়া এবং সমাজকে রক্ষা করার গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত ঐ সমাজ গড়ার কারীগরদের হাতেই। দেশের ১৪০ কোটি জনগন মাত্র হাতেগুনা কিছু সমাজগড়ার কারিগরদের উপর দায়ভার সপে দেন। কিন্তু ঘটনা চক্রে দেখা যায় যে ঐ মহান কারীগররা দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ অর্থাৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে গরীব-শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের কথা ভুলে যান। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নামে লোক ঠকানোর কৌশলে মত্ত সমাজ গড়ার কারিগররা। মানুষকে আরও অনুন্নত রাখার নিত্য নতুন কৌশল তারা অবলম্বন করেন। আজ শহরের আনাচে-কানাচে অনেক প্রবীন ব্যক্তি বা সমাজ থেকে ছিটকে যাওয়া কিছু মানুষকে বাজারে-হাঁটে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। কারোর পরিবার আছে আবার কারোর তাও নেই। তাই বলে কি স্বাধীনতার ৭০ বছরেও উনাদের ভাগ্যে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত জুটবেনা? যে জায়গায় দেশের শীর্ষ আদালত কতৃক প্রত্যেক রাজ্য সরকারকে নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে ঐসব জনগনের ভরনপোষনের ব্যবস্থা করা জন্য সেখানে দেশের কোন রাজ্য সরকারই সেই নির্দেশ পালন করছেনা। ত্রিপুরা রাজ্যেও তার অন্যথা হচ্ছেনা। বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি খোয়াইতেও ভবঘুরেদের সংখ্যা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্ধনগ্ন অবস্থায় শহরের উপর দিয়ে অসংলগ্ন চলাফেরা করছে। দৃষ্টিকটু হয়ে পড়ে মহিলা ভবঘুরেদের এভাবে চলাফেরার ফলে। অথচ সমাজ পরিবর্তনের জন্য রয়েছে একটি সরকার, রয়েছে সমাজ, সামাজিক সংস্থা বা ক্লাব, এনজিও গুলিও। কিন্তু দায়ভার নেওয়ার প্রশ্ন যখন আসে তখন হাত-পা গুটিয়ে নেয় সমাজ এবং সামাজিক সংস্থাগুলি।  অথচ খোয়াই শহরেই ৮০ বছর বয়সী এক প্রবীন নাগরিক প্রায় ১০০ শতাংশ বিকলাঙ্গ হয়েও সমাজ পরিবর্তনের কারিগরদের দৃষ্টিগোচর হতে পারলেন না এতগুলি বছরেও। খোয়াই সোনাতলা গ্রামের ২নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা পরিমল বণিকের কাহিনীটা খুব বেশী আলাদা নয়। উনার হাতে একখানা দরখাস্ত রয়েছে যাতে উনার জীবন বৃত্তান্ত সবটাই তুলে রেখেছেন তিনি। এ বয়সেও উনার হাতের লেখা অবাক করে দেবার মতো। অথচ দু-মুঠো খাবার এবং একটু আশ্রয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। কিন্তু কোন প্রকার সাহায্য জুটেনি এযাবত। উনার নিজের হাতে লেখা দরখাস্ত নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজ্য সরকারের কাছেও দরখাস্ত নিয়ে হাজিরা দিয়েছেন কিন্তু এখনও সাহায্যের কোন হাত উনার নিকট পৌছায়নি। কোন বিবেকের ডাক উনি পাননি। আজকাল পরিমল বনিক সুভাষপার্ক এলাকা সহ রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন। হাত পেতে সাহায্য চাইছেন। সমাজের কেউই জানতেও চাননা বা সাহায্যও দিতে চাননা। অথচ একদিন খোয়াইয়ের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভদ্রলোককেই দেখা গেছে ফুটপাতে বসে বিভিন্ন পঞ্জিকা, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি নানান সামগ্রী ক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে। কখনো কারো কাছে হাত না পেতে নিজে ব্যবসা করেই দিনগুজারা করেছেন। কিন্তু ৮০ বছর বয়সে, অল্প দৃষ্টি শক্তি আর অস্পষ্ট বাকশক্তি নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একদিন আত্মসম্মান নিয়ে চলা এই লোকটা।  বলতেও লজ্জা হয়, ৮০ বছরের এক প্রবীন ব্যক্তির যদি এই দুরাবস্থা হয় যার নাকি মৌলিক অধিকার আছে, বেঁচে থাকার বা প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার সমস্ত অধিকার আছে তাকে কিনা আজ দু-মুঠো খাবার এবং একটু আশ্রয়ের জন্য অপর এক মানুষের সামনেই সাহায্যের কাতর আবেদন জানাতে হচ্ছে। ১০০ শতাংশ বিকলাঙ্গ পরিমল বনিক যে ১৪০ কোটির উপর জনসংখ্যার ভারতবর্ষে একমাত্র বঞ্চিত নন! এমন কত কাহিনী ফুটপাতে শুরু হয়ে ফুটপাতেই মিশে যায়। অথচ সমাজগড়ার কারিগরদের একটু সুদৃষ্টি বদলে দিতে পারতো এদের জীবনধারা। ভরা পেট আর একটু স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা জীবন আর কিই বা দাবি তাদের !!!! এই মানবিক আবেদনটুকু কি সত্যিই পৌছবে রাজ্য সরকারের কাছে? এদিন এমনই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন পরিমল বনিক। যিনি ১০০ শতাংশ বিকলাঙ্গ হয়ে এখনও বঞ্চিত।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*