১৪ মাসের শিশু সন্তানকে ফেলে অন্য যুবকের সাথে পালাল গৃহবধূ

khwগোপাল সিং, খোয়াই, ১৬ জুলাই ।। খোয়াই জেলায় দিন দিন বাড়ছে নারী সংক্রান্ত অপরাধ। এর জন্য বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন এবং কিছুটা দায়ী রাজনৈতিক দলগুলি, এমনটাই মনে করছেন জনসাধারন। গত ৫ই মার্চ ২০১৬ ইংরেজী তারিখে খোয়াই থানাধীন সিঙ্গিছড়া এলাকায় নিজের স্বামী ও ১৪ মাসের শিশুকে ফেলে এক গৃহবধূ পরকীয়া প্রেমে পড়ে ঐ পাড়ারই এক যুবকের সাথে পালিয়ে যায়। খোয়াই সিঙ্গিছড়ার ঐতিহ্যবাহী শিবচতুর্দশী মেলা ছিল সেদিন। ১৪ মাসের শিশু কন্যাকে ফেলে স্ত্রীর পালিয়ে যাবার ঘটনা ঘটনা জানাজানি হতেই স্বামী সুকান্ত দেবনাথ ও তার পরিবারের তরফে খোয়াই থানায় একটি নিখোঁজ ডাইরী করা হয়। কিন্তু গরীব শ্রমিক রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করা সিমা শব্দকর নামে ঐ গৃহবধূটি অপর এক দিনমজুরকে নিয়ে পালিয়েছে বলে গৃহবধূটিকে উদ্ধার করার জন্য থানা বাবুরা তেমন কোন চেষ্টা করেননি। যদিও জনগনের মতে, গরীব পরিবার থেকে প্রণামী পাওয়া যাবেনা বলেই থানা বাবুরা উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছেন। অথচ ৪ মাস যাবত মাত্র ১৪ মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে অসহায় পিতা মহা বিপাকে পড়ে আছেন। আইনি জটিলতার জন্য তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় বিয়ে পর্যন্ত করতে পারছেন না। অথচ ১৪ মাসের শিশু কন্যাকে ফেলে রেখে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ঐ গৃহবধূটি কিন্তু বহাল তবিয়তেই রয়েছে। সিঙ্গিছড়া এলাকার বিভু শব্দকর নামে বছর একুশের এক যুবকের সাথে নতুন সংসার পেতে বসে আছে। অপরদিকে ততটাই করুন দশা অসহায় পিতা তথা পলাতক গৃহবধূটির স্বামী সুকান্ত দেবনাথের। যদিও জনগনের মতে, স্থানীয় ক্লাব বা পঞ্চায়েত যদি উত্তর সিঙ্গিছড়া নিবাসী বিভু শব্দকরের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করত তবে পলাতক যুগলবন্দীর খোঁজ অবশ্যই পাওয়া যেত। কিন্তু দেখা যায় গরীব-শ্রমিক পরিবার হওয়াতে পঞ্চায়েত বা ক্লাব এবিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপই গ্রহন করেনি। পুলিশ প্রশাসনও হাতগুটিয়ে বসে না থেকে সঠিকভাবে তদন্ত করলে কবেই এই যুগলবন্দীর হদিশ মিলত। কিন্তু এতদিন খোয়াই থানার পুলিশ এই ঘটনায় তেমন কোন উদ্যোগই নেয়নি। যদিও সব পুলিশ আধিকারিক একরকম নন। আর তাই প্রমান করে দেখালেন খোয়াই থানার নতুন ওসি শান্তিভূষন ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি নতুন দায়ভার নিয়ে ভাল ভাল কিছু উদ্যোগ নিয়ে চলছেন। আপাতত খোয়াইবাসী নতুন ওসি’র ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।   সিঙ্গিছড়ার ঘটনায় ওসি শান্তিভূষন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই এসেছে সাফল্য। অসহায়া পিতা ও প্রতরনার স্বীকার স্বামী সুকান্ত দেবনাথের দু:খ-দূর্দশা দেখেই ওসি সাহেব ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ৫ই মার্চ উত্তর সিঙ্গিছড়া থেকে পলাতক যুগলবন্দীকে ১৬ই জুলাই উদ্ধার করে খোয়াই থানায় নিয়ে আসা হয়। যার কেইস নং ৫২/২০১৬। গৃহবধূর মেডিক্যাল করানো হবে। বোঝাপরার মাধ্যমে সিমা শব্দকরকে তার স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রাথমিক চেষ্টা করা হবে। কারন সিমা শব্দকর-এর বর্তমান বয়স ২৭ বছর এবং যার সাথে সে পালিয়ে গিয়েছিল সেই বিভু শব্দকর-এর বয়স ২১ বছর। দুজনের মধ্যে বয়সের তফাত রয়েছে। তার মধ্যে গৃহবধূটি ১৪ মাসের এক শিশুকন্যার মা। কিন্তু জানা যায়, সিমা শব্দকর তার সিদ্ধান্তে অনঢ়। সে আগের সংসারে কোনভাবেই ফিরে যেতে রাজি নয়। তারপরও দুটি সংসারকে রক্ষা করতে খোয়াই থানা বরাবর চেষ্টা চালাচ্ছে। সিমা শব্দকর-এর একগুয়েমিতে একটি অবোঝ শিশু তার মায়ের স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক মায়ের মমত্ববোধ এখন প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখিন।  ইদানিংকালে খোয়াইতে নারীঘটিত অপরাধ বেড়েই চলছে। চলতি সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী খোয়াইতে এসে পুলিশ প্রশাসনের সাথে প্রশাসনিক বৈঠকে খোয়াই থানায় নারীঘটিত মামলার বাড়-বাড়ন্ত দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। থানার নথি-পত্রও তাই বলছে। অপরাধ দমনে পুলিশি কোন ভূমিকা নেই বলেই এতদিন নারীঘটিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে খোয়াইতে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নেশা-জুয়ার রমরমা। কিছু যুবক-যুবতী, বড় বড় ব্যবসায়ীর একটা বড় অংশ এবং উনাদের ছেলে-মেয়েরা, কিছু ভদ্রবেশী পরিবারের গৃহবধূরা বর্তমানে খোয়াইয়ের সুস্থ-সংষ্কৃতির বাতাবরনটাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আর সেই পথই অনুসরন করছে গরীব-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের পরিবারগুলো। খোয়াই থানার বর্তমান ওসি’র নেতৃত্বে যেমন অপরাধ দমনের একটা পরিবেশ নতুন করে খোয়াইতে তৈরী হচ্ছে ঠিক তেমনি প্রশাসন, সমাজসেবী সংস্থা, ক্লাবগুলো যদি এখনই এগিয়ে এসে সমাজকে রক্ষা করার লড়াই-আন্দোলনে সামিল হতো তবে পুনরায় স্বচ্ছ হয়ে উঠতো খোয়াই জেলা, অন্তত এমনটাই মনে করছেন জনসাধারন।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*