গোপাল সিং, খোয়াই, ০১ আগষ্ট ।। চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবুও কিছুটা স্বস্তি খোয়াইবাসীর। দুদিন যাবত শহরের উপর ব্যস্ততম রাস্তার পাশে দিন-রাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাইক সহ অন্যান্য যান চালকদের মুখে হাসি ফুটল সোমবার সকালে। তবে সবার নয়। যাদের হাতে ছিল গাড়ী বা বাইকের বৈধ কাগজ-পত্র তাদের যানবাহনেরই পিপাসা মিটেছে এদিন। যাদের ছিল অবৈধ কাগজ-পত্র তাদের হাতে পৌছায় কেইসের চালান। তবে জনগনের মতে প্রশাসন যদি প্রথম থেকেই এই কড়া ব্যবস্থা গ্রহন করতো তবে খোয়াইবাসীর এতটা দূর্ভোগ বোধহয় হতনা। তবে প্রশাসনের দেরীতে ঘুম ভাঙার পেছনে কি রহস্য লুকিয়ে আছে তা নিয়েই জনমনে কৌতূহল বিরাজ করছে। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে কালোবাজারিদের বেশ কিছু অবৈধ জ্বালানী মজুত ভান্ডার। সারা রাজ্যেই এমন চিত্র ধরা পড়ে। খোয়াই রামচন্দ্রঘাটেও প্রশাসনিক তৎপরতায় বেশ কিছু বেআইনী মজুত জ্বালানী উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সবাটাই হয়েছে তীরে এসে তরী ডুবে যাবার সময়। তাছাড়া খোয়াই শহরকে শাপমুক্ত না করে, খোয়াইতে কালোবাজারী বন্ধে কোন উদ্যোগ না নিয়ে শহর থেকে ১৮ কিমি দূরে রামচন্দ্রঘাট এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এনিয়েও জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে পকেট কেটে গেছে বাইক সহ অন্যান্য যান চালকদের। তবে শেষ পর্যন্ত খোয়াই প্রশাসন জেগে উঠায় কিন্তু পেট্রোল সংকট কিছুটা হলেও হ্রাস করা যাবে বলে মনে করছেন জনসাধারন। এদিকে সোমবারও রাহুমুক্তি হলনা পেট্রোল সংকটে দূর্বার খোয়াইবাসীর। দীর্ঘদিন যাবত ভোর থেকে গভীর রাত অবধি রৌদ-বৃষ্টি সহ্য করে হাজারো যানবাহন লম্বা লাইন করে পেট্রোলের আশায় প্রহড় গুনলেও রবিবার রাত দশটা নাগাদ এসে পৌছে পেট্রোলের গাড়ী। কিন্তু অধিক রাত অবধি পেট্রোলের গাড়ীর দেখা না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরেন। অবশেষে সোমবার সকাল থেকে পেট্রোল দেওয়া শুরু হয় খোয়াইতে। খোয়াই অনবদ্য পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল নেওয়ার জন্য সোমবারও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। একদিকে যানবাহনের লম্বা লাইন ছাড়িয়ে যায় স্টেট ব্যাঙ্ক তো অন্যদিকে সুভাষপার্ক। তবে রাহুমুক্তির বদলে এদিন সর্ষের ভূত তাড়া করে বেড়াল অবৈধ কাগজপত্র বহন করা যান চালকদের। পেট্রোল সংকটের মুখে দীর্ঘদিন যাবত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ঐ সমস্ত যান চালকদের মুখে কিন্তু সোমবারও হাসি ফুটলনা। কারন তাদের কাছে ছিলনা বৈধ কাগজ-পত্র। এদিকে রবিবার রাতেই পেট্রোল এসে পৌছায় অনবদ্য পাম্পে। কিন্তু তাও যতসামান্য। পেট্রোল পাম্পের জন্য পেট্রোল বরাদ্দ হয় চার হাজার লিটার। যা খোয়াইয়ের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। তার মধ্যেই বাইক প্রতি ১০০ টাকা, অটো ২০০ টাকা এবং মারুতি গাড়ী সহ অন্যান্য যানবাহনের জন্য ৩০০ টাকার পেট্রোল দেওয়া শুরু হয় সোমবার সকাল থেকে। তবে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন ভোর রাত থেকেই শুরু হয়ে যায়। ভোর ৪টা নাগাদ প্রায় দুই শতাধিক যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই লাইন চীনের প্রাচীরের মতো খোয়াই শহরকে ঘিরে ফেলে। তবে রাহুমুক্ত হননি যান চালকরা। রবিবারই প্রশাসনিক সূত্রে খবর ছিল সোমবার পেট্রোল দেওয়া হবে কিন্তু যানবাহনের কাগজ পত্র ঠিক থাকলে তবেই দেয়া হবে পেট্রোল। কথা মতো কাজ করলো প্রশাসনও। সোমবার খোয়াইতে কেবল মাত্র তাদেরই যানবাহনের জন্য পেট্রোল দেওয়া হয় যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন। অন্যথায় মিলেনি একবিন্দু পেট্রোলও। বরং জুটে গেছে কেইসের চালান। যেখানে দীর্ঘদিন যাবত পেট্রোল সংকটে দূর্বার রাজ্য, সেখানে দিনের পর দিন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যান চালকদের গাড়ীর ট্যাঙ্ক না ভরে যদি প্রথম থেকেই প্রশাসন এবিষয়ে তৎপর হতো তবে জনগনের সাথে চলা এই রশিকতা কবেই শেষ হয়ে যেত। যদিও আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই জ্বালানী তেলের সংকট মিটে যাবে। সংকটমোচনের ভূমিকায় রেলকেও ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এর মাঝে যে যন্ত্রনা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেল আগামী দিনে তার কি বিহিত হবে তাই এখন দেখার। উল্লেখ্য, শনিবারই ইন্ডিয়ান ওয়েলের পক্ষে খোয়াইয়ে দুটি গাড়িতে ৪০ হাজার লিটার ডিজেল এবং এক গাড়ি পেট্রোল দেবে বলে সন্মত হয়। এক গাড়ি পেট্রোল খোয়াইয়ের দুটি পেট্রোল পাম্প সুভাষপার্ক এবং রামচন্দ্রঘাট পাম্পে মিলিয়ে দেয়া হয়। খোয়াই অনবদ্য পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল বরাদ্দ হয়েছে চার হাজার লিটার এবং রামচন্দ্রঘাট দেবনাথ ডিপোতে বরাদ্দ হয়েছে আট হাজার লিটার পেট্রোল। যা খোয়াইয়ের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।