গোপাল সিং, খোয়াই, ০২ আগষ্ট ।। পরিবেশ ও প্রতিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী নানা কারণে জীব-বৈচিত্র হুমকীর সম্মুখীন। তাই জীব-বৈচিত্র সম্পর্কিত সচেতনতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জীব-বৈচিত্র ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভিন্ন দিকে শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে ত্রিপুরা বায়োডাইভারসিটি বোর্ড এর উদ্যোগে এবং খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় একদিনের জীব বৈচিত্র বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হল মঙ্গলবার। খোয়াই টাউন হলে আয়োজিত সেমিনারের সূচনা করেন খোয়াই পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন শুক্লা সেনগুপ্তা। উপস্থিত ছিলেন প্রিন্সিপল সায়েন্টিষ্ট, ই-সি-এ-আর, লেম্বুছড়া ড. শংকর প্রসাদ দাস, খোয়াই পুর পরিষদের এডুকেশন স্টেন্ডিং কমিটির চেয়ারপার্সন কঙ্কন পুরকায়স্থ, পুর পরিষদের সদস্য বনবীর দেববর্মা, খোয়াই জেলা বিজ্ঞান ফোরামের কনভেনার সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য, শিক্ষক মানিক দাস সহ খোয়াই দ্বাদশ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীতেশ দেববর্মা ও অগনিত ছাত্রীরা। টাউন হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রদীপ প্রজ্জ্বোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবার পর উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। ‘পৃথিবীর সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে এক সঙ্কটময় সময়ে। এই নীলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ধরে রাখবো ভূতীর্থের জীব বৈচিত্র।’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সেমিনারে বিভিন্ন বক্তারা নিজ নিজ আলোচনা তুলে ধরেন। এরপর প্রিন্সিপল সায়েন্টিষ্ট, ই-সি-এ-আর, লেম্বুছড়া ড. শংকর প্রসাদ দাস পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রোজেক্ট করে সেমিনারের বিষয় বস্তু নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। মূল লক্ষ্য একটাই, বায়োডাইভারসিটি বা জীব বৈচিত্র সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পর, বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে এখনও টিকে থাকা বিশ্বের অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল৷ বিশ্বের প্রায় ২০ লক্ষ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে৷ সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, যে আগের তুলনায় অনেক দ্রুত হারে বিলুপ্তির শিকার হচ্ছে বিশ্বের উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল৷ যা মানবজাতির জন্য যে অত্যন্ত ভয়াবহ – তা বলাই বাহুল্য৷ Alternative Nobel পুরস্কার-প্রাপ্ত ভারতের বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ভান্দানা শিভা’র মতে, উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল কেন এভাবে বিলুপ্তির শিকার হচ্ছে – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে Genetics-এর মধ্যে৷ কারণ, দুটি ক্ষেত্রেই জিনগত কারণ দায়ী৷ এ-সমস্যার কার্যকারণ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলে আলাদা আলাদা ভাবে খুঁজলে হবে না৷ একটি দু-বছরের শিশু যেমন জীবনকে লেগোর মতো অংশে বিভক্ত করে দেখে, তেমন করলে হবে না৷ জীবনকে দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে৷ মানুষসৃষ্ট দূষণের ফলেই উপযোগী আবাসস্থল নষ্ট হয়ে পৃথিবীতে প্রতিঘন্টায় কমপক্ষে তিনটি-তিনটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে এ-মূহুর্তে মানুষের ভোগের পরিমাণ এমন এক অস্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে তা বিশ্বে প্রাণে টিকে থাকার মৌল কাঠামোটিই নষ্ট করে দিচ্ছে৷ এভাবে চলতে থাকলে এবং ভোগের প্রকৃতিতে পরিবর্তন আনতে না পারলে, বিশ্বের ৯০০ কোটি মানুষের খাবারের যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে৷ কারণ, জীব না থাকলে আর মানব-জীবন থাকবে কি করে ? তাই, উদ্ভিদ বৈচিত্রের বিলুপ্তি দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সরবরাহের প্রশ্নে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷