১ম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রবেশ মূল্য নিয়ে জনমনে ক্ষোভ

expoগোপাল সিং, খোয়াই, ০৫ আগষ্ট ।। খোয়াই শহর সেজে উঠেছে। খোয়াই পুর এলাকার অন্তর্গত সুভাষপার্ক বইমেলা প্রাঙ্গনে উৎপন্ন দ্রব্যাদির ১ম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গত ২৯শে জুলাই থেকে। চলবে ১২ আগষ্ট অবধি। খোয়াই জেলার মানুষের কাছে এটা বিরাট প্রাপ্তি হবার কথা। প্রথম কোন আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী খোয়াইতে হচ্ছে বলেই এত আনন্দ। সুভাষপার্কে বড় বড় দুটি গেইট লেগেছে। এর থেকে রাজ্য সরকার কত টাকা ট্যাক্স পাবে তা জানা না গেলেও প্রচারের কোনও খামতি নেই। মাইকযোগেও প্রচার করা হচ্ছে দেশ-বিদেশের নামিদামী ব্র্যান্ডের জিনিষপত্র এই প্রদর্শনীতে থাকবে এবং স্বল্প মূল্যে সেগুলি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছবে। কিন্তু জিনিষ কেনা তো দুরের কথা, আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনীতে প্রবেশ নিয়ে প্রথম থেকেই শুরু হয় গুঞ্জন। মাথা পিছু ১০ টাকা দিয়ে এই প্রদর্শনীতে প্রবেশ করার বিষয়টি এই সমস্যার মুল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। কারন এই প্রবেশ মূল্য একবার নয়, যতবার ক্রেতারা প্রদর্শনীতে প্রবেশ করবেন ঠিক ততবারই প্রবেশ মূল্য দিতে হবে একথা চাউর হতেই শুরু হয় গুঞ্জন। জনগন জানতে চান কেন এই অব্যবস্থা? আগরতলা বা ত্রিপুরা রাজ্যের বাইরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন শপিং মলে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে কিংবা কোন প্রকার ক্রয় না করলেও যেখানে কোন প্রবেশ মূল্য দিতে হয়না সেখানে খোয়াইতে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে কেন প্রবেশ মূল্য দিতে হবে? তাও একবার নয় বারবার ! তাহলে কি গরীব-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য এই প্রদর্শনী নয় ? সাধারন নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষদের কি এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার অধিকার নেই? যেখানে রাজধানী আগরতলার মতো স্থানে কোন রকমের প্রদর্শনীতে প্রবেশ মূল্য বা এন্ট্রি ফি দিতে হয়না সেখানে কেন খোয়াইয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়মকানুন? এমন একাধিক প্রশ্ন ধীরে ধীরে ক্ষোভের কারন হয়ে উঠছে। কেউ কেউ আবার অভিমানিও হয়ে উঠছেন। তাছাড়া উদ্যোক্তাদের ভূমিকা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রতিদিন তিন-চারটে মাইক যোগে যেখানে প্রদর্শনীর প্রচার করা হচ্ছে সেখানে একবারও উল্লেখ করা হচ্ছেনা প্রবেশ মূল্যের কথা। উপরন্তু প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতে হলে যেখানে দাঁড়িয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে হয় সেক্ষেত্রেও সুবন্দোব্যস্ত করা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জনসাধারন। কারন টিকিট কাউন্টারটি প্রদর্শনীর বাইরে দিয়ে হওয়ায় রৌদ-বৃষ্টিতে সহ্য করেই ক্রেতাদের টিকিট কেটে তবেই প্রদর্শনীর ভেতরে যেতে হচ্ছে। এমন আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী, তাও আবার এন্ট্রি ফি লাগছে সেখানে ক্রেতাদের জন্য এমন অব্যবস্থা ! কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না জনসাধারন। তবে প্রবেশের জন্য যে টিকিট কাটা হচ্ছে তারও কোন নিয়ম নীতি নেই। প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় টিকিটকে দু-টুকরো করে এক টুকরো গার্ড রেখে দিচ্ছে এবং অপর টুকরোটি একটি লটারির বাক্সে রাখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে টিকিটের এক টুকরো দিয়ে আগামী দিনে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হবে। তবে কখন, কবে তার কোন কিছুই বলা হচ্ছেনা। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে জিনিষপত্রের দাম নিয়ে দর কষাকষি জনমনে কৌতূহলের সৃষ্টি করছে। দেখা যাচ্ছে ৮০০ টাকার জিনিষ দর করতে করতে কেউ ৩০০ টাকায় আবার কেউ তার চেয়েও বেশী দামে একই জিনিষ ক্রয় করছেন। প্রদর্শনী থেকে বেরিয়ে এসে খবরাখবর হতেই জনমনে কৌতূহলের সৃষ্টি হচ্ছে। নামি-দামী ব্যান্ডের জিনিষপত্রে দর-দামে এমন তফাৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কোন ক্রেতা লাভবান হচ্ছেন আবার অনেকেই বেশী মূল্য দিয়ে একই জিনিষ ক্রয় করছেন। এই অসামঞ্জস্যতা জনসাধারনকে ভাবিয়ে তুলছে।    গত বুধবার অর্থাৎ ৩রা আগষ্ট এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনীর ৬ষ্ট দিনের কথাই তুলে ধরা যাক। সেদিন প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। শুরু হয় মেঘের গুরু গর্জন। দফায় দফায় চলে বজ্রপাত। বুধবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ঠিক এভাবেই প্রকৃতির রুষানলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে খোয়াই শহর ও শহরতলী। সন্ধ্যা রাত থেকে গভীর রাত অবধি খোয়াইয়ের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। এমনই পরিস্থিতিতেই সুভাষপার্কের বইমেলা প্রাঙ্গনে চলছিল আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী। কিছু কিছু মানুষজন বৃষ্টি ও বজ্রপাতের থেকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে প্রদর্শনীর ভেতর প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অত্যন্ত অমানবিকভাবে প্রদর্শনীর গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা সিকিউরিটি গার্ড ঐ লোকজনদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। বজ্রপাতের থেকে বাঁচতে যদি প্রদর্শনীর ভেতর যেতে হয় তবে এন্ট্রি ফি বাবদ ১০ টাকা মিটিয়ে দিয়ে তবেই নাকি ভেতরে প্রবেশ করা যাবে। সিকিউরিটি গার্ডের এমন প্রত্যুত্তর শুনতে পেয়ে সেদিকে আর পা মাড়াননি কেউই। কিন্তু মানবিকতাকে চুলোয় দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোয়াইবাসী। যদিও নিন্দুকেরা হয়তো ১০ টাকা নিয়ে এত ক্ষোভের কারন খুঁজে পাবেন না কিংবা সামান্য ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে গিয়ে আপত্তির বিষয়টা নিয়েও প্রশ্ন তুলবেন। সাধারন মানুষ নামি-দামী জিনিষ ক্রয় করতে আসবে, আর সামান্য ১০ টাকা এন্ট্রি-ফি দিতে অনীহা কেন থাকবে? জনগন বলছেন বিষয়টা ১০ টাকার নয়, বিষয়টা এন্ট্রি-ফি বা প্রবেশ মূল্য নিয়ে। কোথাও যখন এমন নিয়ম নেই তবে এখানে কেন? তাছাড়া একটি পরিবার থেকে যদি ৫ জন ক্রেতা প্রদর্শনীতে যান তবে তাদের ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। কোন প্রয়োজনে একবার প্রদর্শনী প্রাঙ্গন ছেড়ে বের হলে পুনরায় প্রবেশ করতে হলে আবার টিকি কেটে ৫০ টাকা চুকিয়ে দিতে হবে। এন্ট্রি পাস একদিনের জন্য নয়, প্রতিবারের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধেই যত ক্ষোভ খোয়াইবাসীর। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী নিয়ে এই সমস্ত প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে প্রদর্শনীর ভেতর গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই পাল্টা উত্তর চলে আসে। বলা হল, দামী দামী জিনিষ এই প্রদর্শনীতে রয়েছে। সাধারন গরীব-শ্রমিক মানুষরা অকারনে এখানে ভীড় জমাবেন এবং পরিবেশ অন্যরকম হবে। তাই গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল তবে কি গরীব-শ্রমিক-মেহনতি মানুষদের শরীর থেকে ঘামের দূর্গন্ধ বের হবে? নাকি আয়োজকরা শ্রেনী ভাগের চিন্তায় আছেন? কোন প্রশ্নেরই কিন্তু সদুত্তর মিলেনি। তবে উৎপন্ন দ্রব্যাদির ১ম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য খোয়াই শহরের জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তার উপর দু-দুটি গেইট বানানো হয়েছে। যা ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক। যদিও এর থেকে রাজ্য সরকারের কত ট্যাক্স আদায় হবে তা জানা নেই জনগনের। খোয়াই জেলার গরীব অংশের জনসাধারনকে কিন্তু লজ্জায় পড়তে হল মেলা প্রাঙ্গনে গিয়ে। যদি মাইকযোগে প্রচারের সময় স্পষ্টতই বলা হতো প্রদর্শনীতে প্রবেশ মূল্য লাগবে তবে হয়তো গরীব-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের পরিবারকে এভাবে প্রদর্শনী চত্বর থেকে ফিরে যেতে হতনা। হিন্দীতে একটি প্রবাদ আছে, ‘খায়া-পিয়া কুছ নেহি, গিলাস তোড়া বারানা’। খোয়াইতে উৎপন্ন দ্রব্যাদির ১ম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গিয়ে এই প্রবাদটাই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমানসের মধ্যে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*