গোপাল সিং, খোয়াই, ১২ আগষ্ট ।। ‘হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী’– স্বাধীনতার যুদ্ধে ক্ষদিরাম বসুর আত্মবলিদানের দৃশ্যের এই উপমাতেই শেষ হয়েছিল। বিংশ শতকের প্রথম চারটি দশক ছিল বাংলার ইতিহাসে অগ্নিযুগ। বাঙালি বীর তরুণ-তরুণীরা ব্রিটিশ বিরোধী অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীকে বিতাড়নের লক্ষ্যে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে পথে-ঘাটে, অফিসে-আদালতে বোমা-রিভলবার এমনকি ছুরি-শাবল নিয়ে আক্রমণ করেছে। হতাহত করেছে, ধরাও পড়েছে অনেকে। বিচারের নামে প্রহসন বসেছে, প্রাণদণ্ড, কারাদণ্ড, দ্বীপান্তরসহ অপরিসীম নির্যাতন, নিপীড়ন চলেছে। এমনকি আত্মীয়-পরিজনও রেহাই পাননি ব্রিটিশ প্রশাসনের নির্মম আচরণ থেকে। কিন্তু বিপ্লবীরা এতে দমে যাননি, ভীত হয়ে রণে ভঙ্গ দেননি। হাসিমুখে ফাঁসির দড়ির সামনে গলা বাড়িয়ে দিয়েছেন, আলিঙ্গন করেছেন বীরের ন্যায় মৃত্যুকে। শহিদ ক্ষুদিরাম বসু তেমনই একজন বীর, যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করেছেন। দেশের এই সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর ১০৯তম শহীদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করল বাংলা পেরিয়ে গোটা দেশ। সেই সাথে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করল খোয়াই দশরথ দেব মেমোরিয়্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও। কলেজের ছাএ সংসদের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার হলসভা অনুষ্ঠিত হয়। হলসভা শুরুর আগে ক্ষুদিরাম বসু’র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করলেন কলেজের সহকারী অধাপিকা ডঃ বর্ণালী ভৌমিক (ঘোষ), ছাএ সংসদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নমঃ দাস, শিক্ষক সুশেন দেব সহ উপস্থিত ছাএ-ছাত্রীরা। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর শহীদ দিবসে আয়োজিত হলসভায় তাঁর জীবনী এবং বিশেষ করে ১৯০৮ সালের ১১ই আগষ্ট এর দিনটি সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করলেন সহকারী অধ্যাপিকা ডঃ বর্ণালী ভৌমিক (ঘোষ)। এছাড়াও আলোচনা করলেন ছাএ সংসদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নমঃ দাস এবং শিক্ষক সুশেন দেব। হলসভায় সমস্ত বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ সমস্ত সেমিস্টারের ছাএ ছাত্রী উপস্থিত ছিল। ক্ষুদিরাম বসু দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এক নির্ভীক দেশপ্রেমিকের মৃত্যু হলেও, তাঁর বিপ্লবী আদর্শের মৃত্যু হয়নি। বিপ্লবের যে অগ্নিশিখা সবার বুকে জ্বালিয়ে গিয়েছেন আজ সেই শিখা ছাত্র-যুব সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ১১ আগস্ট ২০১৬ শহীদ ক্ষুদিরামের ১০৯তম আত্মহুতি দিবসে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানালো গোটা ছাত্র সমাজ। একদিকে যখন শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার পুস্পাঞ্জলী অর্পণ হয়েছে অন্যদিকে শোনা গেছে ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’র সেই চির অমলীন হৃদয়স্পর্শী গানের সুর।