রাস্তার পাশে সাপ্লাইয়ের জল মিনারেল ওয়াটারের ড্রামবন্দী করে দেদার বিক্রি খোয়াইয়ে

water water.jpg1গোপাল সিং, খোয়াই, ১৪ আগষ্ট ।। কতটা জীবাণুমুক্ত, কতটা খাঁটি বোতলবন্দি জল? নির্ভাবনায় খেয়ে চলেছি মিনারেল ওয়াটার। কিন্তু তা কতটা নিরাপদ আমরা কি ভাবি? এ নিয়ে কিন্তু চিন্তার কারণ আছে। গোটা ভারতবর্ষেই বোতলের জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে এর মধ্যে অনেকগুলোই ভেজাল। ২০১৪-১৫ সালে দেশ জুড়ে বোতলের জলের ৮০৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, পরীক্ষা করা হয়েছিল ৭৩৪টি। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ জলে ভেজাল ছিল অথবা যে ব্র্যান্ডের জল লেখা ছিল আদতে তা ছিলই না। বেশিরভাগ বোতলের জল সাধারণ কলের বা সাপ্লাইয়ের জল দিয়েই ভরা থাকে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। অথচ বোতলের জল কিনতে হিসাব মতো আমরা গ্যাস, পেট্রোল আর কোল্ড ড্রিঙ্কের থেকেও বেশি খরচ করি এবং বোতলে জল ভর্তি করার জন্য অন্তত ৫ গুণ বেশি জল নষ্ট করি। তাছাড়া জলের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া আর খারাপ মানের জন্য ২০১৫ সালে ১৪টি কোম্পানি তাদের জলের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তার মানে এই নয় যে সব বোতলের জলই খারাপ। কিন্তু বোতলে জল ভরার এই কায়দা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। কিছু অসাধু মানুষের লোভের ফলে গুরুদন্ড পেতে হচ্ছে আম জনতাকে। ছোট্ট শিশুটি থেকে মুমুর্ষ রোগীদের তেষ্টা মেটাতে এই অপরিশোধিত জলই প্যাকেজিং করা অবস্থায় অধিক দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বোতালের ব্র্যান্ডেই দেদার বিক্রি হচ্ছে অপরিশোধিত পানীয় জল। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিয়ে বা যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানেই মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু মিনারেল ওয়াটারের নামে খোয়াইবাসী কি মুখে তুলছেন তা ছবিতেই দৃশ্য। খুদ শহরের ব্যস্ততম রাস্তার পাশেই অপরিশ্রুত পানীয় জল মিনারেল ওয়াটার হিসাবে ড্রাম বন্দী হচ্ছে। জলের দামে বন্দী হচ্ছে প্রতারনা। খোয়াই এর ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ফাষ্ট-ফুডের দোকান, বিয়ে বাড়ী, বাড়ী-ঘর ও নিত্য প্রয়োজনের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়াদের হাতে হাতে মিনারেল ওয়াটারের বোতল একবার ব্যবহার করার পরও বারবার ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এই শহর কেন্দ্রীক বাবুয়ানা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে-গঞ্জেও। প্লাস্টিকের ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে মিনারেল ওয়াটার এর চাহিদা। কিন্তু কে বা কজন এই বিষয়গুলি যাচাই করেন? লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে সবচাইতে বেশী অসচেতনতা শিক্ষিত সমাজেই। বাকিরা শুধুমাত্র ফলোয়ার বা অনুগামী। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ভারতে বোতলবন্দি পানীয় জলের পাঁচশোরও বেশি নির্মাতা রয়েছে। এদের ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড-এর (বিস) লাইসেন্স রয়েছে। বোতলের জল নিয়ে বার বার পরীক্ষা হয়েছে। ২০১৩ সালে দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ১৭টি ব্র্যান্ডের জলের নমুনা পরীক্ষা করে অনেকগুলিতেই কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পেয়েছিল, যা বিস নির্ধারিত সীমার বাইরে। ২০১৫-তে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার ১৮টি ব্র্যান্ডের ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে ব্রোমেট পেয়েছিল যা সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ। খাদ্য, জল ইত্যাদির ন্যূনতম মান রক্ষা করার জন্য সরকার ‘খাদ্য সুরক্ষা এবং মান বিধি ২০১১’ অনুসারে অনেক কড়াকড়ি করেছে। রঙ, স্বাদ, নাইট্রেটের উপস্থিতি সংক্রান্ত ৫১টি শর্ত পূরণ করতে হয় কোম্পানিগুলিকে। আদৌ কি তা করা হয়, সেটাই প্রশ্ন। আমরা জানি জল তো পচনশীল নয়, বা নষ্টও হয় না। কিন্তু আমরা জানি কি মিনেরাল ওয়াটার অথবা প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটারের বোতলের গায়ে ‘এক্সপায়ারি ডেট’ বা ‘বেস্ট বিফোর ডেট’ লেখা থাকে কেন? কারণ যে প্লাস্টিকের বোতলের মধ্যে জল ভরা থাকে,  সেই প্লাস্টিক থেকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে জলের মধ্যে নানারকমের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। বোতলবন্দি জলে একটানা সূর্যের আলো পড়লে প্লাস্টিক থেকে জলের মধ্যে রাসায়নিক উপাদান জলের মধ্যে  মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিসফেনল-এ বা বিপিএ-র মতো এই রাসায়নিক উপাদানগুলি শরীরে গেলে ব্রেস্ট ক্যানসার, পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া, হৃদরোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক থেকে জলের মধ্যে গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া মিশে যাওয়া ছাড়া জলের স্বাদও বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে মিনেরাল ওয়াটারের বোতল কারোর সঙ্গে থাকলে সেটিকে রোদ থেকে এড়িয়ে কোনও ঠাণ্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। মিনারেল ওয়াটার অথবা ঠান্ডা পানীয়ের বোতল যদি পরবর্তীকালে জলের বোতল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে ১৫ থেকে ২০ দিনের বেশি তা জল রাখার জন্য ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা এবং বোতলগুলি ফেলে দেওয়ার সময়ে অবশ্যই বোতলটি নষ্ট করে দেবার কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু যেভাবে খোয়াই শহর ও শহরতলিতে মিনারেল ওয়াটারের চাহিদা বাড়ছে, সেই চাহিদা পুরনে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্য-নতুন কৌশল মানুষের শরীরের কতটুকু ক্ষতি সাধন করছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, খাদ্য দপ্তর এবং প্রত্যক্ষদর্শী আম জনতাকে এগিয়ে এসে এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। নতুবা এই সমস্ত অপরিশোধিত এবং ক্ষতিকারক পানীয় জল গ্রহন করার ফলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে খোয়াইয়ের সকল অংশের জনসাধারনকে। আজকাল ডাক্তার বাবুদের প্রাইভেট চেম্বার, হাসপাতাল, প্যাথলজিগুলিতে যেভাবে ভিড় বাড়ছে, কে জানে এর পেছনে এই বোতল বন্দী জল বা মিনারেল ওয়াটারও একটা কারন কিনা ! প্রশ্ন জনমনে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*