আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। সন্ত হলেন মাদার টেরিজা। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে বিশ্বজননীকে সন্ত ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটিতে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী গোটা বিশ্ব। নোবেলজয়ী শান্তির দূত মাদার এবার সন্ত। রবিবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে বিশ্বের অগণিত মানুষের ভিড়। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আমন্ত্রিত ছিলেন দেশবিদেশের অতিথিরা। মাদার টেরিজার সন্ত উপাধি প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারত থেকে ভ্যাটিকানে পা রেখেছেন ১০০ জন প্রতিনিধি। প্রথমে মাদারের জন্য বিশেষ প্রার্থনা। তারপর সন্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন পোপ ফ্রান্সিস। বর্ণনা করা হয় মাদারের জীবন। মঞ্চের পিছনে তখন লাল ব্যাকড্রপে ক্রুশবিদ্ধ সোনালি যিশু। মাদারের রেলিকস্ অর্থাৎ সন্তের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। এরপরই মাদারকে সন্ত ঘোষণা করেন পোপ। ধপধপে সাদা সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় তখন অগণিত ভক্তের মাথার ভিড়। এক দিকে ক্রুশবিদ্ধ যিশু। এক দিকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার সামনে লাগানো বিশ্বজননীর মস্ত ছবি। এরপর কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির পক্ষ থেকে পাঠ করা হয় শান্তির বাণী। সুদূর ভ্যাটিকানে বাংলায় বার্তা। সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার তখন যেন এক খণ্ড কলকাতা। ভ্যাটিকানে যখন মাহেন্দ্র ক্ষণ, তখন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ। সন্ত টেরিজার নিজের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান। দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত এদিন ভিড় জমান কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজে। ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে সন্ত উপাধি প্রদান অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর জন্য এজেসি বোস রোডে বসানো হয় জায়ান্ট স্ক্রিন। ফুল দিয়ে সাজানো হয় মাদার হাউসকে। মানুষের সেবাই ছিল সন্ত টেরিজার ধর্ম। গরিব-দুঃখীর সেবা তাঁর কাছে ছিল আত্মার তৃপ্তি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের মধ্যেই তিনি খঁজে পেতেন যিশুকে। সেই সেবার স্বার্থেই এই মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ গড়ে ছিলেন সন্ত টেরিজা। ১৯১০ সালে আলবানিয়ার যে স্কোপিও শহরে জন্ম অ্যাগনেস গোনশা বোজাশিউয়ের। এটাই ছিল সন্ত টেরিজার বাবা-মায়ের দেওয়া নাম। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অ্যাগনেসের ঝোঁক তৈরি হয় সন্ন্যাসীনিদের জীবনের প্রতি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই অ্যাগনেস জড়িয়ে পড়ে সমাজসেবার কাজে। ১৮ বছর বয়সে তার বন্ধুরা যখন ঠিক করে উঠতে পারেনি জীবনে কী করবে, তখন অ্যাগনেস জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে। বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত। সে বুঝতে পেরেছিল, মানুষের সেবা করতে হলে ঘর ছাড়তে হবে। ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বরে মা-দিদিকে ছেড়ে রোমান ক্যাথলিক নান হিসেবে অ্যাগনেস পাড়ি দেন আয়ারল্যান্ড। ডাবলিনে গিয়ে প্রথমে রপ্ত করেন ইংরেজি বলা। সেইসঙ্গে লরেটো মিশনারিতে প্রশিক্ষণ। এরপর ১৯২৯ সালের ৬ জানুয়ারি আয়ারল্যান্ড থেকে কলকাতার মাটিতে পা রাখে অ্যাগনেস। ম্যাসিডোনিয়ার অ্যাগনেসের কাছে কলকাতা তখন সম্পূর্ণ অচেনা। কিন্তু এই শহরকে চিনতে বেশি সময় লাগেনি অ্যাগনেসের। সেই অ্যাগনেসই আজকের সন্ত টেরিজা। সন্ত টেরিজা বলতেন, খ্যাতি-স্বীকৃতির থেকে তাঁর কাছে অনেক দামী মানুষের ভালবাসা। মানুষের ভালবাসাই তাঁকে করে তুলেছিল বিশ্বজননী। আজীবন ভালাবাসা বিলিয়েছেন। বিনা শর্তে। সন্ত টেরিজা চলে গিয়েছেন। রয়ে গিয়েছে, তাঁর ভালবাসা, স্মৃতি আর অলৌকিক গাথা। মৃত্যুর ১৯ বছর পর এল স্বীকৃতি।