গোপাল সিং, খোয়াই, ০৮ সেপ্টেম্বর ।। শ্রদ্ধায়-স্মরণে আধুনিক খোয়াইয়ের রূপকার প্রয়াত সমীর দেবসরকার। বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম) খোয়াই জেলা কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়াত জননেতা সমীর দেবসরকারের স্মৃতিচারণ করার লক্ষ্যে স্মরণ সমাবেশের আয়োজন করে। খোয়াই শ্রীনাথ বিদ্যানিকেতন মাঠে হয় স্মরণ সভা ও সমাবেশ। সময় নির্ধারন করা ছিল দুপুর দুটো। ঠিক সময়েই একে একে খোয়াইয়ের রাজপথ ভরে উঠে জননেতা প্রয়াত সমীর দেবসরকারের প্লেকার্ড হাতে নিয়ে অসংখ্য মানুষের শোক মিছিল। জনপ্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে শোকবিহ্বল খোয়াইবাসী শহরের প্রতিটি রাস্তা-ঘাট ভরে তোলে। ধীরে ধীরে খোয়াই শ্রীনাথ বিদ্যানিকেতন মাঠ রূপ নেয় জনসমুদ্রের। বৃহস্পতিবার বিশাল জনস্রোতে সামিল প্রতিটি মানুষের অশ্রুসজল চোখেই স্মরণ সমাবেশ পরিপূর্ণতা পায়। স্মরণ সমাবেশের শুরুতে বিধানসভার মুখ্য সচেতক, ত্রিপুরা বিধানসভার অন্যতম সদস্য, সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সদস্য তথা খোয়াই জেলা সম্পাদক প্রয়াত জননেতা সমীর দেবসরকারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তারপর একে একে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর, সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাস, সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্যগন যথাক্রমে খগেন্দ্র জমাতিয়া, রঞ্জিত দেববর্মা, পদ্মকুমার দেববর্মা, বিশ্বজিৎ দত্ত এবং সিপিআই(এম) তেলিয়ামুড়া মহকুমা সম্পাদক সুধীর সরকার সহ প্রয়াত সমীর দেবসরকারের ছোট ভাই সজল দেবসরকার প্রমুখ। এরপর প্রয়াত জননেতার আত্মার চির শান্তি কামনায় ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এই ১ মিনিটে হাজারো জনতার কোলাহল নিমিষেই স্তব্ধতায় পরিনত হয়। আকাশ-বাতাস এক মুহর্তের জন্য শোকগ্রস্থতায় সামিল হয়ে পড়ে। এরপর যখন স্তব্ধতা ভাঙে চোখের জলে সব বেরিয়ে পড়ে। যুব থেকে বৃদ্ধ, পুরুষ থেকে মহিলা সবারই চোখে-মুখে তখন চূড়ান্ত হতাশা। এই হতাশা আপনজন, অভিভাবক, আধুনিক খোয়াইয়ের রূপকারকে চিরতরে হারানোর জন্যই। কিন্তু স্মরণ সমাবেশের মঞ্চে উপবিষ্ট বক্তারা সেই হতাশাকে কাটিয়ে তোলে আগামীর পথ চলার জন্য একটা বারুদ ভরে দেয়। প্রয়াত জননেতার অসম্পূর্ণ কাজগুলিকে সম্পূর্ণ করা এবং আগামী দিনে উন্নততর খোয়াইয়ের ভিত আরও মজবুত করার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন স্মরণ সমাবেশে উপস্থিত প্রতিটি জনগন। প্রথমেই প্রয়াত সমীর দেবসরকারের জীবনী নিয়ে দৃপ্ত আলোচনা করতে গিয়ে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ প্রদর্শক হিসাবে উনার স্বার্থক জীবন সম্বন্ধে আলোকপাত করেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য ড. রঞ্জিত দেববর্মা। অপরদিকে রাজনৈতিক জীবন শুরুর জন্য দিশারি হিসাবে প্রয়াত সমীর দেবসরকরাকে ব্যাক্ষা করলেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির অপর সদস্য পদ্মকুমার দেববর্মা। এরপরই প্রয়াত সমীর দেবসরকারকে স্মরণে রেখে সিপিআই(এম) খোয়াই জেলা কমিটির তরফে একটি শ্রদ্ধাঞ্জলী স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এর আবরন উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তারপর একে একে প্রয়াত সমীর দেবসরকারের জীবনী এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন গৌতম দাস, সুধীর সরকার, বিজন ধর প্রমুখরা। সেই সাথে ব্যাক্তি জীবনে এবং পারিবারিক সূত্রে প্রয়াত সমীর দেবসরকারের কিছু স্মৃতি, কিছু ইতিকথা তুলে ধরেন উনার ভাই সজল দেবসরকার। কিভাবে পরিবারের সবচাইতে বড় ভাই পিতা এবং মায়ের বিয়োগের পরও পরিবারের চাইতে সমাজের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের জন্য আজীবন খেটে গেছেন তারই সংক্ষিপ্ত ব্যাক্ষা তুলে ধরেন তিনি। ১৯৭৮ থেকে ২০১৬, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই প্রয়াত সমীর দেবসরকার দিয়ে দিয়েছেন আর্তের সেবায়, মানুষের সেবায় এবং খোয়াই তথা রাজ্যের উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগবান করতে। আমৃত্যু তিনি সকাল থেকে রাত দুটো কাটিয়েছেন জনমানষের জন্য চিন্তা-ভাবনায়। তারপরও তিনি পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। এরপরই সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার উনার মূল্যবান আলোচনা রাখেন। বললেন, তখনেই একজন মানুষের পক্ষে যথার্থ কমিউনিষ্ট হওয়া সম্ভব, যখন তিনি প্রকৃত অর্থে তিনি মানব দরদী, মানব কল্যানকর। কোন মানুষ যাদের সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানের সামর্থ নেই। অন্যের উপর নির্ভরশীল। এরকম মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সমব্যাথীর মনোভাব নিয়ে, তাদের জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের ভাবনা-চিন্তা-চেতনা-আকুতি এটাই মানবিকতা। আমরা যে মানবিক মুল্যবোধের কথা বলি এই মুল্যবোধের ভূকই সমীর দেবসরকারকে মানবতার সান্নিধ্যে আসতে সাহায্য করেছে। তিনি ছিলেন বিত্তশালী পরিবারের লোক। তারপরও তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত সরল এবং সারল্য, ছিমছাম। পোষাক-আসাক নিয়ে বাড়বাড়ন্ত ছিলনা। মুখ্যমন্ত্রী বললেন তিনি ছাত্র রাজনীতির সময় কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন। বামফ্রন্ট সরকার গঠন হওয়ার আগে এবং পরে, এমনকি ভেঙে ফেলার পর, সারা রাজ্যে সন্ত্রাস চলার সময় সমীর দেবসরকারের বাড়ীই ছিল মানিক সরকারের ঠিকানা। তিনি অসময়ে চলে গেছেন। কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে আরও ক্ষুরধার করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। তার প্রয়াসে তিনি সফল হয়েছেন তার প্রমান শ্রীনাথ বিদ্যানিকেতন মাঠে জনসমুদ্রের রূপ নেওয়া মানুষের উপস্থিতি, বললেন মুখ্যমন্ত্রী। উনার মতে জনগনই এখন শিক্ষক এবং দলীয় কর্মীরা ছাত্র। জনগনই এখন উন্নয়নমুলক কাজ এবং কাজের ভুল-ত্রুটি তোলে ধরবেন আর দলীয় কর্মীরা তা বিচার বিশ্লেষন করে কাজগুলি সমাপ্ত করবেন।