গোপালসিং, খোয়াই, ২২ সেপ্টেম্বর ।। শহরের বুকে শরতের কাশফুল। মন্ডপে মন্ডপে শিল্পীর ব্যস্ততা। মহানগরীর আনাচে কানাচে পুজোর হোর্ডিং-ব্যানার-ফ্লেক্স। কেনাকাটায় মত্ত আমজনতা। সবের মিশেলে পুজো আসছে। আবার সে এসেছে ফিরে। আর মাস গোনা নয়। এবার দিন গোনার পালা। যুদ্ধজয়ের লক্ষ্যে ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র যে অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন, বাঙালির কাছে তা কালক্রমে হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃহত্তম মহোৎসব। শুধু উৎসব নয়, পুজো মানে শিল্পভাবনা, পুজো মানে একরাশ খুশি, পুজো মানে অনাবিল আনন্দ। এখন অপেক্ষা মায়ের আগমনীর। এর মধ্যেই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি খোয়াই জেলার প্রতিটি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজার প্রতিমা তৈরীতে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ত সময় কাটছে। মঙ্গলবার মন্ডপ ঘুরে দেখা যায় মাটির অবয়বের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অল্প দিনের মধ্যেই শুরু হবে অলংকরণ, সজ্জায়ন ও রং প্রলেপনের কাজ। দেবীর আগমনের লগ্ন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঢাক ঢোল ও সানাইয়ের সুর বেজে উঠার অপেক্ষায় পূজারীগণ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এই দূর্গাপূজা। মৃৎ শিল্লীদের ব্যস্ততার পাশাপাশি আয়োজকরাও মন্ডপ ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা ও নিজেদের কেনাকাটা নিয়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। আজ আমরা খোয়াইয়ের জনপ্রিয় পূজো মন্ডপের দিকে রওয়না হই। খোয়াইবাসীকে বিগত ৬ বছর ধরে নিত্য নতুন মন্ডপসজ্জা উপহার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়ান টিএসআর ক্যাম্পের জওয়ানরা। রামচন্দ্রঘাট স্থিত হেডকোয়ার্টারেই এই পূজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশালাকার পূজো ও মন্ডপ সজ্জায় বরাবরই নজর কাড়ছে তারা। শুধু খোয়াই নয় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকসমাগম হয় এখানে। এই পূজো আয়োজনে টিএসআর জওয়ানরাই শ্রম দেন। সকলের উৎসাহ-উদ্দীপনা এই পূজোর মূল ভিত্তি। নিজেদের মধ্যে চাঁদা সংগ্রহ করে বড় বাজেটের পূজো করে থাকেন জওয়ানরা। এই উৎসাহের মধ্য দিয়েই ২০১০ সাল থেকে পূজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সেবছর পার্লামেন্ট ভবনের আদলে তৈরী করা প্যান্ডেল দেখতে গোটা রাজ্য থেকেই মানুষ ভীড় জমান। তারপর থেকে প্রতিবছরই পূজো করে আসছেন টিএসআর জওয়ানরা। ২০১১ সালে তাজমহল, ২০১২ সালে লালকেল্লা, পরের বছর মাইসুর প্যালেস এবং ২০১৫ সালে ললিতা প্যালেস সবার নজর কাড়ে। এবছর ইন্দোনেশিয়ার প্যালেসের আদলে তৈরী হচ্ছে মন্ডপ। ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতি বছরই নজরকাড়া মন্ডপ দেখতে ভীড় উপচে পড়ে। প্রায় তিন-সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বাজেটেই হচ্ছে পূজো। মন্ডপে গিয়ে দেখা গেল চূড়ান্ত ব্যস্ততা। চেবরী এলাকার স্থানীয় মৃৎশিল্পী নির্মল পাল মূর্ত্তি গড়ার কাজে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এবছর ঢাকেশ্বরীর আদলে তৈরী হচ্ছে প্রতিমা। তবে মৃৎশিল্পে যে আগেকার মতন তেমন লাভ নেই, তা অকপটে স্বীকার করে নিলেন মৃৎশিল্পী নির্মল পাল। যে কারনে আগামী প্রজন্মও এই কাজে আর এগিয়ে আসতে চাইছেনা বলে জানালেন তিনি। অপরদিকে ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়ান টিএসআর এসিট্যান্ট কমান্ডেন্ট শম্ভু ঘটক জানালেন অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও ইন্দোনেশিয়ার একটি প্যালেসের আদলে তৈরী মন্ডপ সজ্জা দেখে জনসাধারন উপভোগ করবেন এবং পূজোর সার্বিক সফলতার জন্য জনসাধরনের সহযোগিতা এবারও কামনা করেন।