দ্রব্য-মূল্য বৃদ্ধির মধ্যেই পাহাড়ে বাজার জমজমাট

laxmi-jpg1গোপাল সিং, খোয়াই, ১৪ অক্টোবর ।। মা দূর্গাকে হিমালয়ে পাঠিয়ে মা লক্ষীকে নিয়ে নাজেহাল জনগন। দূর্গোৎসবের জেড়ে জনগনের পকেট অনেকটাই খালি। তারপরও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে লক্ষী পূজার আয়োজন করতে গৃহস্থের কপালে চিন্তার ভাঁজ। জিনিষপত্রের আকাশছূঁয়া দামে জনগন এখন দিশেহারা। বাজারের উপর কোন নিয়ন্ত্রন নেই খাদ্য দপ্তরের। ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা সব একজোট। যদিও খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে শুক্রবার দিনভর তেমন কোন ভীড় চোখে পড়েনি। ভীড় ছিল পাহাড়ের বাজারে। আশঙ্কায় ছিল বিক্রেতারা। কিন্তু বিকেল গড়াতেই ভীড় আছড়ে পড়ল সুভাষপার্ক বাজারে। কিন্তু বাজার ছিল অগ্নিগর্ভ। তবে লক্ষী পূজা বলে কথা। কেউ তো আর দমবার পাত্র নন।
সেই প্রাচীন কাল থেকে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি আর ধনসম্পদের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীর আরাধনা প্রচলিত। আশ্বিনের কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর ঐতিহ্য বাংলা ও বাঙালীর নিজস্ব সম্পদ। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি সমাজের গভীর প্রভাব। অবশ্য তার প্রমাণও মেলে পুজোর উপকরণ আর আচার অনুষ্ঠানে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দেবী মর্তে আবির্ভূতা হন। তাই সারা রাত জেগে তাঁর উপাসনা করার এই রেওয়াজ। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে আলপনা। এখনও গ্রামাঞ্চলে ঘরের দরজা থেকে দেবীর আসন, ধানের গোলা পর্যন্ত আলপনায় ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেওয়া হয়। যদিও আমরা আজ আধুনিকতার ছুঁয়ায় নিজেদের বদলে ফেলতে চলছি। চালের গুড়ু দিয়ে আলপনার যুগের অবসান ঘটতে চলছে। এখন হরেক রকমের স্টিকার লাগিয়েই আলপনার কাজ সারা হয়। সময় ও শ্রম দুটোরই অনেকটা সাশ্রয় হয়। লক্ষী পূজার বাজারে এবছরও কৃত্রিম এসব স্টিকার আলপনার ছড়াছড়ি রয়েছে। সময় হাতে খুব কম। শুক্রবার সকালে খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে যে চিত্র ধরা পড়েছিল তার ঠিক উল্টো চিত্র ধরা পড়ল বিকেল গড়াতেই। শনিবার ১৫ই অক্টোবর ধন দেবী মা মানে মা লক্ষী সবার ঘরে আসার দিনক্ষন স্থির হয়ে আছে। গৃহস্থ থেকে শুরু করে মূর্তি পাড়াতে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে শুক্রবার সাত-সকালেই লক্ষী প্রতিমা সুভাষপার্ক বাজারে এসে পৌছেছে। মৃৎশিল্পকে আজ টিকিয়ে রাখতে পূর্বপুরুষদের শেখানো কাজে হাত লাগাতে অনীহা নবীনদের। এর মধ্যেই চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি পূজা-পার্বনেই প্রতিমা ঠিক জায়গা করে নিচ্ছে। তবে কত দিন? এই প্রশ্নের উঁকি-ঝুঁকির মধ্যেই শাস্ত্র মতে শনিবার ঘরে ঘরে পূজিত হবেন ধণ লক্ষী। পূজার আয়োজনে ত্রুটি রাখলে যে রক্ষে নেই। কিন্তু সেই মায়ের আরাধনার জন্য বাজার করতে গিয়ে তো মধ্যবিত্তদের চক্ষু চরকগাছ। বাজার মূল্যে যে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে। ওদিকে ভোগের বাজার করতে গিয়ে ডালের দাম আকাশ ছোঁয়া। মাসের মাঝামাঝি হলেও মাকে যে তুষ্ট করতেই হবে। হাজার হোক তিনি সমৃদ্ধির দেবী। তাই ক্ষনিকের জন্য দাম নিয়ে দামাদামি বন্ধ রেখেই সবাই শুরু করে দেন বাজার করা।
এক নজরে বাজার দর –
আপেল : ১২০-১৪০ টাকা, আঙুর : ৪০০-৫০০ টাকা, নেসপাতি : ১৫০ টাকা, খই : ১৮০ টাকা, পয়ত্রিশ কলা : ৬টা থাকুক বা ৮টা – দাম ৩০ টাকা, (পলা) সুপারী : ৪০-৫০ টাকা, নারকেল : ২০-৩০ টাকা। এছাড়া লক্ষী মূর্ত্তির দাম ধাপে ধাপে বেড়ে চলে। প্রথমে ছিল চড়া দাম। ছোট মূর্ত্তি ২০০-২৩০ টাকা। বড় মূর্ত্তি ৫০০-৭০০ টাকা। শুধু তাই নয় মিষ্টি ব্যবসায়ী থেকে মুদী দোকানী কেউই আজ রেহাই দিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাজার নিয়ে ফিরার পথে অটো কিংবা টমটম চালকরা যে যার মত করে দর কষতে থাকে। শেষ অবধি শূণ্য পকেটেই বাড়ী ফিরলেন গৃহস্থরা।
তবে গত বছরের ন্যায় এবছরও ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য নাজেহাল হতে হয় আমজনতাকে। টিএসআর জওয়নরা বাজারে মোতায়েন থাকলেও পুলিশকেই সব নিয়ন্ত্রন করতে হয়। তবে এদিন ক্রেতাদের থেকে বেশী দূর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারন বিক্রেতাদের। সাধারন খুদে ব্যবসায়ীরা কেউ একটু কলা, নারকেল, পেঁপে, আখ, খই বা জাম্বুরা নিয়ে খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে বিক্রির জন্য এসে পুর পরিষদের ট্যাক্সের স্বীকার হলেন। এই দু-একটা জিনিষ বিক্রির জন্য দিতে হয় ট্যাক্স। এতে গরীব ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। পুর পরিষদের এই ভূমিকায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেন খুদে ব্যবসায়ীরা। তবে খোয়াই পুর পরিষদ অন্যান্য বছর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করলেও এবছর খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে আলোর অভাব ছিল। যেমন ছিলনা কোহিনূর কমপ্লেক্সের সামনে কিংবা পেছনে তেমনি ছিলনা রাস্তা-ঘাটেও। তবে যাইহোক উৎসবের মাসে একের পর পূজা-পার্বনে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষ, পাহাড়-সমতল সহ রাজ্যের প্রতিটি ঘরে ঘরেই মা লক্ষীর আরাধনায় মেতে উঠবে গৃহস্থরা। তবে শুধু পরিবারের সুখ সমৃদ্ধিই নয়, পাশাপাশি রাজ্যের শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী সেতুবন্ধন আগামী দিনে আরও বেশি শক্তিশালী হোক এমনটাই প্রত্যাশা থাকবে ধন লক্ষীর কাছে।
FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*