শ্মশানে ও কেন মা কালীর পূজা হয় ?

1911994_892994580712405_3176629385869629175_n২৩ অক্টোবর ।। “শ্মশান” শব্দের অর্থ- শম স্থান । মৃত স্থান । চলতি কথায় যেখানে শবদাহ করা হয় সেই ক্ষেত্র শ্মশান ভূমি নামে পরিচিত । করালবদনী আদ্যাশক্তি মায়ের বিচরণ ক্ষেত্র এই শ্মশান । মা কালীকে ধ্বংসের দেবী বলা হয়। এই “ধ্বংস” বলতে সর্বনাশ করা নয়। এর অর্থ- “সংহরন” অর্থাৎ দেবী নিজেই এই সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন- আবার তিনিই গুটিয়ে নেন। ঠিক যেমন মাকড়শা নিজেই জাল বোনে আবার নিজেই গুটিয়ে নেয় । জীব কর্মফল ভোগান্তে মায়ের কোলে আশ্রয় পেয়ে পায় অসীম শান্তি ও আনন্দ । এই শ্মশান তাই মাকালীর ক্রীড়া ক্ষেত্র ।
শ্মশান কে বৈরাগ্যভূমি বলা হয়। শ্মশানকে তপঃ সাধনার ভূমি বলা হয় । ১০ মিনিট শ্মশানে বসে থাকলে জড় দেহের নশ্বরতার প্রতিচ্ছবি আমাদের চোখের সামনে আসে। জীব তাঁর খাঁচা নিয়ে বড়ই অহংকার করে , কিন্তু খাঁচা থেকে পাখী মুক্ত হলে খাঁচা শ্মশানে এক মুঠো ভস্মে পরিণত হয়। জ্ঞানী গণ এই তত্ত্ব উপলব্ধি করে দেহ সুখ বিসর্জন দিয়ে সাধন ভজনে মন দেয়। শ্মশান কেই তাই তপঃ সাধনার কেন্দ্র করে বহু যুগ থেকে অনেক সাধক সাধিকারা সাধন ভজনে নিমগ্ন হয় । মৃত্যু কাউকে ছাড়ে না। এক রূপবতী অপ্সরা তুল্যা কন্যার মৃত্যুর হলে শ্মশানে তার দেহ এক মুঠো ভস্ম হয়- অপরদিকে এক কুৎসিত চেহারা বিকৃত ব্যাক্তির মৃত্যু হলে তাঁর শ্মশানে দেহের পরিণতি এক মুঠো ছাই। মৃত্যুর কাছে কোন ভেদাভেদ নেই। ধনী গরীব নির্ধন কাঙ্গাল সকলের মৃত্যুর পর দেহ ভস্মেই পরিণত হয় । সাধু গণ এই তত্ত্ব জানেন। কালের করাল গ্রাস থেকে কারোর মুক্তি নেই। তাই কালের কাল মহাকালকে গ্রাসকারীনি আদ্যাশক্তি মহামায়া কালীর উপাসনাতেই নিমগ্ন হন ।
কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার, বাসনা গ্রস্ত এই শরীর । আত্মার এই সকল বোধ নেই। দেহান্তে এই রিপুগণের ক্রীড়া ক্ষেত্র শরীর টি জলন্ত চিতাতে ভস্ম হয়। রিপু গনের নাশ হলেই সাধকের মনে বৈরাগ্য জাগ্রত হয়। তাই এই রিপুর খেলার মাঠ শরীর টি জলন্ত চিতায় দগ্ধ হয় বলে মা কালী শ্মশানে বিরাজ করেন। মা তারা দেবী জলন্ত চিতায় অধিষ্ঠান করেন । ভগবতী ছিন্নমস্তা পদতলে মদন রতি দলিতা করেন । এই হোলো শ্মশানের পরিচয় । শ্মশান মন্দিরের মতোই পবিত্র। মন্দিরে শাস্ত্র পাঠ করে জড় দেহের পরিণামের কথা বলা হয়। শ্মশানে গেলে সেটার জীবন্ত উদাহরণ সচক্ষে দেখা যায়। তাই শ্মশান মা কালীর এত প্রিয় স্থান ।
লিখেছেনঃ suman basak

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*