গোপাল সিং, খোয়াই, ৩১ অক্টোবর ।। খোয়াই জেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত মন্দির সুভাষপার্ক কালীবাড়ী দীপাবলী উৎসবকে সামনে রেখে বিশেষ প্রভাব ফেলে জনমনে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম এই মন্দিরে ভারতবর্ষের হরিদ্বার কিংবা কাশী থেকে ১০৮ মহারাজজীগন উপস্থিত থেকে যজ্ঞাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। দীপাবলীর দিন সাত-সকালে অবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলে খোয়াই নদী থেকে গঙ্গা আহ্বান করে জল এনে শিব ঠাকুরকে স্নান করান। এরপরই শুরু হয় মহাযজ্ঞ। এই মহাযজ্ঞ উপভোগ করতে ছুটে আসেন অনেকেই। সন্ধ্যায় হয় আরতি। এই প্রথা দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসছে। এদিকে জনগনের অভিমত, সুভাষপার্ক স্থিত কালী মন্দিরে মা জাগ্রত রয়েছেন। এর সাক্ষী মা নিজেই। এক সময়ে ছন-বাঁশের ঘর আজ বিশাল অট্টালিকায় রূপান্তরিত হয়েছে। সুভাষপার্ক কালীবাড়ীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচিন্দ্রলাল সিংহ মহাশয় বর্তমানে এই মন্দিরের বিশাল জায়গাটিতে পশু হাসপাতাল তৈরী করবেন বলে স্থির করেছিলেন। এর পাশে থাকবে একটি আবগরি দপ্তর। তৎকালীন সময়ে সুভাষপার্ক এলাকার কিছু যুবক স্থানীয় বিবেক সংঘ ক্লাবের নামে রাতারাতি ছন-বাঁশের একটি মন্দির স্থাপন করেন এই জায়গায়। তেলিয়ামুড়া থেকে মূর্ত্তি শিল্পী এনে মায়ের প্রতিমা তৈরী করানো হয়। শুরু হয় পূজা-পার্বন। এই বিবেক সংঘ ক্লাবের উদ্যোগেই সুভাষপার্ক বাজারে নেতাজীর বেদী তৈরী করে সেখানে প্রতি বছর ২৩শে জানুয়ারী নেতাজী জন্মজয়ন্তী পালন করা শুরু হয়। বর্তমানে সুভাষপার্ক কালীবাড়ী অপর একটি ক্লাবের তত্ত্বাবধানে চলে যাওয়ায় মুছে যায় বিবেক সংঘের নাম। তৎকালীন সময়ে সরকারের সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে বিবেক সংঘ ক্লাবই বিশাল জায়গা দখল করে। যদিও পরে ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচিন্দ্রলাল সিংহ জনস্বার্থে তা মেনে নেন। সেই পশু চিকিৎসালয় পরবর্তী সময় অফিসটিলায় তৈরী হয়। যদি নতুন প্রজন্মের কাছে অনেক পুরনো ইতিহাস আজও অজানাই রয়ে গেছে। পুরনো স্মৃতি ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিচ্ছে এক শ্রেনীর ইতিহাস বিকৃতকারীরা। আজও বিবেক সংঘ ক্লাবের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন সুভাষপার্ক এলাকাতেই। অথচ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে কিংবা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রনের জন্য খোঁজ খবর করা হয়না। অথচ কত কষ্টে তৈরী করা সুভাষপার্ক কালীবাড়ী ! গ্রামে-গ্রামে গিয়ে টাকার বিনিময়ে ধান-চাল জোগার করে মাথায় করে আনতেন ক্লাব কর্মকর্তারা। কারন গ্রামবাসী নগদ টাকা দিতে পারতেন না। নেতাজীর জন্মজয়ন্তী পালন করতে গিয়ে ১০-২০ পয়সা চাঁদা তুলতে হতো। এরপরও সারাদিন অনুষ্ঠান হতো। বর্তমানে নেতাজীর পূর্ণাবয়ব মূর্ত্তি সুভাষপার্ক প্রাণকেন্দ্রে বসলেও মূর্ত্তির উপর নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। অপরদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম মন্দিরের পূর্বতন মায়ের মূর্ত্তি কিন্তু আজ আর নেই। তা বিসর্জন হয়ে গেছে খোয়াই নদীর জলে। অনেক বিতর্কের মধ্যে নতুন মূর্ত্তি বসানো হয়েছে মন্দিরে। যদিও সবটাই কর্মকর্তাদের ব্যাপার। মায়ের পুরো আশীর্বাদ রয়েছে উনাদের উপর। বহু মানুষের মনষ্কামনা পূর্ণ হয়েছে মায়ের আশীর্বাদধন্য হয়েই। বহুবার চুরি হয়েছে মায়ের মন্দিরে। কিন্তু চোর নিজে এসেই সবকিছু আবার ফিরিয়েও দিয়ে গেছে। এমনও হয়েছে চোর চুরি করে মায়ের মন্দির থেকেই বের হতে পারেনি। এমন বহু ঘটনার সাক্ষী সুভাষপার্ক কালীবাড়ী। এবছর আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মায়ের পূজার্চনা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে মেলার প্রতিচ্ছবিও মন্দির সংলগ্ন রাস্তার ধারে দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই মেলা আরও বড় আকারের করা যায় কিনা সেবিষয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন খোয়াইবাসী। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছর খোয়াই থানা, চাম্পাহাওড় থানা, সুভাষপার্ক আউটপোষ্ট, বাইজালবাড়ী আউটপোষ্ট সহ দূর্গানগর স্থিত ৫০ বছর পুরনো কালীবাড়ীতেও জাকজমকভাবে শ্যামা পূজার আয়োজন করা হয়।