ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’য় বিপর্যস্ত তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ, মৃত ৪

chn chn-jpg1জাতীয় ডেস্ক ৷৷ ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’য় বিপর্যস্ত তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে চেন্নাইয়ে মারা গিয়েছেন ২ জন। এছাড়া, কাঞ্চিপুরম এবং নাগাপট্টিনামে একজন করে মারা গিয়েছেন। নিখোঁজ আরও ২ মৎস্যজীবী। স্তব্ধ স্বাভাবিক জনজীবন। পূর্বাভাস ছিলই। সেই মতো সোমবার দুপুরে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রে আছড়ে পড়ে ভরদা। এই ঝড়ের নাম দিয়েছে পাকিস্তান। নামের অর্থ লাল গোলাপ। আর এই গোলাপের ঘায়েই এখন তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ কার্যত তছনছ! প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ উপড়ে গিয়েছে। বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুত সংযোগ। বন্ধ স্কুল-ট্রেন-উড়ান। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে যানবাহন। ইতিমধ্যেই এই ঝড় ২ জনের প্রাণ কেড়েছে। চেন্নাইয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৌসম ভবনের অতিরিক্ত অধিকর্তা এম মহাপাত্র জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ ইতিমধ্যেই পার হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ গোটা ঘূর্ণিঝড়ের পশ্চিম অর্ধ উপকূল পার করে গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি ক্ষণিক শান্ত। তাঁর আশঙ্কা, রাতের দিকে পূর্ব অর্ধ যখন পার করবে, তখন ফের আরেক দফা ঝড় হবে। তবে তিনি যোগ করেন, ধীরে ধীরে অতি শক্তিশালী থেকে কিছুটা ধার খুইয়ে শক্তিশালীতে রূপান্তরিত হয়েছে। মহাপাত্র জানান, যত সময় গড়াবে, যত ভূমির দিকে এগোবে ‘ভরদা’, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমবে। আগামী ৩-৪ ঘণ্টায় ‘ভরদা’র গতি ৬০-৭০ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এদিকে, ঝড়ের তাণ্ডব শেষ হতেই তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। লোকাল ট্রেন পরিষেবা চেন্নাইয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বহু বিমান। অনেকগুলির পথ পরিবর্তন করা হয়েছে। চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে এদিন দীর্ঘক্ষণ বিমান চলাচল বন্ধ থাকে। ২৫টি বিমান চালানো হয় ঘুরপথে। চেন্নাই ও সুল্লুরপেটার মধ্যে প্রচুর ট্রেনও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে, স্থানীয় প্রশাসন আগাম সতর্কতা অবলম্বন করায় সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হলেও, প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। উত্তর চেন্নাই, মামাল্লাপূরম এবং তিরুভাল্লুর সহ উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে থেকে প্রায় ৮ হাজার মানুষকে আগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জন্য ৯৫টি ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা করে প্রশাসন। অন্ধ্রপ্রদেশেও তাণ্ডবের ছবিটা একইরকম ভয়ঙ্কর। ঘূর্ণিঝড়ের সামনে দাঁড়াতে না পেরে রাস্তায় উল্টে গিয়েছে এই তেলের ট্যাঙ্কার। ঝড়ের সঙ্গে সমান তালে চলছে তুমুল বৃষ্টি। বিভিন্ন জায়গায় ভেসে গিয়েছে রাস্তা। সেখানে উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ভরদার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। নেল্লোরে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সরানো হয়েছে বহু দুর্গতকে। উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনা, নৌবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল। অন্যদিকে, তিনদিন আগে থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। সমুদ্রের ধারে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ সেদিকে না যান। যদিও, এর মধ্যেই ২ মৎস্যজীবী নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। চেন্নাই, কাঞ্চিপূরম, তিরুভাল্লার, ভিল্লুপুরমে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। শেষ খবর অনুযায়ী, ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কমতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নেমে পড়ে প্রশাসন। উপড়ে যাওয়া গাছ সরিয়ে রাস্তা ফাঁকা করার কাজ চালু হয়েছে। শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগকে পুনরায় চালু করার কাজও। অনেক জায়গায় জল সরবরাহও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানে দ্রুত পানীয় জল সরবরাহর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*