দেশের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের উপজাতিরাই আজ বেশী উন্নত – TYF পঞ্চদশ কেন্দ্রীয় সম্মেলনে মূখ্যমন্ত্রী

khwগোপাল সিং, খোয়াই, ১১ জানুয়ারী ৷৷ সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে প্রতিহত কর, জারি রাখ উন্নয়নের লড়াই। এই আহ্বানেই খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয়ের মাঠে এক প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে ১১-১৩ই জানুয়ারী তিন দিনব্যাপী টিওয়াইএফ পঞ্চদশ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সূচনা হল বুধবার। এদিন দুপুর ১টায় খোয়াই নব নির্মিত টাউন হলের সামনে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদীতে মাল্যদান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুর আড়াইটায় শুরু হয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ। সমাবেশের প্রধান বক্তা সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক অমল ভৌমিক, টিওয়াইএফ সাধারন সম্পাদক অমলেন্দু দেববর্মা ও সভাপতি রাজেন্দ্র রিয়াং, জিএমপি নেতৃত্ব রাধাচরণ দেববর্মা, রঞ্জিত দেববর্মা, বিশ্বজিৎ দত্ত প্রমুখ। ডিওয়াইএফআই সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ এমবি রাজেশ উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিমান বিভ্রাটে তিনি আগরতলা এসে পৌছুতে পারেননি বলে জানান ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক অমল ভৌমিক।
এদিনকার সমাবেশে প্রচুর লোকসমাগম হয়। খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয়ের মাঠে তিল ধরার জায়গা ছিল না। উপজাতিদের চিরাচরিত ধাচে গড়ে তোলা সুসজ্জিত মঞ্চে একে একে ভাষন রাখেন জিএমপি, টিওয়াইএফ নেতৃত্বরা। এদিকে ভাষন রাখতে গিয়ে জিএমপি নেতৃত্ব রাধাচরণ দেববর্মা বলেন, আড়াই বছর হতে চলছে বিজেপি সরকারের। কিন্তু নির্বাচনী সব প্রতিশ্রুতিও পালন করেনি। বরং মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে মোদী সরকার।
অপরদিকে সমাবেশের প্রধান বক্তা সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার উনার ভাষনে মোদী সরকারের একের পর এক জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলেরই নীতির কোন পরিবর্তন নেই। আচ্ছে দিনের স্বপ্ন বাস্তবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিজেপি সরকার কালোধনের মালিকদের জন্য একের পর এক সুযোগ করে দিতে ব্যষ্ত। কারন এই পুঁজিপতিরাই গত নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী খরচ বহন করেছিল। তাছাড়া ক্যাশরল্যাস পদ্ধতিরও তীব্র সমালোচনা করেন মানিক সরকার।
মুখ্যমন্ত্রি বলেন, সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যেই উপজাতিরা আজ অনেকটা উন্নত। পার্শ্ববর্তী অরুণাচল, আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই উপজাতিরা কতটুকু উন্নত তার প্রমান পেতে রেল যোগে ভ্রমন করে আসুন রাজ্যগুলি। দেখবেন দিন আর রাতের মতো ফারাক। শুধু এতটুকু নয় বামফ্রন্ট সরকারের আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে। তিনি বলেন, এমন একটা পরিস্থিতিতে টিওয়াইএফআই কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন এই দেশ নানান সমস্যায় জর্জরিত। পরিস্থিতিটা ভাল নয়। খুব খারাপ। গত ৬০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল ইস্যুতে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। জাল নোট ধরবার জন্য, সরকারকে যারা রাজস্ব ফাঁকী দেয় তাদেরকে ধরবার জন্য এবং সন্ত্রাসবাদীদের দূর্বল করবার জন্য সর্বোপরি দেশ স্বাধীন হবার পর দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। একে মোকাবিলা করবার জন্য প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদী পাঁচশ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে গেলে ভোটের আগে তাদের সাথে জিতবার জন্য সমঝোতা না করে, রাজনীতিগতভাবে তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে, যেমনটা আমরা ত্রিপুরায় নিয়েছি এবং নিরাপত্তাবাহিনীকে স্বাধীনতা দিতে হবে, যেমনটা আমরা ত্রিপুরায় দিয়েছি। এটা বাদ দিয়ে নোট বাতিল করে সন্ত্রাসবাদীদের টাকা-পয়সার লেনদেন বন্ধ করে দেবে, ভূল ! এগুলো আসলে কালো টাকা যাদের আছে তাদের সাদা করার সুযোগ করে দেওয়া হল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কোনটাই পূরন করেনি। তাই মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। সেই মানুষদের দৃষ্টি ঘুরাবার জন্য নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদী। নতুন করে মাথা চারা দিয়ে উঠেছে ক্যাশলেস পদ্ধতি। একটি কার্ড দেখিয়ে জিনিষ কেনার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে বিজেপি সরকার। কিন্তু দু-একটি রাষ্ট্রর চেষ্টা ব্যাতীত পৃথিবীর কোথাও এমন ব্যবস্থা চালু নেই। তবে এই পদ্ধতি এদেশে চলু করতে গেলে দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌছুতে হবে, ব্যাঙ্ক বসাতে হবে, টেলিফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। এগুলির কিছুই এদেশে প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে তৈরী করা সম্ভব হয়নি। তাই নগদ টাকা ছাড়া আদান-প্রদান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি-শিল্প, বেতন-ভাতা, এগুলি চলবে এটা বললেই হল না। এতে কার অসুবিধা হচ্ছে ? টাটা, বিড়লা, ডালমিয়া, রিলায়েন্স, আম্বানি, আদানি তাদের কেউ গত ৬০ দিনে মারা গেছে ? এই যে শতাধিক মানুষ মারা গেলেন তাদের মধ্যে কেউ পুঁজিপতিদের পরিবারের লোক নয়, তারা কৃষক, ক্ষেতমজুর, দিনমজুর, জুমিয়া, ছোট ছোট দোকানদার, দিন আনে দিন খায়। আগামী দিনে কৃষকদের স্বার্থে ফরওয়ার্ড প্ল্যানিংয়ের মতো বেআইনি কাজ বন্ধ করার জন্য কড়া হুশিয়ারি দিলেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদী ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে ২ কোটি করে বেকারদের চাকুরী দেবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে কেন্দ্রীয় দপ্তরে বছরে ১ লক্ষ্য ২০ হাজারের বেশী লোকের কাজ হচ্ছে না। আর নুতন করে প্রত্যেক বছর ১ কোটি ৪০ লক্ষ লেখা-পড়া জানা অর্ধশিক্ষিত ছেলে-মেয়ে ১৮ বছর হওয়ার পর চাকুরী চাইতে আসে, তাদের কাজ নেই। এছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্য সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ ব্যাক্ত করলেন সমাবেশের প্রধান বক্তা মানিক সরকার। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনকার সময়ে ৫৫ কোটি টাকার ঘোটালার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে রাহুল গান্ধীর অভিযোগের কথাও উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বুধবার কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ শেষে নবনির্মিত খোয়াই টাউন হলে মদন দেববর্মা মঞ্চে শুরু হয় টিওয়াএইফ পঞ্চদশ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কাজ। ৬ শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*