নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ ফেব্রুয়ারী ৷৷ শীতের কুয়াশার জাল ছিন্ন করে নতুন পাতার শোভা আর নানান রঙবেরঙের ফুলের উপহার নিয়ে কোকিলের মধুর কণ্ঠের গানের তালে তালে এ দেশে বসন্তকাল আসে। ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করতে গুণ-গুণ গান গেয়ে গাছের পাতার ফাঁকে উড়ে বেড়ায় মৌমাছি, ভ্রমর আর নানা বর্ণের পাখি। বঙ্গাব্দের বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। বসন্তকালে প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় যদিও তার কবিতায় লিখেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক – আজ বসন্ত’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বসন্তকালে ফুল ফুটবেই। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের সুগন্ধ। এই সময়ে বাগানে বাগানে সৌন্দর্যের আলো ছড়ায় জুই, চামেলি, রজনীগন্ধ্যা, শিমূল, গোলাপ, লাল গুল মেহের (কৃষ্ণচূড়া) আর হলুদ রঙের রাধাচূড়া। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের রূপ তার নানান গান ও কবিতায় তুলে ধরেছেন। যেমন : ‘এল এ বনান্তে পাগল বসন্ত বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায়রে চঞ্চল তরুণ দুরন্ত’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তের অপরূপের মহিমা গেয়েছেন ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়’। শুধু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল নন প্রতিটি মানুষের মনেই আনন্দদোলা জাগায় বসন্তকাল। বাংলা সাহিত্যের কবিতা, ছড়া, গান, গল্প, উপন্যাস সহ প্রতিটি সৃজনশীল সৃষ্টিমাধ্যমেই আছে বসন্তের সরব উপস্থিতি। বসন্তকালকে তারা বসিয়েছেন রাজার আসনে। ছয়টি ঋতুর মধ্যে বসন্তকেই বলা হয় ঋতুরাজ। ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষ করে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার হিন্দু সম্প্রদায়ের বন্ধুরা বসন্তঋতুকে বরণ করেন ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে পূজা-পার্বণ আর বন্দনা সঙ্গীত আয়োজনের মাধ্যমে। ইদানীং তাদের এসব আয়োজনে অন্য সম্প্রদায়ের লোকদেরকেও শামিল হতে দেখা যায়। বসন্তকাল মানেই ফুল। বসন্তের বার্তা নিয়ে আসে পলাশ- শিমুল-মাদার। ফুলের গন্ধে মাতওয়ারা হয়ে পাখিরা কচিপাতার ফাঁকে ফুলের মঞ্জরি মধু পান করে মিষ্টি সুরের গান ধরে। শীতের জীর্ণতা আর মলিনতা কাটিয়ে রাজ্যের প্রকৃতি ফিরে পায় সচেতন নতুন প্রাণ।