গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবালে মড়ক

h2আন্তর্জাতিক ডেস্ক ৷৷ অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বিশাল অংশ দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি সমুদ্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা পত্রিকা জার্নাল ন্যাচারের এক প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রের নীচে ও ওই অঞ্চলের বাতাসের ওপর করা একাধিক জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালে সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। এতে সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত হয়ে অনেক প্রবালের ক্ষতি হয়েছে। বেশকিছু প্রবাল মারাও গেছে। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান কোরাল রিফ সেন্টার প্রোগ্রাম অফিসার সিয়েন কনোলি বলেন, ‘রিফের প্রায় ৫০ শতাংশ কোরাল ক্ষতির মুখে আছে। যেসব কোরাল ক্ষতির মধ্যে আছে সেগুলোর প্রায় ৯১ শতাংশে মড়ক দেখা দিয়েছে।’ কনোলি বলেন, ‘২৭ বছর আগে এখানে যে পরিমাণ প্রবাল ছিল তার সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে কয়েক দশক আগে যেখানে প্রবাল ছিল ২৮ শতাংশ এখন সেটা মাত্র ১৩ শতাংশ। সুতরাং ধরা যায় প্রবালের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রবালের এই ধরনের মড়ক আসলেই অপ্রত্যাশিত।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, অত্যধিক তাপের কারণে যখন সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত হয় তখন প্রবালের মধ্যে থাকা এক ধরনের শেওলার বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে প্রবাল সাদা হয়ে যায় এবং তাদের শক্তি গ্রহণের উৎস কমতে থাকে। এভাবেই প্রবালের মড়ক শুরু হয়। ‘এই বছরের তাপমাত্রা ছিল অত্যধিক। এই কারণে প্রবাল ক্ষতিগ্রস্তের মাত্রাটাও বেশি। এই বছরে প্রবাল মড়কের পরিমাণটা গত বছরের চেয়েও অনেক বেশি’ বলেন সিয়োন কনোলি। প্রতিবেদনে প্রবালের এই ক্ষতির বিষয়টিকে কঠিন সংকট বলে অভিহিত করা হয়। কনোলি বলেন, ‘যে পরিমাণ প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মারা গেছে সেই পরিমাণ প্রবাল জন্ম নিতে অনেক বছর লাগবে। হতে পারে সেটা কয়েক দশক।’ এ প্রসঙ্গে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডেভিড বেকার বলেন, ‘যদি এখানকার সব প্রবাল মারা যায় তবে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বলে পৃথিবীতে কিছু থাকবে না। কারণ প্রবালগুলো মারা গেলে সেগুলো এক ধরনের কালো শেওলাতে পরিণত হবে। তখন ওই এলাকার স্বচ্ছ পানি কালো আকার ধারণ করবে।’ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাল মারা যাক বা না যাক তবে এটা বলা যায় যে, এই প্রবালগুলো উচ্চ মাত্রায় অভিযোজন করতে পারছে না। সিয়োন কনোলি বলেন, ‘এটা নিশ্চিত যদি তাপমাত্রা এভাবে বাড়তেই থাকে তবে এখানকার প্রবালগুলো এক সময় মারা যাবে। এর পরিবর্তে অধিক তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এমন এক ধরনের সামুদ্রিক আবর্জনার জন্ম হবে এখানে। যেটা এই অঞ্চলের পরিবেশকে পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলবে।’ জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ২৭৫ মিলিয়ন মানুষ এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এটি অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছে। প্রায় ৭০ হাজার লোক নতুন করে কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয় শুধু এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কারণেই।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*