খোয়াই ‘সপ্তপ্রদীপ’ সিনেমা হলের কর্ণধারের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার

khwiগোপাল সিং, খোয়াই, ২১ জুন ৷৷ মর্মান্তিক মৃত্যু হল খোয়াইয়ের এক সময়কার স্বনামধণ্য ‘সপ্তপ্রদীপ’ সিনেমা হলের কয়েকজন কর্ণধারের মধ্যে একজন কর্ণধারের। অত্যন্ত সুপরিচিত চন্দন বণিকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হল খোয়াই থানাধীন দক্ষিন সিঙ্গিছড়া শ্রীনগর পাড়ায় মুল সড়কের পাশে। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি আজই খোয়াইতে নতুন মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হবার কথা ছিল। কিন্তু তার ঠিক একদিন আগেই রাতের অন্ধকারে ঘটে যায় এই মর্মান্তিক পরিণতি। তবে মৃত চন্দন বণিকের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মেনে নিতে পারছে না মৃতের পরিবার। খোয়াই থানায় এমর্মে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এদিকে পুলিশও মৃত্যুর কারন নিয়ে ধূঁয়াশার মধ্যেই রয়েছে। যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন। তবে যেভাবে মৃতদেহ পাওয়া গেছে তাতে মৃতের পরিবার বেশ কিছু প্রশ্ন তুলছেন এবং সেই সাথে অভিযোগ করেছেন যেহেতু নতুন মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের সাথে চন্দন বাবু জড়িত এবং চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল বুধবারই তাই হয়তো কোন দুষ্টচক্র পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে। যদিও গোটা বিষয়টি এখন পুলিশি তদন্তেই বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে খোয়াইতে দীর্ঘ বছর যাবত সিনেমা হল না থাকায় একসময়কার স্বনামধণ্য ‘সপ্তপ্রদীপ’ সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার চন্দন বণিক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল অবধি খোয়াইতে চুটিয়ে ব্যাবসা করা অন্যতম সিনেমা হলটি এরপর একসময় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময় সিনেমা হলের জায়গাও বিক্রি হয়ে যায়। তখন থেকেই চন্দন বণিক বিভিন্ন সময় একটি সিনেমা হল চালু করার বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হয়েছেন। খোয়াইতে উপ-নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রকাশ্য জনসভা শেষে সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন খোয়াইতে একটি মাল্টিপ্লেক্স হল চালু করার বিষয়ে। কয়েক মাসের মধ্যেই দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পুরন হতে চলছিল চন্দন বাবুর। খোয়াইয়ের ত্রিতল বিশিষ্ট কোহিনুর কমপ্লেক্সের উপর তলায় শীঘ্রই মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের কাজ শুরু হবার কথা। আজ ছিল চুক্তি স্বাক্ষরের দিন। কিন্তু সাফল্যের চাবিকাঠি নিজ হাতে তুলে নেওয়ার আগেই অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন চন্দন বণিক। সেই সাথে শেষ হল দীর্ঘ বছরের দৌড়ঝাঁপ। আর্থিক সংকটের মুখেও ক্ষীন আশা বুকে নিয়ে বয়ে চলা চন্দন বাবুর অন্তিম ইচ্ছা পূরন হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হতে তিনি দেখবেন না।
খোয়াই পুর এলাকার দূর্গানগরের বাসিন্দা তিনি। তার পরিবারে স্ত্রী এবং দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে বিবাহিতা। ভাই রয়েছে…। আজ সবাই শোকগ্রস্ত। চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে গোটা পরিবার। কিন্তু চন্দন বণিকের মৃত্যুর কারন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সকলেই। দ্বারস্থ হয়েছেন আইনের। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত থেকেই নিখোঁজ ছিলেন চন্দন বাবু। দক্ষিন সিঙ্গিছড়া শ্রীনগর পাড়ায় মুল সড়কের পাশে বুধবার সকালে প্রাত:ভ্রমনকারীদের নজরে পড়ে একটি মৃতদেহ। খবর পৌছে খোয়াই থানায়। ছুটে যান পুলিশ কর্তারা। পীচ ঢালাই সড়কের পাশে কাঁচা ড্রেনের মধ্যে পড়েছিল মৃতদেহের উপরের অংশ। পাশেই ছিল একটি সাইকেল। দেখলে মনে হবে সাইকেল থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ড্রেনের মধ্যে পড়েছেন। তাছাড়া তিনি প্রায়শ:ই নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকতেন। যদিও চন্দন বাবুর পরিবারের অভিযোগ, তাকে খুন করা হয়েছে। এদিকে খোয়াই থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা গ্রহন করে তদন্ত শুরু করেছে। খোয়াই জেলা হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্তের পর বুধবার দুপুরেই মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*