ইস্তফা দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরিফ, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেহবাজ

nwsআন্তর্জাতিক ডেস্ক ৷৷ পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারালেন নওয়াজ শরিফ। পানামা পেপার্স তদন্তে নাম উঠেছিল তাঁর। শুক্রবার সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)-র কাছে পাঠাতেও নির্দেশ দিয়েছে পাক সর্বোচ্চ আদালত। পানামা গেট দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বিচারের জন্য সেটি দুর্নীতি দমন আদালতে পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত। সর্বসম্মতির ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে আদালত এও নির্দেশ দিয়েছে, শরিফের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করতে হবে, তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে রেফারেন্স পাঠাতে হবে অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্টে। ৬ সপ্তাহের মধ্যে পাক প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধে মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলতেও ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে ৬৭ বছর বয়সি শরিফ সম্পর্কে তীব্র নিন্দাসূচক মত রয়েছে। ৫ বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, পার্লামেন্ট ও বিভিন্ন আদালতের সঙ্গে অসত্ আচরণ করেছেন তিনি, তাই প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
নওয়াজ শরিফের ইস্তফার পর পাকিস্তানের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে, তা নিয়ে তুমুল জল্পনার মধ্যেই তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মধ্যে। শোনা যাচ্ছে, নওয়াজের ভাই, পঞ্জাব প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ৬৫ বছর শেহবাজই প্রধানমন্ত্রী পদে স্বাভাবিক বাছাই। তাঁকে একজন অক্লান্ত কর্মী, পাক্কা কাজের লোক, দাদার প্রতি অনুগত, শাসক মহলের সুনজরে রয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। তবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য না হওয়ায় এখনই প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না শেহবাজ। প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে গেলে তাঁকে আগে পার্লামেন্টে ভোটে জিতে নির্বাচিত হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শরিফের আস্থাভাজনদের মধ্যে থেকে কাউকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বাছাই করতে হবে। শেহবাজ যে মূহূর্তে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হবেন, সরে যাবেন তিনি। পাকিস্তানে এমন অবশ্য এই প্রথম হচ্ছে না। পারভেজ মুশারফের সময় তাঁর মনোনীত শওকত আজিজকে তাঁর দল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কিউ তাঁকে জিতিয়ে নিয়ে আসা পর্যন্ত চৌধুরি সুজ্জাত হুসেইনকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল। তবে শেহবাজকে প্রধানমন্ত্রী করার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, পঞ্জাবে সরকার চালানোয় তাঁর বিকল্প কেউ নেই। পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় থাকতে গেলে পঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা যে কোনও দলের কাছেই অত্যন্ত জরুরি। সূত্রের খবর, শেহবাজের ছেলে হামজা সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীদের দৌড়ে থাকতে পারেন। আবার এমনও খবর হাওয়ায় ভাসছে যে, কাজ চালানোর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ, প্রাক্তন পেট্রলিয়ামমন্ত্রী শাহিদ খাহান আব্বাসি, প্রাক্তন যোজনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আয়াজ সাদিক। তবে নিজের জায়গায় সাময়িক বা পাকাপাকি কাকে শেষ পর্যন্ত বাছবেন, তা একেবারেই শরিফের ওপর নির্ভর করছে। তাঁর সিদ্ধান্তই মানতে হবে সবাইকে। শরিফকে পানামা পেপার্স নথিতে ফাঁস হওয়া বেআইনি সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য ঘিরে অসদাচরণের দায়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বরখাস্ত করে আজ পাক সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, তাঁর ও তাঁর ছেলেমেয়েদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দায়ের করতে হবে। ইস্তফা দিয়েছেন শরিফ।
FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*