দেবজিত চক্রবর্তী, আগরতলা, ১ ডিসেম্বর ।। ১লা ডিসেম্বর ২০১৪ ত্রিপুরার জন্য ঐতিহাসিক দিবসের তালিকায় সংযোজিত হয়েছে পালাটানার সৌজন্যে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহু আকাঙ্ক্ষিত পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন ক্রার মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া উত্তর পূর্বের নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। বরতমান পৃথিবীতে বিদ্যুৎ উন্নয়নের সবচাইতে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে চিহ্নত হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে পালাটানার বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্য জড়িত রয়েছে উন্নয়নের প্রশ্নে।
পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গোটা উদয়পুরকে নিরাপত্তার শক্ত বেষ্টনীতে আবদ্ধ করলেও, মানুষের উচ্ছাস ঠেকানো যায়নি। পালাটানায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে প্রকল্প চত্ত্বকে নবরুপে সজ্জিত করা হয়। ত্রিপুরার চিরাচরিত ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুসজ্জিত মঞ্চ তৈরী করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বহু আগে থেকেই পালাটানার সভাস্থলে মানুষ ভীড় জমাতে থাকে।
ঘড়িতে তখন ৩টে বাজতে কয়েক মুহূর্ত বহু প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় ইউনিটের ফলক উন্মোচন করে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য উপদেষ্টা ভাষনে ত্রিপুরার ভূমিকা স্বাধীনতার সময় থেকে বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্কের অবদানের কথা বলেন।
রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর আগমনে সন্তোষ প্রকাশ করেন, পাশাপাশি বাংলাদেশের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন রাজ্যের ভূগর্ভের প্রাকৃতিক গ্যাসকে পুরোপুরি ভাবে এখনো কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। দ্বিতীয় ইউনিটকে ঐতিহাসিক উদ্বোধন বলেন মূখ্যমন্ত্রী। মনারচক থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে কর্মসংস্থানে কেন্দ্রের সাহায্য দাবী করেন, পেট্রো ক্যামিকেলের ছোট কারখানা স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাংলাদেশ ভারতবর্ষ উন্নয়নে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এবং উত্তর পূর্ব তথা পূর্বোত্তর ভারতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী তথা বাংলাদেশের আরো ব্যাপক ভূমিকার কথা বলেছেন। ট্রেনশিপমেন্টের মধ্য দিয়ে মানুষের উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের ধন্যবাদ জানান মূখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভাষনের পরে ভাষন দিতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাঙ্গা বাংলার উচ্চারন করেন “মা, মোনেরা নমস্কার, খুলুমখা, বাংলাদেশের অতিথি এবং আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা” – সঙ্গে সঙ্গে জনতার উচ্ছাসের প্রতিধ্বনি শোনা যায় পালাটানা জুড়ে। সাধারন মানুষ থেকে প্রশাসন সাগ্রহে অপেক্ষায় ছিল ত্রিপুরার জন্য বিশেষ কিছু ঘোষনা করেন কিনা – সেই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী গোটা উত্তর পূর্বের অগ্রগতির সঙ্গে ত্রিপুরার উন্নয়নের সম্ভাবনা জুড়ে দিয়েছেন। লুকইষ্ট বদলে এক্ট ইষ্ট, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জাপান, ময়ানমার আর উত্তর পূর্বাঞ্চলের করিডোর থেকে পেলাটানার দৌলতে ত্রিপুরার বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্দিষ্ট ভাবে ত্রিপুরার জন্য কিছু ঘোষনা না করলেও মূখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকার কথায় সম্নতির সঙ্গে গোটা উত্তর পূর্বের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে এই অঙ্গনের পর্যটন ক্ষেত্র, জল সম্পদ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলেছেন। দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে উত্তর পূর্বাঞ্চলে অর্গানিক চাষবাদ, পুস্প পালন, দুগ্ধ বিপ্লবের স্বপ্নের অগ্রগতি সহ পালাটানায় বাংলাদেশের সাহায্য, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আগামীর অগ্রগমনের পাশাপাশি পালাটানা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রেরনের প্রসঙ্গ দিয়ে ইতিটানার আগে দ্বিতীয় ইউনিট উদ্বোধনের মধ্যে গৌরবের ভাগীদার হয়েছেন দেশের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।