ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ‘আমির-হিরানির’ বিরুদ্ধে মামলা

skশুরুর আগের চেয়ে বিতর্ক এখন যেন আরো বেশি। বিতর্ক যেন কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না ভারতীয় অভিনেতা আমির খানের নতুন সিনেমা ‘পিকে’র। রাজকুমার হিরানি পরিচালিত সিনেমাটির পোস্টারে নগ্ন হয়ে আবির্ভূত হয়ে মুক্তির আগে আলোচনার ঝড় তোলেন আমির। মুক্তির পর তিনি অভিযুক্ত হলেন হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে। মুক্তির পর থেকে দারুণ ব্যবসা করলেও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে ‘পিকে’ বিতর্ক।
বিতর্কটি উঠেছে মূলত সিনেমাটিতে দেখানো বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণেই। সিনেমার কয়েকটি দৃশ্যে হিন্দু ধর্মের অবমাননার অভিযোগে এর মধ্যেই মামলা করা হয়েছে আমির খান এবং রাজু হিরানির বিরূদ্ধে। সিনেমায় ভণ্ড ধর্মগুরু হিসেবে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে দেখানো, দেবতা শিবের অনুকরণে সজ্জিত এক ব্যাক্তিকে রিকশাওয়ালা হিসেবে দেখানো (সে সময় রিকশার যাত্রী ছিলেন দুই বোরকা পরিহিতা) – এসবকে ভাল চোখে দেখেননি অনেক ভারতীয় দর্শকই।
এদের অনেকেই সরাসরি আঙ্গুল তুলেছেন আমির খানের দিকে; তাদের বক্তব্য মুসলমান হওয়ার কারণেই হিন্দু ধর্মকে অবমাননা করতে বাঁধেনি তার। এর মধ্যেই ‘পিকে’ সিনেমাটি বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তারা তাদের বক্তব্য টুইটারে প্রচার করছেন হ্যাশট্যাগ ‘বয়কট পিকে’ লিখে। সুনিল সামন্ত নামের একজন লেখেন, “মোল্লা আমির খান প্রতি বছর হজে যায়, আর ভারতে জিহাদ ছড়ায় হিন্দু দেবদেবীদের অবমাননা করে। আরেকজন লেখেন, “ ‘পিকে’ বর্জন করুন। কারণ, সিনেমায় দেবতা শিবকে দেখা যায় রিকশা টানতে, যখন ওই রিকশায় বসা ছিলেন দুজন বোরকা পরা মহিলা।”
অনেকে অভিযোগ করেছেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক নানা কিছু দেখানো হলেও, ইসলাম কিংবা অন্য কোন ধর্মের বিষয়ে তীযর্ক কিছু দেখানো হয়নি। জয় নামের একজনের টুইট, “রাজকুমার হিরানির কি সাহস আছে মহরমে শিশুদের ওপর ইসলামের নামে যে নির্যাতন হয়- সেটা তুলে ধরার? সিয়া নামের আরেকজনের টুইট, “মানুষ জবাই করা, মেয়েদের অপহরণ করা, গণহত্যা, যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা- এসব নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। শুধু শিবলিঙ্গে দুধ ঢাললেই দোষ?” “তারা কি কখনও ‘শান্তির ধর্ম’ ইসলামের অসঙ্গতি নিয়ে সিনেমা বানাবে? আমি নিশ্চিত তারা সেটা করবে না। কারণ, তাদের জানের ভয় আছে।”
এমনকী ‘পিকে’র বেশ কিছু বিষয় ভাল লাগেনি বলে টুইট করেছেন আমিরের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’-এর সহ-অভিনেত্রী জুহি চাওলাও। তিনি অবশ্য এরপরও ‘পিকে’কে একটি ভালো সিনেমা হিসেবেই রায় দিয়েছেন। “আমার কিছু আপত্তি আছে সিনেমাটি নিয়ে। অনেক কিছু নিয়ে ‘পিকে’র সঙ্গে আমি একমত, আবার অনেক কিছু নিয়ে নই। এটাই ভালো সিনেমার লক্ষণ। কারণ, এর মাধ্যমেই চিন্তার পরিধিটা বাড়ে আর আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়।”
‘পিকে’ বিরোধীদের এমন সব টুইটের জবাব ভালোভাবেই দিয়েছেন অনেকে। ‘পিকে’ এবং আমির খানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারা চালু করেছেন ‘ উই সাপোর্ট পিকে’ হ্যাশট্যাগ। সিনেমাটি দেখে পছন্দ করেছেন, এমন অনেকেই এখন ব্যবহার করছেন এই হ্যাশট্যাগটি। তারা বলছেন, ‘পিকে’কে বর্জনের দাবি অনর্থক।
ভান্দানা সিং নামের একজনের টুইট, “উগ্রপন্থীদের কোন কারণই নেই ‘পিকে’কে বর্জনের দাবি তোলার। তারা সারাক্ষণই কোনো না কোনো সিনেমা বর্জনের ডাক দেয়। তারা আসলে এসব করে আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? ৮০০ বছর পেছনে?” সংগীতশিল্পী সোনা মাহাপাত্রার টুইট, “আপনারা যারা বয়কট পিকে বলে গলা ফাটাচ্ছেন, কোনো লাভ হবে না। এরকম কিছুই ঘটবে না। আমরা একুশ শতকে বসবাস করি। আপনারা চাইলে মান্ধাতার আমলে চলে যেতে পারেন।”
অনেকেই বলছেন, কেবল হিন্দু ধর্ম নয়, ‘পিকে’র মাধ্যমে আসলে তুলে আনা হয়েছে সব ধর্মেরই অসঙ্গতিগুলোকে। পুজা নামের এরকম একজনের টুইট, “আমি ‘পিকে’ দেখেছি। একে বয়কট করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। ধর্ম নিরপেক্ষরা সবসময় ধর্ম নিরপেক্ষই থাকবেন। ‘পিকে’ কেবল হিন্দু ধর্ম নয়, সব ধর্মেরই অসঙ্গতিগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে। যারা সিনেমার এই বার্তাটি ধরতে পেরেছেন, তারা সবাই বলুন, উই সাপোর্ট পিকে।”
শ্রেয়াস দেশমুখ নামের আরেকজনের টুইট, “আমরা পিকে সমর্থন করছি কারণ, সিনেমাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় সত্যিকারের মানুষদের কেমন হওয়া উচিৎ। ঠিক যেমনটি আমির বলেছিলেন, “মানবতাই আসলে সবচেয়ে বড় ধর্ম”।” অনেকে বলছেন, এরকম সামাজিক বার্তাবাহী সিনেমার জন্য ভারতীয় দর্শক এখনও প্রস্তুত নয়। আর তাই ‘পিকে’ নিয়ে এত বিতর্ক।
মানভির খুরানা নামের একজনের টুইট, “ ‘পিকে’ ২০১৪ সালের সেরা সিনেমা। যারা এটি এখনও বুঝতে পারেননি, তারা আসলে ‘হামশাকালস’ আর ‘হিম্মাতওয়ালা’র মতো সিনেমারই উপযুক্ত।” বিতর্ক চললেও, বক্স-অফিসে কিন্তু এর মধ্যেই ঝড় তুলেছে ‘পিকে’। প্রথম দিনের আয়ে চলতি বছরের কিছু সিনেমা থেকে পিছিয়ে থাকলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনের আয়ের হিসেবে এটি এর মধ্যেই পেছনে ফেলে দিয়েছে সালমান খানের ‘কিক’কে। তৃতীয় দিন শেষে ‘পিকে’র আয় ৯১ কোটির বেশি। অর্থাৎ চতুর্থদিনের মধ্যেই যে সিনেমাটির আয় ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত সবাই।
৮৫ কোটি বাজেটের সিনেমা ‘পিকে’ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন আমির খান এবং রাজকুমার হিরানির সেরা কাজ এটি। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমির খান। আরও আছেন আনুশকা শর্মা, সঞ্জয় দত্ত এবং সুশান্ত সিং রাজপুত। এছাড়া এক বিশেষ চরিত্রে দেখা গেছে রানবির কাপুরকেও।
দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল পিকে ছবি। কৌতূহল ছিল কখন মুক্তি পাচ্ছে এটি। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরেও নানা কারণে এখন আরও বেশি আলোচনায়। প্রথম দু`দিনেই আমির খান অভিনীত এই সিনেমা আয় করল ৫৬.৯৭ কোটি টাকা। ছবিটি মুক্তির দিনই আয় করেছিল ২৬.৬৩ কোটি টাকা।
আর গত শনিবার এর পরিমাণ ৩০.৩৪ কোটি টাকা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার সকালে সিনেমাটি দেখার ভিড় কম থাকলেও দুপুর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। যার ফলে দ্বিতীয় দিনের ব্যবসা প্রথম দিনকে ছাপিয়ে যায়।
পিকে-র জন্য অ্যাডভান্স বুকিং এখনও চলছে।ফিল্ম সমালোচকরা পিকে-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর এই প্রশংসার হাত ধরেই উপচে পড়ছে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ। সিনেমাটি দেখে দর্শকরাও খুশি। তাদের মুখে মুখে এখন আমিরের বন্দনা। আর তাতেই মিলছে ব্যবসায়িক সাফল্য।
১৯ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে পিকে। ভারতে ৫,২০০ এবং সব মিলিয়ে ৬০০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পিকে।আকর্ষণীয় গল্প ও দুরন্ত অভিনয়ের গুণে রমরমিয়ে চলছে পিকে।
বিধু বিনোদ চোপড়া প্রযোজিত রাজকুমার হিরানি পরিচালিত এই সিনেমায় আমির ছাড়াও সঞ্জয় দত্ত,অনুষ্কা শর্মা ,সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও বোমান ইরানির মতো তারকা অভিনয় করেছেন।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*