শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে সিরিসেনা, যে দশ কারণে জিতলেন তিনি

slnkaশ্রীলঙ্কা, ৯ জানুয়ারী ।। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা। শুক্রবার সকালে প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে জিতেছেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। আর এর মাধ্যমে ধসে পড়ল দু-দু’বারের প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের সিংহাসন।
শুরু হলো সিরিসেনার যুগ। শ্রীলঙ্কার রাজা খ্যাত রাজাপাকসের হার ও তারই এক সময়ের সহযোগী সিরিসেনার জয়ের পেছনে ১০টি কারণ তুলে ধরেছে ইংরেজি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

১. রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধের বিক্ষোভের সময় সিরিসেনা কম ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রী ছিলেন। তখন বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করার নীতির ব্যাপারে কমই ভূমিকা ছিল তার। এ জন্য রাজাপাকসে সরকারের দমনপীড়ণের দায় তার কাঁধে খুব কমই পড়েছে।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অভিজ্ঞ যোদ্ধার ছেলে সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলের জেলা পোলোননারুয়ার সংসদ সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দেন ১৯৮৯ সালে। সেখানে দীর্ঘদিন স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করায় ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি।
এছাড়া নকশাল আক্রমণের শিকার এ জেলার লোকজন এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাচ্ছিলেন, যাতে ওই হামলা থেকে তারা রক্ষা পান। আর তারা যোগ্য লোক হিসেবে সিরিসেনাকে বেছে নিয়েছেন।

৩. সংখ্যালঘু তামিল বংশোদ্ভূত প্রভাবিত দেশের উত্তর, পূর্ব এবং উদ্দর-পশ্চিম প্রদেশে থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন তিনি। তামিলদের বিরুদ্ধে নমনীয় মনোভাব থাকায় তাদের সব ভোটই সিরিসেনার পকেটে পড়েছে।

৪. দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসে পরিবারের প্রভাব থেকে মুক্তি চান শ্রীলঙ্কানরা। সেই সুযোগটি নিয়েছেন সিরিসেনা।

৫. গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নতিতে ব্যাপক আশার বাণী শুনানোই গ্রামের মানুষের কাছে সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রামের মানুষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাই নতুন কাউকে বেছে নেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

৬. সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেদের অভিযোগ, নিয়মিত বৌদ্ধরা তাদের ওপর হামলা চালালেও, রাজাপক্ষে সরকার তা প্রতিহত করতে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই ভোট বাক্সে সিরিসেনাকে বেছে নেয় তারা।
এছাড়া সম্প্রতি রাজাপাকসের দল থেকে বেশ কিছু মুসলিম নেতা সিরিসেনার দলে যোগ দেয়, যা মুসলিম ভোট তার বাকসে যেতে বাড়তি সুবিধা জুগিয়েছে।

৭. প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্সি ক্ষমতা বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন তিনি। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ধরনের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের আত্মপ্রকাশের কথা জানান তিনি। এতে পুলিশ, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন বিভাগ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
সেখানে সরকারের কোনো বাধা থাকবে না। এ ধারণার জন্য শ্রীলঙ্কানদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

৮. সিরিসেনাকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার প্রতিনিধি ভাবা হয়ে থাকে। এর ফলে দেশটিতে থাকা কুমারাতুঙ্গার সমর্থকরা সিরিসেনাকে সমর্থন করেন।

৯. সিরিসেনা আগেই ঘোষণা দেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন তাহলে পার্লামেন্টের বিরোধদল ইউএনপির নেতা ও জনপ্রিয় রাজনীতিক রনিল উইক্রমসিঙ্গেকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন।
তাই ইউএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দেন।

১০. সিরিসেনা বিনিয়োগ বান্ধব মুক্তি বাণিজ্য নীতির কথা বলেছেন, যা দেশটির ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*