পশ্চিমবঙ্গ, ১২ জানুয়ারী ।। দোমহলা বাড়িটিতে দিন সাতেক কাটিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্মৃতি বলতে রয়েছে এক আরাম কেদারা আর এক পালঙ্ক। পরে আরাম কেদারাটি পাশের গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমকে দিয়ে দেয়া হলেও পালঙ্কটি এখনো রয়েছে ওই বাড়িতে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ভৈটা গ্রামের স্বামীজির ওই শিষ্যের উত্তরপুরুষেরা তার অধিকার ছাড়তে চান না কোনো ভাবেই। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপড়েন। মিত্র বাড়ির উত্তরপুরুষরা গণমাধ্যমকে জানান, ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি ওই বাড়িতে শিষ্য হরিপদ মিত্র ও মিত্র জায়া ইন্দুমতিদেবীর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
এখানে সাতদিন ছিলেন স্বামীজি। যে ঘরে তিনি থাকতেন সেখানেই ছিল ওই আরাম কেদারা ও পালঙ্কটি। বিশ্রাম নেয়া, লেখালেখি করা সবই তিনি করতেন ওইখানে। পরে আরাম কেদারাটি পাশের পুতুন্ডা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম পায়। কিন্তু পালঙ্কটি বাড়িছাড়া করতে চান না মিত্রবাড়ির সদস্যেরা।
পতুন্ডা গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের আচার্য স্বামী মহেশানন্দ গণমাধ্যমকে জানান, হরিপদ মিত্রের সঙ্গে স্বামীজির প্রথম পরিচয় হয় মহারাষ্ট্রের বলগাঁওয়ে। হরিপদবাবু সেখানে বন দফতরের আধিকারিক ছিলেন। পরে বিবেকানন্দমুগ্ধ হরিপদবাবুরা স্বামীজির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। হরিপদবাবুর অনুরোধে তাঁর ভৈটাগ্রামের বাড়িতেও এসেছিলেন স্বামীজি।
আচার্য জানান, শক্তিগড় স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ভৈটা গ্রামে যেতে গিয়ে স্বামীজি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। পথে পুতুন্ডা গ্রামের তত্কালীন জমিদার মন্মথ চৌধুরীদের বাড়িতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। বছর ছাব্বিশ আগে সেখানেই গড়ে ওঠে বেলুড় মঠ অনুমোদিত শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম।
তিনি আরো বলেন, পুতুন্ডা থেকে ভৈটার দূরত্বও বেশ খানিকটা। স্বামীজির কষ্ট দূর করতে মন্মথবাবু তার জন্য পাল্কির ব্যবস্থা করেন। পাল্কি চড়েই আলপথে স্বামীজি, ১৯০২ সালের ২২ জানুয়ারি পৌঁছন মিত্র বাড়িতে। ওই বাড়ির উত্তরপুরুষদের অন্যতম, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শান্তিময় দে এখনো মজে রয়েছেন পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শোনা গল্পে।
শান্তিবাবু বলেন, আমার মায়ের দাদু ছিলেন হরিপদ মিত্র। এ বাড়ির নাম তিনিই দেন বিবেক কুটির। দোমহলা সেই বাড়ি এখন ভেঙে পড়লেও সাবেক স্থাপত্যরীতির আভিজাত্য আজও বর্তমান।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের আগে সংবাদকর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, একতলার ডানদিকের একটি ঘরের সামনেই রয়েছে বিবেকানন্দের বাঁধানো ছবি। ঘরের ডান দিকে সেই পালঙ্ক।
পালঙ্কের একদিকের চালা খসে বিবর্ণ হয়ে গেলেও কাঠের কাজ দেখে ১১৫ বছরের পুরনো ইতিহাস চোখে পড়ে। মিত্রবাড়ির সদস্যদের দাবি, এ পালঙ্ক আশ্রমে নিয়ে যেতে চাইছেন আচার্যেরা।
পুতুন্ডার আশ্রমের আচার্য মহেশানন্দের দাবি, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই ঘরে রাখা বিবেকানন্দের ব্যবহৃত আসবাবগুলি চাইছি। বিনিময়ে নতুন, দামি আসবাব দিতেও রাজি আমরা। অনেক বলার পরে আরাম কেদারাটি দিলেও পালঙ্কটি দিতে নারাজ তারা। কিন্তু আমরা পালঙ্কটি পেলে আশ্রমে সংরক্ষণ করে রাখব, যাতে বিবেকানন্দের ভক্তেরা দেখতে পান।
আশ্রমের ঘরে গিয়েও দেখা যায়, ওই কেদারাটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে দর্শনের জন্য। কিন্তু তারা যে পালঙ্কটি দিতে নারাজ তা স্পষ্টই জানিয়েছেন শান্তিবাবুরা। তারা জানান, মিত্রবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই মারা যান বিবেকানন্দ। ওই পালঙ্ক আমাদের পারিবারিক সম্পদ। স্বামীজির স্মৃতি তাতে জড়িয়ে রয়েছে। ওটি আমরা আশ্রমকে দিতে পারব না।
তাদের দাবি, কারো ওই পালঙ্ক দেখার ইচ্ছে হলে আমাদের বাড়ি অবারিত দ্বার। এ বাড়িতেই তো রাশিয়া থেকে একদল গবেষক, কলকাতার ব্রিটিশ কমিশনার আরো অনেকে এসেছেন। শান্তিবাবুর দাবি, দাদুদের কাছে শুনেছি, স্বামীজি প্রতিদিন ওই পালঙ্কে বসে লেখালিখি করতেন। ওই পালঙ্ক আমরা হাতছাড়া করতে পারব না। সূত্র : আনন্দবাজার।