তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক ।। কম্পিউটারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যমেও আপনি আর গোপন থাকতে পারছেন না। সেখানেও শুরু হয়ে গেছে আড়িপাতা। আপনার গোপন সব খবরাখবর এখন থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য আরেকজনের কাছে। এ রকমই এক খবর সম্প্রতি জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। তবে তা এখনো সব দেশের ক্ষেত্রে শুরু হয়নি।
ওই পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ২০১০ সাল থেকে আড়ি পাতছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বা এনএসএ। এনএসএ’র একটি দলিল এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য মিত্রের সহায়তায় এ কাজ করেছে আমেরিকা।
বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার কাজে চীনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়া। এ নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়ার কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ওপর আড়ি পেতেছে এনএসএ।
এছাড়া কথিত হ্যাকারদের ওপর নজর রাখার জন্য গোপন ম্যালওয়ার বা ভাইরাসও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে উত্তর কোরিয়ার কম্পিউটার নেটওয়ার্কে। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা রিকনিসেন্স জেনারেল ব্যুরোর আওতায় প্রায় ছয় হাজার হ্যাকার তৎপর রয়েছে।
এছাড়া আরো বলা হয়েছে, ব্যুরো ১২১-এর আওতায়ও তৎপর রয়েছে কথিত গোপন হ্যাকিং ইউনিট। সনি পিকচার্সে প্রায় নজিরবিহীন সাইবার হামলায় উত্তর কোরিয়া জড়িত বলে আমেরিকা অভিযোগ করার পর এ খবর ফাঁস করে দেয়া হলো। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন করে ধরে এনএসএ নজরদারি চালালেও কেন সনি পিকচার্সের ওপর কথিত সাইবার হামলার ঠেকানোর আগাম পদক্ষেপ নেয়নি, এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মার্কিন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।
বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠানো কম্পিউটার সরবরাহ আটকে সেটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিবর্তন করে দেয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)। জার্মান ম্যাগাজিন ডিয়ের স্পিগেলের দাবি, তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে মাইক্রোসফটের ইন্টারনাল রিপোর্টিং সিস্টেমেও আড়ি পাতে সংস্থাটি।
ডিয়ের স্পিগেল জানায়, এ কাজগুলো করার জন্য টেইলরড অ্যাকসেস অপারেশনস (টিএও) নামে বিশেষ একটি দল আছে এনএসএর। কঠিন লক্ষ্যবস্তু থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য অত্যন্ত দক্ষ হ্যাকারদের নিয়ে গঠিত এ দল। এনএসএর ফাঁস হওয়া নথিতে উল্লেখ আছে, এ পদ্ধতিতে এমন কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে; যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।
কম্পিউটারগুলোয় আড়ি পাততে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সহায়তা নেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষায়িত কম্পিউটার ক্যাবল, যেগুলো স্ক্রিনে টাইপ করা সব তথ্য রেকর্ড করতে পারে; আছে রেডিও ট্রান্সমিটারসংবলিত ইউএসবি ড্রাইভ, চুরি করা তথ্য সম্প্রচার করতে পারে এগুলো।
আরো আছে ছদ্মবেশী বেজ স্টেশন, যেগুলো চলমান অবস্থায় থাকা সেলফোনগুলোয় কথোপকথন রেকর্ড করতে সক্ষম। শুধু এগুলোর ওপর নির্ভর করে থাকে না সংস্থাটি। কম্পিউটারের তথ্য আহরণ করতে ইন্টারনেটের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যালওয়্যার ও ক্ষতিকর সফটওয়্যারও ছড়িয়ে দেয় তারা।
পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারগুলো নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এ তালিকায় নাম রয়েছে সিসকো সিস্টেমস ও চীনের হুয়াউই টেকনোলজিস।
মজার বিষয় হচ্ছে, যেসব কোম্পানির যন্ত্রাংশ নিজেদের মতো পরিবর্তন করতে পারে, সেগুলোর আলাদা একটি তালিকাও আছে এনএসএর কাছে। এর মধ্যে রয়েছে হার্ডডিস্ক নির্মাতা ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল ও কম্পিউটার নির্মাতা ডেলের নামও। ডিয়ের স্পিগেলের দাবি, বিশেষ করে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যারই বেশি পরিবর্তনের সুযোগ পায় এনএসএ।
তিনি আরো জানান, পুরনো ধরনের পদ্ধতিও অবলম্বন করে তারা। বিশেষ করে যখন দেখা যায়, নজরদারিতে থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন কম্পিউটার বা যন্ত্রাংশ সরবরাহের আদেশ দিচ্ছে। তখন ফেডারেল ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সহায়তায় সেই চালান মাঝপথে আটকে দেয় সংস্থাটি।
তিনি বলেন, সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া যায় হয় গোপন কারখানায়, যেখানে এগুলোয় গোয়েন্দা যন্ত্রাংশ সংযোজন করে দেয়া হয়। সেগুলো দেখতে অন্য ১০টা সাধারণ যন্ত্রাংশের মতোই মনে হয়। তাই ব্যবহারকারীদের মনেও সন্দেহের কোনো উদ্রেক হয় না।
ডিয়ের স্পিগেলের দাবি, এভাবে কম্পিউটার আটকে দেয়ার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহে সক্ষম হয় এনএসএ। কেননা সারা বিশ্বেই মার্কিন কোম্পানিগুলোর তৈরি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়।