স্পোর্টস ডেস্ক ।। দুপুরে মাংস ভাতের সঙ্গে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ৷ তার সঙ্গে ফাউ হিসেবে যদি থাকে টিভিতে বাংলায় কমেন্ট্রি, বাঙালিকে আর পায় কে? কোহলি বনাম আফ্রিদির লড়াই বিশ্বকাপের সৌজন্যে এ বার টিভির পর্দায় বাংলাতেও৷ এক কথায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট ঘিরে ফিরতে চলেছে বাঙালির পুরোনো নস্ট্যালজিয়া! বিরাট, ধোনির পাশাপাশি এ বার এবি ডেভেলিয়ার্স, ডেল স্টেইনরাও ঢুকে পড়তে চলেছেন একেবারে বাঙালির রান্নাঘরে, মা-মাসিমাদের সংসারে৷ সৌজন্যে বাংলায় লাইভ কমেন্ট্রি৷
বিরাট কোহলির সঙ্গে শাহিদ আফ্রিদির ডুয়েল কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে মিসবা উল হকের টক্কর! ১৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাডিলেডে এ রকম রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধ চাক্ষুষ করতে নিশ্চয়ই সাত সকালে গোটা দেশের মতো টিভির সামনে বসে পড়বে ক্রিকেটপিপাসু বাঙালি৷ উপরি হিসেবে গ্রোগাসে গিলতেই হবে ইংরেজি আর হিন্দিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গাভাসকর, ওয়াসিম আক্রমদের চোখা চোখা ক্রিকেট বিশ্লেষণ! আরও থাকছে৷ এ বার সম্প্রচারক চ্যানেলের উপহার বাংলায় ধারাভাষ্য৷ এখনও সরকারি ঘোষণা না হলেও জলসা মুভিজ বিশ্বকাপ ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচারের সঙ্গে বাংলা লাইভ কমেন্ট্রি দর্শকদের উপহার দেওয়ার ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে৷
পশ্চিমবাংলায় ধারাভাষ্য মানেই বাঙালির মনের মধ্যে চলে আসে অজয় বসু, পুষ্পেন সরকার, কমল ভট্টাচার্যের নাম৷ ‘ইডেন উদ্যান থেকে বলছি,’ অজয় বসুর চেনা কন্ঠস্বর বাঙালির ক্রিকেট ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে৷ রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দ্দিনীর মতোই জনপ্রিয় অজয় বসুর সেই কণ্ঠস্বর৷ কিন্ত্ত টিভিতে ক্রিকেটে বাংলা ধারাভাষ্য দূরদর্শন চালু হওয়ার সময় ইডেনে টেস্ট ম্যাচে কয়েকবার হলেও তা কখনওই নিয়মিত ছিল না৷
আয়োজকরা প্রাথমিক ভাবে বাংলার ক্রিকেট আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়েই ক্রিকেটে বাংলা ধারাভাষ্যের বাইশ গজে চমক দিতে চেয়েছিলেন৷ তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ কারণ সে সময় হিন্দি ও ইংরেজিতে কমেন্ট্রি দিতেই সৌরভ অস্ট্রেলিয়া বা নিউ জিল্যান্ডে থাকবেন৷
সৌরভ না থাকলেও কমেন্ট্রি টিমের নামগুলো বাংলার ক্রিকেট মহলে বেশ জনপ্রিয়৷ কারা থাকছেন? আপাতত যা জানা গিয়েছে, তাতে ক্রিকেটারদের মধ্যে দেবাং গান্ধী, রণদেব বসু ও শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের ধারাভাষ্য দেওয়ার কথা৷
এঁদের মধ্যে দেবাংয়ের কমেন্ট্রি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপে কমেন্ট্রি করেছেন দেবাং৷ ঘরোয়া ক্রিকেটেও চুটিয়ে কমেন্ট্রি করছেন৷ তবে বাংলায় প্রথমবার কমেন্ট্রি নিয়ে বেশ উত্তেজিত তিনি৷ বললেন, ‘কোনও দিন বিশ্বকাপ খেলিনি৷ তবে বিশ্বকাপে কমেন্ট্রি করতে পারলে সেই যুদ্ধের উত্তাপের আবহে থাকতে পারব৷ এটা ভেবেই উত্তেজিত লাগছে৷ তা ছাড়া বাংলার হয়ে খেলেছি, এ বার বাংলায় কমেন্ট্রি করব, এটা ভেবে ভালো লাগছে৷’
শরদিন্দু, রণদেবদের হয়তো ধারাভাষ্যের দুনিয়ায় হাতেখড়ি ঘটবে বিশ্বকাপ দিয়েই৷ বাংলায় ধারাভাষ্য জনপ্রিয় হবে বলেই মনে করছেন বাংলার ক্রীড়ামহল৷ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কমেন্ট্রিও বাংলায় শুরু হওয়ার কথা৷ হিন্দি বা ইংরেজিতে কমেন্ট্রি ক্রিকেট ভক্তদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও মাতৃভাষায় ধারাভাষ্য শুনে আরও বেশি করে মানুষ এর সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়বেন বলে মনে করছে ক্রিকেট মহল৷ দেবাং বলছিলেন, ‘কমেন্ট্রি করার সময় লক্ষ্য থাকে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা৷ আর সেটা নিজের ভাষায় শুনলে আশা করি বাংলার দর্শকরা অনেক বেশি উপভোগ করতে পারবেন৷’ শুধু বাংলাতেই নয়, অনান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও বিশ্বকাপের লাইভ ম্যাচ কমেন্ট্রির ভাবনা রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক চ্যানেলের৷
সম্প্রতি ক্রিকেট কমেন্ট্রির ধারণাটাই বদলে গিয়েছে৷ ক্রিকেটাররাই ধারাভাষ্যকার বনে যাচ্ছেন৷ দেশ-বিদেশের প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটাররা ধারাভাষ্য দিতে আসছেন৷ ভারতে যেমন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছেন সৌরভ৷
এ বার কি নতুন দিগন্ত খুলবে বিশ্বকাপে বাংলা কমেন্ট্রি? উত্তর পেতে অ্যাডিলেডে কোহলি-আফ্রিদিদের যুদ্ধ দেখতে দেখতে চ্যানেল সার্ফ করতেই হবে৷