সামাজিক অবক্ষয়ের নগ্ন চিত্র, বড়মুড়া পাহাড়ের গভীর জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা থেকে সদ্যোজাত ফুটফুটে শিশু কন্যা উদ্ধার

সাগর দেব, তেলিয়ামুড়া, ০৪ সেপ্টেম্বর || “আমার কি দোষ ছিল মা, আমি তো জোর করে এই পৃথিবীতে আসতে চাই নি; তোমরাই তো আমাকে এই সুন্দর ভূবনে এনেছিলে। তাহলে আজ কেনো তোমরা আমাকে গভীর জঙ্গলে একাকী ফেলে রেখে চলে গেলে” — কী পাপ করেছিলাম আমি “মা” ??? শুধুমাত্র মিষ্টি এই ভূবনটা তোমার কোলে ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছিলাম। “মা” “মা” করে গভীর জঙ্গল থেকে অনেক ডেকেছিলাম তোমায় আমি “মা” কিন্তু তুমি এলে না “মা” ।।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে—
“বন্যেরা বনে সুন্দর, আর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে” —কিন্তু আর এই সদ্যোজাত শিশুদেরই যখন কোন এক সকালে পাওয়া যায় গভীর জঙ্গল থেকে শুরু করে জঞ্জাল স্তূপ কিংবা নালা নর্দমায় তখন আমাদের বলার মতো আর মুখের কোন ভাষাই থাকে না। ফের একবার সামাজিক অবক্ষয়ের নগ্ন চিত্র রুপ ও চূরান্ত নিদর্শন ফুটে উঠে আসলো তেলিয়ামুড়া থানাধীন বড়মুড়া পাহাড়ের গভীর জঙ্গলাকীর্ণ থেকে।
উল্লেখ্য, বড়মুড়া পাহাড়ের আসাম আগরতলা জাতীয় সড়কের পাশের গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় সদ্যোজাত ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের দেহ। চাঞ্চল্যকর এই অমানবিকতার ঘটনাটি ঘটে শনিবার বেলা আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ তেলিয়ামুড়া থানাধীন বড়মুড়া ইকো পার্ক সংলগ্ন আসাম আগরতলা জাতীয় সড়কের পাশে গভীর জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বড়মুড়া পাহাড়ের গিরী এলাকায় স্থানীয় বসবাসরত এক জনজাতি ব্যক্তি জাতীয় সড়ক ধরে বাড়িতে যাওয়ার পথেই হঠাৎ নির্জন এই গভীর জঙ্গলে সদ্যোজাত একটি শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান। কিছুটা ভয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে সেই জনজাতি ব্যক্তি সদ্যোজাত শিশুটিকে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে তিনি সেখান থেকে দৌড়ে ছুটে গিয়ে পার্শ্ববর্তী আরও স্থানীয়দের ও অন্যান্য পথচলতি সাধারণ মানুষ জনের সহায়তায় জঙ্গলে পড়ে থাকা ফুটফুটে কন্যা সদ্যোজাত সন্তানটিকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় তেলিয়ামুড়া থানায়। খবর পেয়েই তেলিয়ামুড়া থানার কর্তব্যরত সাব ইন্সপেক্টর পুলিশ প্রীতম দত্ত এবং সাব-ইন্সপেক্টর শুভঙ্কর দেববর্মার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ ও “TSR” বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে এই সদ্যোজাত কন্যা সন্তানটিকে জঙ্গলাকীর্ণ থেকে উদ্ধার করে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জঙ্গলে উদ্ধার এই সদ্যোজাত কন্যা শিশুটির শারিরীক অবস্থা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর অবশেষে তেলিয়ামুড়া পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এইদিকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই বড়মুড়ার গভীর জঙ্গলে উদ্ধার এই সদ্যোজাত মেয়েটি আনুমানিক ১ থেকে ২ দিন হবে। যদিও বর্তমানে এই সদ্যোজাত শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফের একবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো যে বর্তমানে আমরা কাগজে-কলমে আদৌও যতোটাই সভ্য হই না কেন আসলে সভ্য সমাজেরই একটা অংশ আমাদের এই সভ্য সমাজের মধ্যে এই ধরনের অসভ্যতা আর এই বর্বরতাকে নির্মমভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে বলেই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অহরহ বিভিন্ন ঘন জঙ্গলে, পরিত্যক্ত জায়গায়, এমনকি রাস্তার ধারে সদ্যোজাত মানব শিশু উদ্ধার জনিত ঘটনা ঘটছে। আজকের এই ঘটনার খবর চাউর হতেই গোটা তেলিয়ামুড়ার এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সচেতন মহলজুড়ে একপ্রকার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*