জাতীয় ডেস্ক ।। জনতার উদ্দেশে এক জন বললেন, তার ভাগ্যেই দেশের উন্নতি হচ্ছে, তাই জেনেশুনে দুর্ভাগ্য ডেকে আনবেন না। আর এক জন ৪৯ দিনের মাথায় সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। আর তৃতীয় জন ‘প্রচারক’ এবং ‘ধর্নাবাজ’ বলে বিঁধলেন প্রথম দুই নেতাকে। আগামী শনিবার দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ রবিবারটা এ ভাবেই নরেন্দ্র মোদী, অরবিন্দ কেজরীবাল এবং সনিয়া গাঁধীর ভোট-প্রচারের সাক্ষী রইল ভারতের রাজধানী। খবর এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বদরপুরের মিঠাপুরে এসে বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি (আপ) কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি। তাঁর অভিযোগ, এই দু’টি দল কেবল ফাকা প্রতিশ্রুতির উপরেই রয়েছে। মোদী এবং কেজরীবালকে লক্ষ্য করে সনিয়ার মন্তব্য, “একটা দলে রয়েছেন প্রচারক, যিনি শুধু প্রচারই করেন। আর অন্য দলে আছেন ধর্নাবাজ। সারা ক্ষণ ধর্নায় বসতেই যিনি ব্যস্ত। দিল্লিতে সুশাসনের প্রয়োজন। বিজেপি আর আপ ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করছে না।” দিল্লির বিভিন্ন অংশে অশান্তি তৈরির পিছনে বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে দাবি সনিয়ার। তাঁর মতে, “এই সব শক্তি ঘৃণার রাজনীতি করছে। এদের হারাতেই হবে।”
যদিও সনিয়ার প্রচার শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঠে নামেন মোদী। দ্বারকায় প্রচারে প্রধানমন্ত্রী দিল্লিবাসীর উদ্দেশে ‘হাতে হাত ধরে’ চলার বার্তা দেন। জানান, তিনি আগেও এখানে প্রচারে এসেছেন। জলের অভাব মিটিয়েছেন। মোদীর বক্তব্য, “রাজনীতিতে একটা অভ্যাস রয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যাওয়া। স্লোগান দিতে ভালবাসে সবাই,” সনিয়ার ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতির’ অভিযোগের জবাব তিনি দিয়েছেন এ ভাবেই।
এর পরে মোদীর আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল। সরাসরি নাম না করে মোদী এ দিন বলেছেন, “এরা ভাবে খবরে থাকার জন্য একটা কিছু বলে দিলেই হল। কিন্তু দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে কাজ হয় না। তাই আমি চাই এমন সরকার, যারা আপনাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে। যে সরকার সারা ক্ষণ প্রতিবাদই করে চলে, সমাধানসূত্র খোঁজার কোনও উৎসাহ থাকে না তাদের।” সৌভাগ্যের সঙ্গে তাঁর নাম কী ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, তার ব্যাখ্যাও দেন মোদী। পেট্রোলের দাম কমায় মানুষ পয়সা বাঁচাচ্ছেন, এই তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, “লোকে বলে এ সব হচ্ছে, কারণ নরেন্দ্র মোদী ভাগ্যবান। তা আমার ভাগ্যে যদি দেশের উন্নতি হয়, তা হলে দুর্ভাগ্যের সরকারকে বেছে নেবেন কেন?”
আজ দিল্লির শাস্ত্রীনগরে প্রচারে আপ নেতা কেজরীবাল অবশ্য অন্য দলকে আক্রমণের পথে না গিয়ে আরও এক বার ক্ষমা চেয়ে নিলেন জনতার কাছে। প্রতিশ্রুতি দিলেন, ক্ষমতায় এলে আর ওই ভাবে পদত্যাগ করবেন না। কারণ কেজরীবাল মনে করছেন, “দিল্লির বহু মানুষ মনে করেন, আমাদের কাজের ফলে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। গত বছর মে মাসে আমরা তাই ক্ষমা চেয়েছিলাম। যারা সে কথা শোনেননি, তাদের উদ্দেশে আবার ক্ষমা চাইছি।” মানুষ তাঁদের দল এবং আন্দোলনের উপরে অনেকটাই ভরসা করেছিলেন বলে মত অরবিন্দের। কিন্তু সেই দল যখন সরে যায়, তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। আপ নেতার কথায়, “আমরা মিথ্যে বলিনি। চুরিও করিনি। জানি মানুষ আমাদের কাজে দুঃখ পেয়েছেন।” তবে কেজরীর বক্তব্য, লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের জন্যই তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তা ঠিক নয়। পদত্যাগের পর থেকেই তিনি দিল্লিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু ভোট হয়নি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরীবালের ইস্তফার প্রসঙ্গ আজ উঠে এসেছে সনিয়ার মুখেও। ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে ত্রিশঙ্কু ফলের জেরে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে আপের পাশে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। সেই কথা মনে করিয়ে সনিয়া বলেন, “ওরা বলেছিল দিল্লির উন্নতি করবে। কিন্তু সরকারই চালাতে পারল না, পালিয়ে গেল।” কংগ্রেস সভানেত্রীর প্রশ্ন, “ওরা কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করল না? মানুষের জন্য সস্তায় বিদ্যুৎ আর জলের ব্যবস্থা হল না কেন?” বিজেপির দিকে আঙুল তুলে সনিয়া বলেন, “দিল্লিতে ভোট পিছোনোর জন্য দায়ী বিজেপি। রাষ্ট্রপতি শাসনের নামে এখানে তারাই শাসন চালিয়েছে।”
ইউপিএ জমানার বিভিন্ন প্রকল্প দুর্বল করে দিয়ে মোদী সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন সনিয়া। তার কথায়, খাদ্য সুরক্ষা আইনে মোদী সরকার এমন কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে যাতে, ৬৭% মানুষের পরিবর্তে উপকৃত হবেন মাত্র ৪০% মানুষ। এ ছাড়াও তার প্রশ্ন, “জমি অধিগ্রহণ আইন আমরা কেন এনেছিলাম? কৃষকের জমি জোর করে কেউ যাতে নিয়ে না নেয়। আর মোদী সরকার কী করেছে? অর্ডিন্যান্স এনে এমন পথ খুলে দিয়েছে যাতে যে কেউ জমি দখল করতে পারে।” মোদী অবশ্য এ সবে কান না দিয়ে তুলে ধরেছেন নিজের সাফল্যের নজির। বলেছেন, আগে কোনও গরিব মানুষকে ব্যাঙ্কে দেখা যেত না। জন ধন যোজনায় যা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি বার্তা দিয়েছেন, দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উন্নয়ন প্রয়োজন পূর্বাঞ্চলেরও। শুধুমাত্র কিছু অংশে উন্নয়ন হলে দেশ এগোতে পারবে না।
মোদীর ভাগ্যে দিল্লিতেও কি হাওয়া কাড়বে বিজেপি, সবার নজর সে দিকেই।