“সবুজ শ্যামলে, পাহাড় কন্দরে এই ত্রিপুরা প্রকৃতির উজার করা আশীর্বাদে কৃত্তিম রং ছাড়াই দারুন গ্ল্যামারাস, সুন্দরী ত্রিপুরার পাহাড় আর প্রকৃতির কোলে যে সব উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন তাদের জীবনের রোজনামচা সাবলীন আর স্বচ্ছন্দের চাইতে অনেক কঠিন। রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকার থেকে শুরু করে TTAADC-র ক্ষমতায় যারা আসীন তাদের কথার এই রাজ্যের বিশেষ করে প্রত্যন্ত পাহাড়ের মানুষদের জীবনের লড়াইয়ে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, কর্মসংস্থান সহ সর্বব্যাপী উন্নয়নে কসুর করেনি ক্ষমতাসীন সরকার। জীবনের অবস্থানের অংক কষতে শুরু করে দিয়েছেন TTAADC অঞ্চলের মানুষ। ভোটের ঢাকের শব্দ শোনা না গেলেও পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ADC ভোটের, রাজ্য নির্বাচন কমিশন ADC ভোট নিয়ে ব্যস্ততার প্রহর অতিক্রম করছে, আরো একটা ভোটের জন্য তৈরী হচ্ছে ADC-র ভোটাররা, ভোটের ঢাক বেজে উঠার প্রাকমুহূর্তে “নিউজ আপডেট অব ত্রিপুরা ডট কম”-এর “কথায় কথায়” ডেস্কে তুলে ধরা হচ্ছে TTAADC-র মুখ্য কার্য নির্বাহী সদস্য ডঃ রণজিৎ দেববর্মার একান্ত সাক্ষাৎকার।
TTAADC-র মুখ্য কার্য নির্বাহী সদস্য ডঃ রণজিৎ দেববর্মার সাক্ষাৎকার নিতে খুমলুং যেতে যেতে আমি আর শান্তনু দু’জনেই মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম সবুজের সমারোহে, ঘড়ির দিকে চোখ রেখে শান্তনুর বাইকের গতি বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল কারন সাক্ষাৎকারের জন্য সময় প্রায় অতিক্রান্ত হচ্ছিল। TTAADC-র জনতার প্রতিনিধিরা যেখানে বসে কাজ করেন সেখানে পৌঁছে ঘড়িতে দেখলাম ১১টা ৪০মিনিট, নিয়মের প্রতিপালন শেষে অপেক্ষা যার জন্যে, বলা হল একটু অপেক্ষা করতে, দেখলাম অনেকেই এসেছেন কাগজপত্র নিয়ে। শুনতে পেলাম ডঃ দেববর্মার ঘরের সশব্দ বেল – একজন বললেন স্যার ডাকছেন। অনুমতি নিয়ে TTAADC-র মুখ্য কার্য নির্বাহী সদস্য ডঃ রণজিৎ দেববর্মার রুমে প্রবেশ করেই দেখলাম টেবিলে কাগজের স্তুপ নিজেই গুছিয়ে স্ট্রেপলার মারছেন, বসতে বললেন। খবরাখবর নিলেন, “নিউজ আপডেট অব ত্রিপুরা ডট কম”-এর যাত্রা শুরুর দিনে প্রেসক্লাবে তথ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহার উদ্বোধনের ছবিগলোও আগ্রহের সঙ্গে দেখে বললেন – কি ব্যাপারে সাক্ষাৎকার?
কি কথা হয়েছিল এবার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
প্রশ্নঃ- বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়ে আপনার অভিমত কি?
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- রাজ্যের রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়ে বললেন- CPI(M),গনমুক্তি পরিষদের সংঘঠনের ব্যাপক বিস্তৃতি হচ্ছে। রাজ্য সরকার তথা ADC-র জনকল্যানমূলক কাজে মানুষ সামিল হচ্ছেন উন্নয়ন অগ্রগতির লড়াইয়ে। বিরোধীরা যতই অপপ্রচার করুক, মানুষ শান্তি, সম্প্রীতিতে চিড় ধরাতে পারবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, রাস্তাঘাট সহ সর্বস্তরে যে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে মানুষ সন্তুষ্ট হয়ে দলে দলে সামিল হচ্ছে লাল ঝান্ডার নীচে।
ককবরক ভাষাকে রাজ্য ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার, প্রচার প্রসারে ব্যবস্থা হচ্ছে, স্নাতকস্তরের পঠন পাঠনে ককবরক ভাষার প্রবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে, Vice Chancellor আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু ককবরক নয় অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠীর ভাষা সাহিত্য থেকে ফোক মিউজিকের ২০১৬ তে বের হতে যাওয়া ব্যাচ নিয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে।
এবার বলি রাজনীতির ময়দানের কথা – IPFT তিপ্রাল্যান্ডের নামে যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে দিনে দিনে বিভ্রান্তির আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ হচ্ছে মানুষের কাছে। রাজন্য শাসনেও ত্রিপুরায় ঐক্য সম্প্রতি ছিল, স্বার্থান্বেষীদের অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। রাজ্যের মানুষ মিলনের মধ্য দিয়েই উন্নয়নের পথে হাঁটছে, এ মুহূর্তে ত্রিপুরার রাজনীতি হচ্ছে বামফ্রন্টের নেতৃত্বে লড়াই সংগ্রামে অধিকার আদায়।
প্রশ্নঃ- মানুষের ঐক্য আর সংহতিতেই প্রকৃত উন্নয়ন আসবে বুঝলাম – তাঁর জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি?
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- আমি কিন্তু মানুষ বলতে রাজ্যের সর্বস্তরের জনগণের কথা বলছি। শুধু উপজাতি নয় তার সঙ্গে বাঙ্গালী সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের সকলের সংহতি মানেই শান্তি আর যেখানে শান্তি সেখানে সবশেষ কথা সবার অগ্রগতি।
প্রশ্নঃ- ADC অঞ্চলের মানুষদের দূর্দশা লাঘবে পরিকল্পনার উত্তরে বললেন-
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- মানুষের সব দুঃখ দূর হয়েছে বলছি না, তবে ADC এলাকার দূরদূরান্তে বসবাসরতদের উন্নতিতে গুচ্ছ গ্রামের আওতায় উন্নয়ন শুরু হয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, মাথা গোঁজার ঘর, বাস্তু ভিটা সহ অন্যান্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইতিমধ্যেই ৫ হাজার বেনিফিসিরীকে জমির পাট্টা, ফল, মৎস্য, বনায়ন সহ অন্যান্য চাষাবাদে আর্থিক স্বয়ম্ভরতার সাহায্য দেয়া হয়েছে। আগামী দিনে আরো বেনিফিসিরীদের সাহায্য অব্যাহত থাকবে। ২০১৫-২০১৬ তে ৬ হাজার জমির পাট্টা দিয়ে রাবার, চা, মৎস্য, কৃষিতে সাহায্যের প্রোজেক্ট তৈরী হচ্ছে ভিলেজ কমিটির তৃণমূল স্তরে।
প্রশ্নঃ- সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে ভাইরাল আক্রমনে মৃত্যু নিয়ে – অকপটে স্বীকার করেছেন মৃত্যুর জন্য অন্ধ বিশ্বাসের কথা, পাশাপাশি বলেছেন সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস সম্পর্কে –
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- পাহাড়ের মানুষদের মধ্যে এখনও প্রাচীন কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস দূর হয়নি সত্যকথা। এখনও রোগব্যাধিতে ওঝা, ঝাড়ফুক, পুজা পার্বণ, মুরগী বলি হয় রোগ তাড়াতে। তবে আমরা পাহাড়ের মানুষদের সচেতন করার প্রয়াস হিসেবে সেমিনার, আলোচনা, প্রচার সহ সবাইকে বলেছি রোগ হলে ওঝা না, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সর্বাগ্রে যেতে, তারপর সেখানে না হলে শহরের উন্নত চিকিৎসা নিতে। তবে অন্ধ বিশ্বাস দূর হচ্ছে ধীরে ধীরে।
প্রশ্নঃ- বিশেষ করে উপজাতি যুব সম্প্রদায়ের কাছে আপনার বার্তা কি?
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- যুবক, যুবতী, তরুন, তরুনী সকলের কাছে আমার আহ্বান শিক্ষার আলোকে জীবনের পরিবর্তন করতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে। এখনও সমাজে যে সমস্ত কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে তা দূর করার কাজে ভূমিকা রাখতে হবে সব সম্প্রদায়কে, রাজনৈতিক ভাবে যুব সমাজকে সচেতন সতর্ক হয়ে বিভ্রান্তি, ঐক্য যারা বিনষ্ট করতে চায় তাঁর বিরুদ্ধে বেছে নিতে হবে সঠিক রাস্তা। তবে আমি বিশ্বাস করি উপজাতি যুব সম্প্রদায় সমস্ত বিভ্রান্তি কাটিয়ে আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছে।
প্রশ্নঃ- এখনো যারা বিপথে রয়েছে তাদের মূলশ্রোতে এসে রাজ্যের অগ্রগতির পথে অংশ নেয়ার কথায় বললেন –
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- দেখুন যারা বিপথে গিয়ে স্বাধীন ত্রিপুরার স্বপ্ন দেখেছিল তার পেছনে রাজনীতির দূরভিসন্ধি ছিল। এ রাজ্যের সকল অংশের শান্তি প্রিয় মানুষ স্বাধীন ত্রিপুরার স্বপ্নকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে রুখে দিয়েছে। এখনো যারা বিপথে রয়েছে আমি আহ্বান রাখছি ভুলপথ, ষড়যন্ত্র বিভ্রান্তি না হয়ে ফিরে আসুন মূলশ্রোতে, সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকারী সাহায্যের সহায়তা নিয়ে জীবনের আনন্দ উপভোগ করুন – শেষ হোক অন্ধকারের জীবন।
TTAADC-র মুখ্য কার্য নির্বাহী সদস্য ডঃ রণজিৎ দেববর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য শান্তি আর অগ্রগতির কথা যখনই বলেছেন তখন নির্দিষ্ট ভাবে কোনো একটা জাতি গোষ্ঠির কথা না বলে বারবার বলেছেন সর্বঅংশের সব সম্প্রদায়ের কথা – তাঁর নির্যাস হিসেবে মনে হয়েছে আসন্ন ADC ভোটে এবারও বোধহয় বামফ্রন্টের হাতিয়ার হতে যাচ্ছে শান্তি, ঐক্য আর উন্নয়ন।
প্রশ্নঃ- ADC ভোট, জয়-পরাজয়, বর্তমান প্রশাসনিক ব্যস্ততা, কবে নাগাদ ভোট হতে পারে – এসব নিয়ে প্রশ্ন করতেই স্মিত হাসিতে প্রত্যয়ের সঙ্গে প্রথমেই বললেন –
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- TTAADC তে ২০১০ সালে যা হয়েছিল এবারও তাঁর পরিবর্তন হবেনা, ২০১৫ তে আমরাই মানুষের রায়ে ২৮ খানা আসন জয় করব। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটের কাজকর্ম নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ত রয়েছে, খুব সম্ভবত মে মাসেই ADC নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্নঃ- ADC নির্বাচনে জয় নিয়ে এত প্রত্যয়ী কেন ?
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- মানুষের পাশে থেকে সীমিত ক্ষমতায় কাজ করেছি, সার্বিক কাজের হিসেবেই মানুষ আমাদের ভোট দেবেন- বিশ্বাস করি।
প্রশ্নঃ- ADC তে ঘোটালা কিংবা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিরুপ কিংবা ঝাঁঝালো উত্তর আশা করেছিলাম, হাসতে হাসতে উত্তরে বললেন –
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- ADC তে আর্থিক কেলেঙ্কারীর সুযোগ নেই, প্রতিটি দপ্তরেই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে, তবে নয়ছয়ে কেউ যদি যুক্ত থাকে প্রমান হলে কঠোর শাস্থির মুখোমুখী হতে হবে। মানুষের কাজে একটাকা চুরিও বরদাস্ত করা হবে না।
প্রশ্নঃ- পাহাড়ে শিক্ষকতার কাজে প্রকিস প্রথার প্রশ্নে ADC-র CEM বাস্তবে প্রকিস প্রথা যে চলছে ফাঁকি দিয়ে তা অস্বীকার করেননি, পবিত্র পেশায় এই রোগ নিমূলে ADC প্রশাসনের যুতসই পদক্ষেপ জানাতে গিয়ে বললেন –
উত্তরে ডঃ দেববর্মাঃ- শিক্ষক হচ্ছে সমাজের মেরুদন্ড, শিক্ষকদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষাদানে ফাঁকি একেবারেই কাম্য নয়। কোনো শিক্ষক স্থলে গেলেন না কিন্তু দেখা গেল হাজিরা খাতায় সই রয়েছে – যদি প্রমান হয় তবে দু’জনের বিরুদ্ধেই F.I.Rকরা হবে। এই ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ডঃ রণজিৎ দেববর্মা।
খুমলুং-এ ADC-র সদর দপ্তরে CEM ডঃ রণজিৎ দেববর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দূরদূরান্তের অনেক মানুষ অপেক্ষা করছিলেন যখন আমরা ঢুকছিলাম, ভাবলাম প্রশ্ন পর্ব দীর্ঘায়িত হওয়া মানে অপেক্ষমান মানুষদের বিলম্ব হবে –
সবশেষ প্রশ্নঃ- ADC কে কোনরূপে দেখলে আপনার স্বপ্নপূরন হবে ? এবার সশব্দে হাসতে হাসতে CEM বললেন –
উত্তর:- আসলে স্বপ্ন বড় কঠিন, স্বপ্নের যেমন শেষ নেই মানুষের চাহিদারও শেষ নেই, যেমন একবাড়ীতে দু’জনের চাকুরী হলে আরো দু’জন চাকুরী চায়। মানুষ যত পায়, ততই চায়। তবে সব স্বপ্ন আমরা পূরন করেছি বলছি না, বহু কাজ বাকী অনেক কাজও হয়েছে। আশা প্রত্যাশা পূরনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শান্তির বাতাবরনে অগ্রগতি উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। আজকে এ পর্যন্তই থাক – কথা হবে আগামীতে।
চা পানের অনুরোধ করলেন ADC-র CEM, আসলে এই অপেক্ষাতেই ছিলাম আমি আর শান্তনু, চা পান করে Exit পর্বের সই শেষে চললাম গন্তব্যে।
সাক্ষাৎকার গ্রহনে দেবজীৎ চক্রবর্তী।