তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক ।। সোমবার রাতে প্রায় অর্ধকিলোমিটার ব্যাসের অতিকায় এক গ্রহাণু পৃথিবীকে অতিক্রম করবে। এখন পর্যন্ত এত কাছ দিয়ে কোনো গুহাণু পৃথিবীকে পেরিয়ে যায়নি। এ খবরে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কেননা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, অতিকায় এ গ্রহাণু পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করবে না।
২০০৪বিএল৮৬ নামের গ্রহাণুটি প্রায় সাড়ে সাত লাখ মাইল বা ১২ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে পৃথিবীকে অতিক্রম করবে। যা পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের প্রায় তিন গুণ। প্রায় ১১ বছর আগে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্য থেকে জ্যোতির্বিদ লিনকন গ্রহাণুটি আবিষ্কার করেন। এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণে পৌনে দুই বছর সময় নেয়।
ইএসটি সময়ের আজ রাত আটটা থেকে একটার মধ্যে আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে এ অতিক্রমণ দেখা যাবে। এরইমধ্যে পেশাদার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদরা গ্রহাণুটির অতিক্রমণ দেখার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এজন্য ছোট আকারের দূরবীক্ষণ যন্ত্র হলেই চলবে বলে জানিয়েছে নাসা।
নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির জ্যোতির্বিদ ডন ইয়োম্যানস গণমাধ্যমকে জানান, এ গ্রহাণুটির অতিক্রমণ অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। বরং পৃথিবীর এত কাছ দিয়ে অতিকায় একটি গ্রহাণু অতিক্রমের ফলে অনেক কিছু শেখা ও দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পৃথিবীকে অতিক্রমকালে রাডার দিয়ে গ্রহাণুটির উপরিভাগের মানচিত্র আঁকার পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে অন্যান্য গ্রহাণুর গঠন, আকার এবং নির্দিষ্ট নক্ষত্রকে ঘিরে এর পরিভ্রমণ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির আরেক জ্যোতির্বিদ ল্যান্স বেনার বলেন, সত্যি বলতে কি আমরা আসলে গ্রহাণু সম্পর্কে এখনো কিছুই জানি না। তাই অতিকায় গ্রহাণুটির অতিক্রমণ অনেক বিস্ময় নিয়ে আসবে বলেই মনে হচ্ছে।
পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ ধরনের অন্তত ১১ হাজার গ্রহাণুকে পর্যবেক্ষণ করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এসব গ্রহাণুর মধ্যে আধা মাইল বা তার বেশি ব্যাসের ৯৫ শতাংশ গ্রহাণুরই পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে বিশাল আকারের গ্রহাণুর আঘাতেই ডায়নোসর ও অনেক অতিকায় প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল।
প্রায় দুই বছর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক শহরের কাছে এর চেয়ে অনেক ছোট এক গ্রহাণুর পতন ঘটে। ১৭ মিটার বা ৫৫ ফুট ব্যাসের এবং ৭ থেকে ১০ হাজার টন ওজনের ওই গ্রহাণুটি প্রায় ৩০টি পারমাণবিক বোমার সমান শক্তি নিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছিল। এর আলোকচ্ছটায় কয়েক মুহূর্তের জন্য সূর্যের আলো ম্লান হয়ে যায়।
বিস্ফোরণের পর এটি যেখানে পড়েছিল সে স্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেও বসতবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়। আহত হয় প্রায় ১ হাজার ৬শ’ মানুষ। আজকের গ্রহাণুটি এর থেকে অনেক দূর দিয়ে পৃথিবীকে অতিক্রম করবে। এরপরও বিজ্ঞানীরা সার্বক্ষণিকভাবে এর গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন।
নাসার ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন সাইটে এর সর্বশেষ অগ্রগতির খবরাখবর দেয়া হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স