দেবজিত চক্রবর্তী, আগরতলা, ১০ ফেব্রুয়ারী ।। ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ মরনে তাহাই তুমি করে গেলে দান’ – এই পংক্তি ব্যবহার হয় মৃত্যুর সম্পৃক্ততায়, কিন্তু যাঁরা মানুষের তরে জীবন দানকেই পাথেয় করে ইতি টানেন তাঁদের প্রয়াণের শেষেই বলা হয় যে প্রাণ ছিল তব কাছে সবচাইতে মূল্যবান মানুষের তবে সেই প্রাণ দান করে গেলে অকাতরে, অবলীলায়।
প্রয়াত অনিল সরকারের নতুন করে পরিচিতির প্রয়োজন নেই – মন্ত্রিত্ব থেকে শুরু করে দলীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন প্রয়াত অনিল সরকার। অসম্ভব দক্ষতা ছিল ভাষার উপর – মঞ্চের ভাষনে সুললিত ভাষার বিন্যাসে আপন শৈলীতে হাততালি কুড়োতেন যে মানুষটা সেই হাতেই ফুল আর অশ্রুসজল চোখে শেষ শ্রদ্ধার লম্বা লাইনের প্রমান রাজনীতির গন্ডি ছাড়িয়ে বহু মানুষের হৃদয়ে ঠাই করে নিয়েছিলেন প্রয়াত অনিল সরকার।
সোমবার রাতেই অনিল সরকারের মৃত্যু সংবাদ জেনেগিয়েছিলেন রাজ্যের মানুষ, শুরু হয়েছিল প্রতীক্ষা দিল্লী থেকে দেহ কখন এসে পৌঁছুয় রাজ্যে, বেসরকারী বিমানে দিল্লী থেকে মরদেহ নিয়ে আগরতলায় পৌঁছিয়ে সকাল সোয়া দশটা নাগাদ। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত অনিল সরকারের মরদেহ নিয়ে শহর অভিমুখের যাত্রায় বাইকে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে সঙ্গ দেয় দলীয় কর্মীরা।
প্রয়াত অনিল সরকারের মরদেহ প্রথমে পৌঁছুয় বিধানসভা ভবনে, পথে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারন জন পুস্পার্ঘ্য অর্পনে শ্রদ্ধা জানায়। প্রয়াত অনিল সরকারের মরদেহ ধলেশ্বরস্থিত বাড়ীতে পৌঁছুলে আত্মীয় পরিজন এলাকার মানুষের আর্ত ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে প্রয়াত অনিল সরকারের নশ্বর দেহে পুস্পার্ঘ্য অর্পন করেন তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের কর্মীরা, সেখানেই ফুলের মালায় শ্রদ্ধা জানান বর্তমান তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, ডেইলি দেশের কথার সম্পাদক গৌতম দাশ, বাংলাদেশ ভিসা অফিসের আধিকারীকরা সহ সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের জ্ঞানীগুনীরা প্রয়াত অনিল সরকারের প্রতি সন্মান জানাতে সমবেত কন্ঠে ‘আগুনের পরশমনি’র সুর ধ্বনিত হয়।
প্রয়াত অনিল সরকারের মরদেহ বাহী শকট বিভিন্ন স্থান হয়ে পৌঁছে যায় মেলারমাঠের সদর কার্যালয়ের সামনে, যেখানে অসংখ্য দলীয় সমর্থক সাধারন মানুষ আগে থেকেই ভীড় জমিয়েছিলেন – কেউ শেষ দেখার আশায় আবার অনেকেই পুস্পস্তবকে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। মেলারমাঠ প্রয়াকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের স্থানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, CPI(M)-র রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর, এ ডি সি’র CEM ডঃ রণজিৎ দেববর্মা, মেয়র ডঃ প্রফুল্লজিৎ সিনহা সহ আরো অনেক বিশিষ্ট মানুষ, উপস্থিত ছিলেন সি পি আই, ফরোয়ার্ড ব্লক, আর এস পি’র নেতৃবৃন্দ। মেলারমাঠে প্রয়াত অনিল সরকারের মরদেহকে দলীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়।