আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। মিকার পেছনে অঢেল টাকা খরচ করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন এক প্রেমিক। তিনি হন্ডুরাসের এক রাজনীতিবিদ। প্রেমিকার পেছনে এ বিপুল অঙ্কের টাকা এ রাজনীতিবিদ নিজের পকেট থেকে খরচ করেননি। তা তিনি খরচ করেছেন সরকারি টাকা থেকে।
চিলির প্লাটিনাম ক্লাবে রাজনীতিবিদ মারিও জেলায়ার সঙ্গে পরিচয় হয় নাটালিয়া সিউফার্দি নামে এক নারীর। মারির বয়স তখন ৪৬। আর নাটালিয়ার ২৮। এই সাক্ষাতের সূত্র ধরেই মারি নাটায়িার প্রেমে পড়ে যান। আর এ কারণে সুন্দরীর পেছনে তিনি ওড়াতে থাকেন সরকারি অর্থ, গাড়ি, বাড়ি, স্বর্ণালংকার।
সব মিলিয়ে মারি নাটালিয়ার পেছনে ব্যয় করেছেন ৩০ লাখ পাউন্ডেরও বেশি। বিবাহিত মারিওর তিন সন্তান রয়েছে। নাটালিয়ার প্রেমে পড়ার পর সে-ই হয়ে ওঠে তার প্রধান মনোযোগ।
সোশ্যাল সিকিউরিটি তহবিল থেকে অর্থ চুরি করে রক্ষিতাকে কিনে দিয়েছেন দুটি অ্যাপার্টমেন্ট, সমুদ্র সৈকতে একটি বাড়ি আর দুটি এসইউভি গাড়ি। পারফিউম, ঘড়ি, ব্যাগসহ নানা উপহার তো রয়েছেই। শুধু এতেই ক্ষান্ত হননি। প্রতি মাসে নাটালিয়াকে ৩ থেকে ৪ হাজার পাউন্ড অর্থও দিতেন।
অভিযুক্ত হওয়ার আগে মারিও হন্ডুরান ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল সিকিউরিটির পরিচালক ছিলেন। চিলিতে এক ব্যবসায়িক সফরে নাটালিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর তাকে নানা উপহারে সিক্ত করেন। চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোর প্লাটিনাম ক্লাব পতিতালয় ছাড়তেও নাটালিয়াকে সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।
সেখানে হাই-ক্লাস কলগার্ল হিসেবে ছিলেন নাটালিয়া। ঘণ্টাপ্রতি মক্কেলদের কাছ থেকে নিতেন ৩০০ পাউন্ড। একই সময় স্ট্রিপার হিসেবেও কাজ করতেন। নাটালিয়া গণমাধ্যমকে জানান, মারি খুবই আকর্ষণীয়। তাকে সন্দেহ করার কোনো কারণই ছিল না। আর তাই নাটালিয়া জানতেন যে টাকা তার পেছনে খরচ করা হচ্ছে তা মারির।
তিনি গণমাধ্যমকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, সে যে চুরি করছে তা আমি কিভাবে জানবো? আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আর যখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি তখন ওই মানুষটির সঙ্গে আমার চলে যাওয়াটা যৌক্তিক ছিল। কেননা আমি ভেবেছিলাম তাকে আমি চিনতাম।
নাটালিয়ার সঙ্গে প্রথমদিন ১২ হাজার পাউন্ড খরচ করেন মারিও। এরপর প্রতি মাসে এক সপ্তাহ করে নাটালিয়ার সঙ্গে সময় অতিবাহিত করতেন। স্ত্রী মিশেল আলেজান্দ্রা ফ্লোরেস বোর্জাস (৪২) আর তিন সন্তানকে ক্রমাগত মিথ্যা বলতেন মারি। জানাতেন, চিলিতে তিনি ব্যবসার কাজে যাচ্ছেন।
সফলতাপূর্ণ কর্মজীবনে সম্মানজনক অবস্থান ছিল মারিওর। সেখান থেকে সরকারি অর্থ চুরি করে প্রেমিকার পেছনে ব্যয় করার ঘটনা সামনে আসায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতক পাস করার পর তিনি অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।
সামরিক হাসপাতালেও কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে হন্ডুরাসের নির্বাচনে বিজয়ী অংশের সমর্থক ছিলেন। এরপর ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল সিকিউরিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। সংস্থাটি স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করে যার বার্ষিক বাজেট ১২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড।
অথচ তারা জেনে বিস্মিত যে, তাদের সেই পরিচিত মারিও এ অর্থ থেকে চুরি করে প্রেমিকার ওপর উপহার বর্ষণ করছেন। পুলিশ জানায়, একদিন মারিওর ফোনকল পাওয়ার পর নাটালিয়া প্রথম বুঝতে পারেন, কোথাও একটা গড়বড় আছে। নাটালিয়া জানান, মারি তাকে ফোন করে বলে তাকে ক্ষমা করে দিতে। আমি নাকি একদিন তাকে বুঝতে পারবো। যা হয়েছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সে জানায়, আর কখনো দেখা হবে না। নাটালিয়া নিজেও এখন দুর্নীতি তদন্তের মুখে।
তিনি জানান, মারি বলেছিল সে আমার জীবন পাল্টে দেবে। আমার কাজ ছাড়তে সাহায্য করবে আর আমরা একসঙ্গে সংসার গড়ে তুলবো। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম আর তাকে ভালবেসে ফেলি। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে চিলিতে এসে আমার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করে সে। এরপর সবকিছু রূপকথার মতো মনে হয়েছিল।
তদন্তের মুখে দাঁড়িয়ে নাটালিয়া বলছেন, ওই অর্থ যে চুরি হয়েছিল হন্ডুরাসের কর্তৃপক্ষও যদি তা বুঝতে না পেরে থাকে তাহলে এটা তার জন্য জানা অসম্ভব ছিল।
তদন্ত কর্মকর্তারা ২০১৩ সালে মারিওর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। তাদের অনুমান আনুমানিক ৩১ লাখ পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে যে অর্থ জনগণের চিকিৎসা খাতে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল।