ফোনও ধরেননি মোদি

mdজাতীয় ডেস্ক ।। ঘটনা ২০১৪ সালের ১৬ মে, যেদিন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছিল, সেদিন সকাল থেকে নিজের ঘরে একলা ধ্যান করছিলেন।
সেখানে না ছিল কোনো টিভি, না কোনো রেডিও। এমনকী দুপুর ১২টার আগে ফোনও ধরেননি নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী মোদির ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কিত এমনই অনেক অজানা ছোট ছোট তথ্য উঠে এসেছে সদ্য প্রকাশিত বই ‌‘দ্য মোদি এফেক্ট : ইনসাইড নরেন্দ্র মোদি’জ ক্যাম্পেন টু ট্রান্সফর্ম ইন্ডিয়া’তে। এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবিপি।
লেখক লান্স প্রাইস, যিনি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মিডিয়া উপদেষ্টা। এখানে লেখক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যেমন ইন্টারভিউ নিয়েছেন, তেমনই পীযুষ গয়াল, প্রকাশ জাভড়েকর, স্মৃতি ইরানিসহ কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের বিভিন্ন সদস্যদেরও কথোপকথন নথিভুক্ত করেছেন।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যেদিন ঘোষণা হয়েছিল, সেদিন মোদির জীবনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। কেমন কাটিয়েছিলেন তিনি সেই সকালটা?
বই অনুযায়ী, লেখককে মোদি বলেছেন, সেদিন সকালে যখন গণনা চলছিল, আমি একদম একলা ছিলাম। টিভি দেখিনি। নির্বাচনের ধকলকে সামলাতে সেদিন সকাল থেকে নিজের ঘরে ধ্যান করছিলাম। দুপুর ১২টার আগে কারো সঙ্গে ফোনে কথাও বলিনি।
মোদি যোগ করেন, আমার মনে আছে, প্রথম ফোন পেয়েছিলাম রাজনাথ সিংহের কাছ থেকে। তিনিই আমাকে ফলাফলের খবরা-খবর দেন। তিনিই জানান, নির্বাচনের ভবিতব্য নিশ্চিত হয়ে গেছে এবং আমরা নির্বাচন বিপুলভাবে জিতছি।
আবার বিজেপির সঙ্গে বড় কর্পোরেট ডোনরদের (অর্থ প্রদানকারী সংস্থা) সম্পর্ক নিয়ে বইতে আলোচনা করা হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে যে, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় মোদি নাকি কর্পোরেটদের খরচায় বিমানে চড়েছেন।
এর উত্তরে মোদি জানিয়েছেন, মাথায় রাখুন, প্রয়োজন পড়লে আমি সাইকেল ভাড়া করেও নির্বাচনী প্রচার করতে পারতাম। বিমানে চড়েছি কারণ অল্প সময়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে হয়েছে। দেশটাও তো কম বড় নয়। মোদি জানিয়ে দেন, তার বিমান ভাড়ার পুরোটাই দল বহন করেছে।
কবে তার মনে হয়েছে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১২ সালে গুজরাত নির্বাচন জেতার পরই তার মনে হয়েছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন।
তবে এর জন্য তিনি যে কোনোদিন দলের মধ্যে লবি করেননি, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদি। তিনি বলেছেন, দলের থেকে কে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলো সেই নিয়ে আমি কখনই উৎসাহী ছিলাম না।
বইতে মোদি বলেছেন, সংবাদমাধ্যমকে কী করে সামলানো যায়, সেই নিয়েও আগাম নীল-নকশা তৈরি করে রেখেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম যে, প্রচার চলাকালীন মিডিয়ার সামনে সচারচর আসব না।
মোদি বলেন, একটা শূন্যস্থান তৈরি করতে চেয়েছিলাম ইচ্ছাকৃতভাবেই, যাতে আমি অন্যের (মিডিয়ার) মনোযোগ পাই। একেবারে নির্বাচনী প্রচারের শেষ লগ্নে পৌঁছে প্রথমে হিন্দি ও পরে ইংরেজি চ্যানেলকে সাক্ষাত্কার দিই।
মোদি জানান, তিনি তার বার্তা ভীষণ হিসেব করে ব্যবহার করতেন। সবকিছু একেবারে খোলসা করতেন না। এর ফলে জনগণের মধ্যে তাকে ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
শুধু এ তথ্যই নয়, কেজরীবালের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াই নিয়েও বইতে মুখ খুলেছেন মোদি। বারাণসী থেকে মোদির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেযার পর কেজরী জানিয়েছিলেন, এবার রাজনৈতিক ভূকম্পন হবে।
মোদি সেই সময় কোনো জবাব দেননি। দীর্ঘদিন পর নীরব থাকার আসল কারণ বইতে খোলসা করেছেন মোদি। কটাক্ষের সুরে জানিয়েছেন, তার মনে হয়েছিল, কেজরীর পিছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। কারণ কেজরী হলেন একটি শহরের সামান্য নেতা মাত্র। মোদির এ-ও মনে হয়েছিল, কেজরীর চেয়ে ধারে ও ভারে অনেক ভারো নেতা অন্যান্য বিরোধী দলে ছিল। বইতে মোদি বলেছেন, আমার নীরবতাই আমার শক্তি।
বইয়ের লেখক লান্স প্রাইস জানিয়েছেন, বইয়ের স্বার্থে মোদি তাকে অভূতপূর্ব প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। তিনি জানান, তিনি মোদির সঙ্গে চারবার দেখা করেছেন। প্রত্যেকবার তাদের সাক্ষাৎ এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছিল।
প্রাইস জানান, পুরো সাক্ষাত্কার পর্বে শুদ্ধ ইংবেজিতেই কথা বলেছেন মোদি। তবে গোধরা নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করেননি তিনি। শুধু জানিয়ে দেন, অনেক বলা হয়েছে আর নয়। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রায় পড়লেই সব জানা যাবে, মন্তব্য মোদির।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*