গোপাল সিং, খোয়াই, ২১ মে || খোয়াই জেলার পহড়মুড়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় খোয়াই নদীতে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মৌটুসী দাস (১২), অঙ্কুশ নমঃ (৭) এবং খুশি রায় (১০) নামে তিন অবুঝ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, রবিবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে এগারোটা নাগাদ এলাকার বাসিন্দা গোপাল দাস নিজের দুই মেয়ের ঘরের নাতি এবং নাতনি সহ এলাকার অন্য দুটি শিশু সহ পহর মুড়া ব্রিজ সংলগ্ন খোয়াই নদীতে স্নান করতে যান। আর তখনই খোয়াই নদীর জলে চারটি শিশু স্নান করতে গিয়ে ডুবে যায়। এর মধ্যে একটি শিশুকে বাঁচাতে পারলেও বাকি তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। জানা যায়, গোপাল দাসের ছেলের ঘরের কোন এক সন্তানের শনিবার বর্তের অনুষ্ঠান ছিল। তাকে কেন্দ্র করে গোপাল দাসের দুই মেয়ের পরিবারের লোকেরা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসে। এরমধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দেন বিশালগড এলাকার বাসিন্দা বাপি নমঃ এর সাথে। এই বাপি নমঃ এর সাত বছরের ছেলে সপ্তদ্বীপ নমঃ, যার জলে ডুবে মৃত্যু হয়। অন্যদিকে আরেক মেয়েক বিয়ে দেন মোহর ছড়া নিবাসী মহাপ্রভু দাসের সাথে। উনার ১২ বছরের মেয়ে মৌটুসী দাসেরও জলে ডুবে মৃত্যু হয়। পাশাপাশি দাদু গোপাল দাসের বাড়ির পাশের রঞ্জিত রায়ের নয় বছরের মেয়ে বাবলি রায়েরও জলে ডুবে মৃত্যু হয়। তিন মৃত শিশুর সাথে খোয়াই নদীর জলে নেমেছিল এলাকারই অপর ছয় বছরের শিশু অয়ন দাস। যদিও অয়ন দাসকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও বাকি তিন শিশুকে উদ্ধার করা যায়নি। জলে ডোবার ঘন্টাখানেক পর বাবলি রায় এবং সপ্তদ্বীপ নমঃকে এলাকাবাসী নদী থেকে উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর দেড় ঘন্টা পর মৌটুসী দাসকে নদীর বোল্ডারের ভিতর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় খোয়াই জেলা হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের তিনজনকে মৃত বলে ঘোষণা করে। যদিও চিকিৎসক নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন শিশুদেরকে বাঁচাতে। কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই শিশুরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একসাথে তিনটি শিশুর মৃত্যুতে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং সেবিকারাও ব্যাপক মর্মাহত হয়ে পড়েন। গোপাল দাসের ছেলে রাজীব দাস হলো সপ্তদ্বীপ নমঃ ও মোটুসী দাসের মামা। ওরা মামার বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসে। মামা রাজীব দাস এক ভাগ্নি ও এক ভাগিনাকে হারালো, অন্যদিকে রাজীব দাসের দুই বোনও দুটি সন্তান হারালো।
শিশুগুলি যখন জলে ডুবে ছিল তখন এলাকার যুবকরা কয়েক ঘন্টা জলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করলেও তাদের বক্তব্য কিছু বালি মাফিয়া নদীর ওই এলাকা থেকে মোটরের সাহায্যে বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নদীর ওই স্থানটিতে জলে গভীরতা ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যায়। আর যার ফলে শিশুগুলি জলে নামতেই ডুবে গিয়ে মারা যায়। এলাকাবাসীর বক্তব্য বালি তোলার আগে স্থানটিতে এত পরিমাণ গর্ত ছিলনা যার ফলে ডুবন্ত শিশুদেরকে খুঁজতে গিয়ে উদ্ধারকারী দলের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছে। আর তাতে করে সময় বেশি লাগার কারণে শিশুগুলিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যায়নি।
এই ঘটনার পর শিশু গুলির আত্মীয় পরিজন যখন খোয়াই জেলা হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে কাঁদতে থাকে তখন হাসপাতালে পরিস্থিতি ছিল খুবই বেদনাদায়ক। অন্যদিকে মৃত শিশু গুলির মামার বাড়ির এলাকা জুড়ে আত্মীয় পরিজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শেষে মৃত তিনটি শিশুর ময়না তদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দিলে শিশুদেরকে নিয়ে যখন দাদুর বাড়িতে বা মামার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় বিকেলে ঐ এলাকার পরিবেশের দৃশ্য ছিল খুবই মর্মান্তিক যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খোয়াইবাসী কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। এমনকি একই সাথে আপন দুই বোনের সন্তানের মৃত্যু জলে ডুবে তাও শুনেনি। এই ঘটনা ছিল খোয়াইবাসীর জন্য এক বিরল ঘটনা। এই শিশুগুলির মৃত্যুর ঘটনায় খোয়াই মহাকুমার প্রত্যেকটি মানুষের মনে শোকের আবহ বইছে।
এই ঘটনায় সন্তানহারা পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীরভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সকল অভিভাবকদের কাছে আবেদন রেখেছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে শিশুদের প্রতি আরো একটু বেশি যত্নবান হওয়ার জন্য।