আইএস তাড়িয়ে লুটেরার ভূমিকায় শিয়া মিলিশিয়া

unআন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। রক্তক্ষয়ী এক দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আইএসের দখলমুক্ত হয়েছে ইরাকের তিকরিত শহর। কিন্তু সুদিন ফেরেনি সেখানকার বাসিন্দাদের। আইএস যোদ্ধাদের হাত থেকে মুক্ত করার পর গত বৃহস্পতিবার থেকেই শহরটিতে ব্যাপক হারে হত্যা ও লুটপাট শুরু করেছে তিকরিত মুক্ত করার অভিযানে অংশগ্রহণকারী শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা।
বিভিন্ন সূত্রে আসা খবরে নৃশংসতার যে নমুনা পাওয়া গেছে, তাতে আইএসযোদ্ধাদের সঙ্গে এসব লুটেরার তেমন কোনো ফারাক খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। আইএসমুক্ত তিকরিতে অনেকগুলো হত্যা ও লুটপাটের ঘটনা তাদের কাছে এসেছে।
রয়টার্সের দুই প্রতিনিধি তাদের প্রত্যক্ষ করা একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তিকরিতের সরকারি সদর দপ্তরের কাছে ফেডেরাল পুলিশের দুই সদস্য আইএসের এক সন্দেহভাজন যোদ্ধাকে আটক করে। উত্তেজিত একদল জনতার ইন্ধনে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ছুরি দিয়ে আটক ব্যক্তির ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং তার গলা কেটে ফেলে।
সালাউদ্দিন প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান আহমেদ আল-করিম বলেছেন, গত দুই দিনে শিয়া মিলিশিয়ারা শত শত বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং দোকানগুলোতে লুটপাট চালিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় তিনি শুক্রবার রাতে তিকরিত ছেড়ে অন্যখানে চলে গেছেন। এর আগে তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, চোখের সামনেই আমাদের শহরটা ভস্মীভূত হয়ে গেল, আমরা ঠেকাতেও পারলাম না।
গত বৃহস্পতিবার থেকে তিকরিতে ৪০০ বাড়ি এবং প্রায় ৫০০ দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বলে পার্লামেন্ট সদস্য মুতাশার আল-সামারাই জানিয়েছেন। এছাড়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, এমন অনেক যোদ্ধা কিভাবে আইএসযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে গর্বের সঙ্গে বর্ণনা করেছে।
তিকরিত নগরী পুনরুদ্ধারে চালানো অভিযানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। শুক্রবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের একটি তদন্তদল অভিযোগটি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে।
অ্যামনেস্টির একজন সিনিয়র উপদেষ্টা ডোনাটেলা রোভেরা বলেন, মার্চের প্রথমদিকে অভিযান চলাকালে স্থানীয় অনেক লোককে আটক করা হলেও এখন তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। একই সঙ্গে মিলিশিয়াদের অনেক বাসিন্দার ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট করে সেগুলোতে আগুন দেয়ার খবরও আমরা পেয়েছি।
আমেরিকার একজন সামরিক কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের হত্যাকান্ডসহ অন্য অভিযোগগুলো এখনো আমাদের কাছে অস্পষ্ট। তবে তিকরিতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইরাকি বাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইরাকি বাহিনীর এটা বোঝা প্রয়োজন, তিকরিত অভিযানের পর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন হলে আমরা তাদেরই দায়ী করব।
তিনি আরো বলেন, তিকরিতে সামরিক অভিযান চালানো শেষ হলে পরবর্তীকালে উত্তরের বাইজি শহর আবার নিয়ন্ত্রণে নিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আইএস পালিয়ে যাওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার শিয়া মিলিশিয়াদের শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য খালিদ আল-জাসাম। শিয়া আধাসামরিক বাহিনীর বদলে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীকে তিকরিত রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তিকরিত আইএস জঙ্গিদের দখলে ছিল। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সুন্নিপ্রধান এই শহরটির সঙ্গে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক মধুর নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের বরাবরই সন্দেহের চোখে দেখেছে তিকরিতের সুন্নিরা। এর ফলে আইএসের পক্ষে সহজেই শহরটি দখল করা সম্ভব হয়েছিল। আমেরিকা নেতৃত্বাধীন ভারী বিমান হামলা এবং ইরাকি বাহিনীর স্থল অভিযানের পর বুধবার তিকরিতকে জঙ্গিমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হলেও একসময়কার সমৃদ্ধ এই শহরটির অবকাঠামোর প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*