জাতীয় ডেস্ক ।। গত চার বছরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে আয় হয়েছে ৯ কোটি টাকা ।
রবিবার বেলেঘাটায় এক নির্বাচনী প্রচারসভায় গিয়ে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। মমতা জানান, ৩০০টি ছবি বিক্রি করে তার আয় হয়েছে ৯ কোটি টাকা!
মমতার ভাষায়, ‘তিনটে আঁচড় দেব, ১০ লাখ টাকাতে বিক্রি হবে! আমার ৩০০ ছবি ৯ কোটি টাকাতে বিক্রি হয়েছে। ৬০০ ছবি আমি বিনা পয়সায় দিয়েছি।’
অবশ্য শুক্রবার বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্কে তার প্রথম নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ছবি বিক্রি করে ২ কোটি টাকার কিছু বেশি আয় হয়েছে।
এর আগে সিবিআইকে গত চার বছরের (২০১০-’১৪) যে হিসেব তৃণমূলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, দলনেত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি করে আয় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা।
এ দিন বিজেপি তথা কেন্দ্রকেও আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হচ্ছে সিবিআই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া সিবিআই কিছু করে না। ইডি, আয়কর দপ্তরও কেন্দ্রের হাতে। তাদের দিয়ে তৃণমূলকে বিরক্ত করানো হয় ভোটের আগে। এটা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সময়ও হয়েছিল। কারণ, ওরা (বিজেপি) রাজনৈতিক লড়াই করতে পারছে না।’
ছবি আঁকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে স্বাভাবিকভাবেই ছেড়ে কথা বলেননি বিরোধীরা।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র কালই বলেছিলেন, ‘উনি কখন কী বলেন, তার ঠিক নেই। আজ এক বলেছেন, কাল আর এক বলবেন। তার পরে আবার কখন কী বলবেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে!’
সেই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের আঁকা ছবির দাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নতুন হিসেব দিয়েছেন। এটা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আজকাল খুব হাস্যরসের উদ্রেক হচ্ছে! এটা ভাল লক্ষণ। তবে দু’দিনে যখন ছবি বিক্রির হিসেব ২ কোটি থেকে ৯ কোটিতে পৌঁছেছে, আর ক’দিন পরে কোথায় যায় সেটা দেখতে হবে!’
সুজনবাবুর আরো কটাক্ষ, ‘ক্লাস সিক্স-সেভেনের ছেলেমেয়েরাও আজকাল ভাল ছবি আঁকে। তারা যখন শুনছে, মুখ্যমন্ত্রীর এক একটা আঁচড়ের দাম ১৫ লক্ষ টাকা, তখন তারাও বুঝছে এটা শিল্পের দাম নয়! মুখ্যমন্ত্রীর স্পর্শের দাম! তুলির আঁচড়ে তোলাবাজি আর কাকে বলে?’
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রি থেকে আয়ের অঙ্ক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে! শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে, চিট ফান্ড থেকে তৃণমূল কয়েক হাজার কোটি টাকা পেয়েছে এবং তার পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রী নিজের ছবি বিক্রির আয় বলে চালাচ্ছেন!’
বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘তৃণমূল নেত্রীর ছবির দামের ওঠা-পড়া ভারতীয় শেয়ার বাজারের হর্ষদ মেটার যুগকে মনে করিয়ে দিচ্ছে!’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীদের সমালোচনাকে তিনি গুরুত্ব দেন না।
তার কথায়, ‘ওদের কোনো কাজ নেই বলেই আমাকে গালমন্দ করে।’ বিরোধীদের উদ্দেশে তার পাল্টা তোপ, ‘আপনারা আমাকে কি ভাবেন? ভূত না প্রেত? আমি রাক্ষসী না ডাইনি?’
একই সঙ্গে নিজের অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘এদের এত বড় সাহস আমাকে চোর বলে!’
সূত্র: আনন্দাবাজার পত্রিকা