হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভের মুখে মন্ত্রী

সাগর দেব, তেলিয়ামুড়া, ২১ জানুয়ারি || হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভের মুখে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা। মন্ত্রী বিকাশের নির্বাচনী কেন্দ্রে বন্য হাতির তান্ডব থেকে পরিত্রান এবং আগামী দিন বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হানির ঘটনায় পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়ে আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে হাতির তাণ্ডব সহ্যকারী বিক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা। ঘটনা ২৯-কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চাকমাঘাটস্থিত মহকুমা শাসক কার্যালয় সংলগ্ন জাতীয় সড়কে। শুক্রবার এই পথ অবরোধে আটকে পড়ে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী তথা ২৯-কৃষ্ণপুর বিধানসভা নিজের কেন্দ্রের বিধায়ক বিকাশ দেববর্মা।
উল্লেখ্য, আজ থেকে প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তেলিয়ামুড়া মহকুমার ২৯-কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জনবসতি এলাকা গুলির মানুষজনেরা রাতে কিংবা দিনের বেলায় নিজ নিজ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে আতঙ্কে দিন গুজরান করতে হচ্ছে। তার মূলতঃ কারণ শুধু একটাই বন্য হাতির তান্ডব। বলাবাহুল্য এক সময়ের কথা, সেই সময়ে আঠারোমুড়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে ছিল ছোট বড় সবুজ গাছ গাছালিতে ঢাকা। বন্য প্রাণীদের খাদ্যের অভাব ছিল না। বন্য প্রাণীরা বনের মধ্যে যে খাদ্য ছিল সেই খাদ্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকত। কিন্তু ইদানিং কয়েক বছর ধরে বনদস্যু বাহিনীরা বনের ছোট বড় গাছ পালা কেঁটে উজার করে ফাঁকা করে দিয়েছে বন। যার ফলে বিশেষ করে বন্য দাঁতাল হাতির দল খাদ্যের অভাব পূরণ করার তাগিদে লোকালয়ে চলে এসেছে। পাহাড়ের বনাঞ্চল থেকে এসে প্রতিদিন তান্ডব চালাচ্ছে লোকালয়ে, তান্ডব চালাচ্ছে এসে মানুষের বাড়িঘরে ও জমিতে ফলানো ফসলে। আর তাতে করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গৃহস্তারা। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা বণ্য দাঁতাল হাতির আক্রমণে যাদের পরিবারের সদস্যদের অকালে হারাতে হয়েছে। এদিকে বছরের পর বছর ধরে বন্য দাঁতাল হাতির তান্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেক’কে পালিয়ে আসতে হয়েছে অন্যত্র। এদিকে নির্বিকার কুম্ভকর্ণের আচ্ছন্ন তেলিয়ামুড়া বন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক সহ কর্মীরা। শীতের মরসুম শুরু হতে বন্য দাঁতাল হাতি গুলি খাদ্যের সন্ধানে তান্ডব চালায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত গ্রামবাসীদের বাড়িঘর এবং ফসলের জমিতে। তেলিয়ামুড়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা গুলি যেমন ২৯-কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের চাকমাঘাটের বিভিন্ন এলাকা, চামপ্লাই, কৃষ্ণপুর, ভূমিহীন কলোনী, বড়লুঙ্গা, দাওছড়া, ওয়াক্সিমাইল, মহারানীপুর, ডিএম কলোনি, কপালীবস্তি, উত্তর মহারানী সহ বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করছে দাঁতাল বন্য হাতির দল। বিগত দিনগুলিতে হাতির তান্ডব থেকে এলাকাগুলিকে রক্ষা করার জন্য বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কাজের কাজ সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলে রাতে বন্যহাতির পাল হানা দেয় কোন না কোন এলাকাতে। প্রায় ঘন্টার পর ঘন্টা তান্ডবে শতাধিক ফলজ বাগানের কলা, আম, নারিকেল, সুপারি, কাঠাল গাছ মানুষের বাড়ি ঘরে বিরামহীন তান্ডব চালিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলির অভিযোগ থাকলেও হাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বন দপ্তর। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে কি? সংবাদ সুত্রে জানা গিয়েছে হাতির তাণ্ডব যতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে ততদিনে বনদপ্তরের একাংশ কর্মীদের এবং একটি সক্রিয় চক্রের মোটা অংকের টাকা কামাই ততটাই দীর্ঘস্থায়ী হবে।
তাই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি শুক্রবার সকালে হাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ দেখায়। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ এবং তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসক অভিজিৎ চক্রবর্তী। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘন্টা চলে পথ অবরোধ। এই অবরোধ স্থলে আটকে পরে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী তথা এই কেন্দ্রের বিধায়ক বিকাশ দেববর্মা। অবিলম্বে হাতির তান্ডব থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস পেয়ে পথ অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর। এই অবরোধের ফলে জাতীয় সড়কের দু’পান্তে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*