সাগর দেব, তেলিয়ামুড়া, ০৪ ফেব্রুয়ারী || যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে গৃহপালিত পশু গরুকে গো মাতা আখ্যায়িত করে পূজা করার মধ্য দিয়ে গোটা দেশের প্রায় সকলের উদ্দেশ্যে গো মাতার প্রতি সঠিক যত্ন নেওয়ার আবেদন করে থাকেন, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের এই রাজ্যে প্রশাসনিক বিধি নিষেধকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিনিয়ত গরু বা গো মাতার অবমূল্যায়ন চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রীতিমতো কাঁঠালজাক দিয়ে গরু পাচার নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এটা ঘটনা, ত্রিপুরা রাজ্যে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর সুধাংশু দাস কয়েকদিন বেশ কিছুদিন হম্বিতম্বি জাহির করে বিভিন্ন জায়গায় আইন বা প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গরু পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিষয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে বর্তমান সময়ে যেভাবে রাজ্যের দিকে দিকে অবৈধভাবে গাড়ি বোঝাই করে গরুর পাচার চলছে, সে ক্ষেত্রে মন্ত্রীর আন্তরিকতা সহ মন্ত্রীর সার্বিক ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে। যাই হোক পরবর্তীতে চাপে পরিই হোক বা যে কারণেই হোক অবৈধ পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক গবাদি পশু বোঝাই একটি ট্রাক গাড়ি। উদ্ধার হয় ১৪টি গরু। ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে তেলিয়ামুড়া থানাধীন হাওয়াই বাড়ি নাকা পয়েন্টে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবৈধ পদ্ধতিতে অমানবিক ভাবে গাড়ি বোঝাই করে গবাদি পশু অর্থাৎ গরু নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের বর্ডার সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকাগুলিতে। সবকিছু জেনেও ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায় রয়েছে রাজ্য পুলিশ। শনিবার রাতে জরিমানা আদায় জন্য ফটিকরায় থেকে বিশালগড়ের উদ্দেশ্যে যাওয়া অমানবিক ভাবে গরু বোঝাই করা TR 03C-1614 নম্বরের একটি বোলেরো পিকআপ গাড়ি’কে আটক করে হাওয়াই বাড়ি নাকার পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণাত কোন এক সূত্রের মারফত এই ঘটনার খবর যায় ‘ধ্যান ফাউন্ডেশন’ এবং ‘গো জ্ঞান ফাউন্ডেশন’ নামের দুইটি সংস্থার নিকট। এই খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঐ দুই সংস্থা যৌথভাবে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এই ঘটনার খবর দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের নিকট। ঘটনার খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ তেলিয়ামুড়া থানার ওসি’র কাছে ওই গাড়িটিকে আটক করার জন্য নির্দেশ আসে বলে সূত্রের খবর। নির্দেশ পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ হওয়ায় বাড়ি নাকা থেকে গরু বোঝাই ওই গাড়িটিকে আটক করে নিয়ে আসে তেলিয়ামুড়া থানায়। অবৈধ উপায়ে গরু নিয়ে যাওয়ার কারণে পুলিশ 382F IPC ক্যাটেল লিফটিং ধারা সহ অ্যানিমেল অ্যাক্টের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে গাড়ির চালক রহমান মিয়া’কে গ্রেপ্তার করে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ। তৎসঙ্গে ১৪টি গরু সহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত গাড়িটিকেও নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেকোনো ধরনের গবাদি পশু গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানীয় জল সহ গবাদি পশুগুলির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকা আবশ্যিক। কিন্তু কিভাবে এইসব নীতি নির্দেশিকাকে কোনো তোয়াক্কা না করে অবৈধ উপায়ে একটি গাড়ির মধ্যে ১৪টি গরু বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে। অন্যদিকে তেলিয়ামুড়া থানা সূত্রে খবর, বোঝাই এই গাড়িটি আটকের পর বিশালগড়ের গোপাল ভিড় নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোক তেলিয়ামুড়া থানা থেকে গরুগুলিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ময়দানে নামে।
যদিও বিশ্বস্ত সূত্র মারফত খবর, গরুগুলোকে তেলিয়ামুড়া থানা থেকেই ছাড়িয়ে নিতে বিভিন্ন ছোট, বড়, সিকি, আধুলি নেতাদের হাত ধরে বিভিন্ন প্রকারের যোগাযোগের প্রক্রিয়া চলছে, কিন্তু বিষয়টা জানাজানি হওয়ার কারণে এ যাত্রায় হয়তোবা পর্দার আড়ালে ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গোটা বিষয় নিয়ে খবরের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গরুগুলোকে রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সুধাংশু দাসের নির্বাচনী ক্ষেত্র অর্থাৎ ফটিকরায় থেকে কোন খাবার ছাড়া অবৈজ্ঞানিক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এমন ভাবে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যা দেখলে যে কোন সুস্থ মানসিকতার মানুষ আতকে উঠতে বাধ্য। শুধুমাত্র এই একটি ঘটনা প্রমাণ করে রাজ্যে কিভাবে প্রশাসনকে অথর্ব বানিয়ে দিয়ে একাংশ দুষ্টচক্রীরা ছোট বড় মাঝারি বাবুদের ম্যানেজ করে গরু পাচার বাণিজ্য কায়েম রেখেছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে সঠিক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে বলে দাবি উঠছে। পাশাপাশি তেলিয়ামুড়াতে ১৪টি গরুসহ গাড়ি আটক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে ফটিকরায় থেকে তেলিয়ামুড়া, এই দীর্ঘ পথে এতগুলো থানা বা নাকা পয়েন্টকে ভেদ করে গরু বোঝাই গাড়ি যে জাদু বলে এসে পৌঁছতে পেরেছে, সেই জাদুর উৎস কি? নিশ্চিত ভাবে নগদ নারায়ন এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।