আপডেট প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ ফেব্রুয়ারী || পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা ভিত্তিক মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান (মাসকা) ৬.০ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় শুক্রবার রাজধানীর বেলাবর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এদিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা মিনা রাণী সরকার ও পশ্চিম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সভাধিপতি হরিল দুলাল আচার্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিম জেলার CMO সহ অন্যান্যরা।
জানা যায়, অভিযানের সময়সীমা ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত করা হয়েছে। ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার, টেকনিক্যাল কলেজে সমস্ত জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী সুস্থা শৈশব সুস্থ কিশোর অভিযানের কর্মসূচি চলবে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বাড়ি বাড়ি, ইটভাট্টা, চা বাগান, আরবান বস্তি, প্রাইভেট কোচিং ইনস্টিটিউশন ইত্যাদি জায়গাগুলোতে। ১৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২২শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্পেশাল গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মাতৃদুগ্ধ পান এর উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতন করা হবে এবং কিশোরীদের যাতে বিবাহ না হয় সে বিষয়ে প্রচার প্রসার করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযানের পঞ্চম পর্যায়ে গোটা রাজ্যের মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা সাফল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এচিভমেন্ট আনতে পেরেছে বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাকে কেট পারফর্মিং জেলা হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়ে সম্মানিত করেছেন। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি বিশালগড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া রাজ্যভিত্তিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই সম্মান অর্পণ করা হয়েছে।
জানা যায়, শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, কিশোর কিশোরী সকলেই মাসকা প্রোগ্রামের সুবিধাভোগী। এই কর্মসূচিতে যে সুবিধা গুলো বা বেনিফিট গুলো সুবিধাভোগীদের পৌঁছানো হবে সেগুলো হচ্ছেঃ
১. কুমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো, ২. আয়রন ফলিক এসিডের পরিপুরক প্রদান কর, ৩. টিটেনাস ডিপথেরিয়া টিকা ১০ বছর এবং ১৬ বছরের কিশোর কিশোরীদের দেওয়া, ৪. ভিটামিন A এর পরিপূরক ডোজ দেওয়া, ৫. পাঁচ বছরের নিচে সকল শিশুদের একটি করে ওআরএস প্রদান করা সহ ডায়রিয়াতে আক্রান্ত বাচ্চাদের ওআরএস এবং জিংক প্রদান করা। এছাড়া ছোট শিশুরা ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত কিনা সেটা নিরূপণ করা হবে এবং আক্রান্ত বাচ্চাদের রেফার করা হবে।
জানা যায়, আশারা বাড়ি বাড়ি ভিজিট এর সময় ৪৫ দিনের নিচের বয়সের বাচ্চাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, তাদের কোন ধরনের সমস্যা আছে কিনা সেটা যাচাই করবে এবং ১৫ মাসের নিচের বয়সের বাচ্চাদের কারোর কোন সমস্যা আছে কিনা সেটা নিরূপণ করবে এবং প্রয়োজন ভিত্তিতে তাদের রেফার করবে।
এই সময় মিজেলস-রুবেলা এবং পোলিও রোগের কোন ধরনের লক্ষণ কারুর মধ্যে থাকলে তাদের নাম নথিভূক্ত করে তাদের স্যাম্পল কালেকশনের ব্যবস্থাও করা হবে।
এই কর্মসূচিতে স্কুলগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে অঙ্গনওয়াড়ি দিদিমনি, কমিউনিটিতে আশা দিদি মনিরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। চা বাগান, ইটভাট্টা, কলেজ, প্রাইভেট ইনস্টিটিউটে সমস্ত জায়গাতে এ এন এম (ANM), এমপি ডাব্লিউ (MPW) এবং সি এইচ ও (CHO) মূলত কাজগুলোকে সম্পন্ন করবেন।
এই কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা: ২,৬৯,৩৮৮ জনকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর, ৬৪,৪১৩ জন শিশুকে আয়রন ফলিক এসিডের সিরাপ প্রদান করার, ৬৫,৭৩১ জন শিশুকে গোলাপি রঙের আয়রন ফলিক এসিডের ট্যাবলেট দেওয়ার, ১,১৭,৭০২ জন শিশুকে নীল রঙের আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে।
পোষণ অভিযানের অন্তর্গত ৬০,৮৫৭ জন শিশুকে ওজন এবং বৃদ্ধি পরিমাপ করে পোষণ ট্রেকারে এন্ট্রি দেওয়া হবে, ৬৩,৭৬৬ জন শিশুকে ওআরএস প্রদান করা হবে, ৭,২৮৬ জন শিশুকে টডি ১০, ৭,১৩৫ জন শিশুকে আইডি ১৬ টিকাকরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। ১,৪৪০ জন আশা কর্মী, ১,৭৫৪ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এই কাজে নিযুক্ত থাকবেন। ৬২৫ সংখ্যক গভর্নমেন্ট স্কুলে, ১৮৮ সংখ্যক প্রাইভেট স্কুলে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচিকে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি PHC, CHC, UPHC থেকে আগত নোডাল অফিসারদের জেলা অফিসে প্রশিক্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নোডাল অফিসাররা নিজ নিজ এলাকার সমস্ত স্কুলের একজন নোডাল্ টিচারকে প্রশিক্ষিত করেছেন, সকল আশা দিদিদের প্রশিক্ষিত করেছেন, সকল অঙ্গনওয়াড়ি দিদিদের প্রশিক্ষিত করেছেন সকল এমপি ডাব্লিউ (MPW), সি এইচ ও (CHO) MPS দের প্রশিক্ষিত করে এই কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।