কাঠমাণ্ডু ।। বিদ্ধস্ত বুদ্ধভূমি। গত আশি বছরে এমন ভূমিকম্প দেখেনি নেপাল। মৃতের সংখ্যা ১৫০০ ছাপিয়ে গেল। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অসংখ্য মানুষ। গোটা কাঠমান্ডু শহরটাই পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। মৃত্যু মিছিল আর স্বজনহারার কান্নায় ভারি শহরের বাতাস। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে নেপাল সরকার।
ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটা ছুঁইছুঁই। কেঁপে উঠল উত্তর পশ্চিম কাঠমান্ডু থেকে আশি কিলোমিটার দূরত্বে পোখরার লামজুং। কম্পন ছড়িয়ে পড়ল শান্ত বুদ্ধভূমির পথে। কেঁপে উঠল নেপাল লাগোয়া বিহারের পূর্ব চম্পারণ ,সীতামারি, দ্বারভাঙা, সুপৌল, আড়ারিয়া, পশ্চিম চম্পারণ, শিহোর, সারণ। প্রকৃতির রোষে লন্ডভন্ড শান্ত বুদ্ধভূমি। যে পথ ধরে একদিন শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ, সেই পথেই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা সাত দশমিক নয়। বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায় গ্রেট আর্থকোয়েক। মিনিট দুয়েকের ভূকম্পনেই বিধ্বস্ত কাঠমান্ডু।
তারপর আরও চোদ্দ থেকে পনেরোবার কেঁপে কেঁপে উঠেছে নেপাল। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। রাস্তায় চওড়া ফাটল। ভেঙে পড়েছে বহু পুরনো বাড়ি। প্রকৃতির রোষে তখন গুড়িয়ে গেছে ইউনেস্কোর ওয়ালর্ড হেরিটেজ সাইট দরবার স্কোয়ার। ক্ষতিগ্রস্ত শতাব্দী প্রাচীন ধারহারা টাওয়ারও। কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসও ক্ষতিগ্রস্ত ।
সময় যত এগিয়েছে লাফ দিয়ে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। এযেন মৃত্যু উপত্যকা। স্বজনহারা মানুষের বাঁধভাঙা কান্নায় ভারি হয়েছে বাতাস।
হাসপাতালে বেড়েছে জখম মানুষের সংখ্যা। যুদ্ধকালীন উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ভারতীয় সেনা।
দুর্গতদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চালু করা হয়েছে ৯৭৭৯৮৫১১০৭০২১ ও ৯৭৭৯৮৫১১৩৫১৪১দুটি হেল্প লাইন।
নেপালকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। সেনা প্রধান দলবীর সিংকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য নেপাল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা দফতর সূত্রের খবর বায়ু সেনার বিমানে উনচল্লিশ জনের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নেপালে পৌছেছে। পৌছেছে মেডিক্যাল টিমও। ভূমিকম্পের জেরে এভারেস্টের তুষারধসে ধ্বংস হয়ে গেছে বেস ক্যাম্পের প্রায় বারোটি শিবির। মিলেছে ১৫ জনের দেহ।
নিখোঁজ অনেক পর্বাতারোহী। তবে নিরাপদেই রয়েছেন বারোজন বাঙালি পর্বাতারোহী।