সুব্রত দাস, গন্ডাছড়া, ১২ জুলাই || আনন্দ মেলা বা নাগরদোলা মেলায় আক্রান্ত জনজাতি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ গোটা গন্ডাছড়া মহকুমা। শুক্রবার দিন দুপুরেই অজানা আতঙ্ক আর ভয়ে গন্ডাছড়া মহকুমা সদর বাজার, নারায়ণপুর চৌমুহনি বাজার এবং গ্রামীণ হাট হিসাবে পরিচিত মনোরঞ্জনদাস পাড়ার বাজারটিও বন্ধ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় নাম ডেকে ছুটি দেওয়া হয় মহকুমার ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। ছুটি দেওয়া হয় গন্ডাছড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, কবিগুরু স্মৃতি বিদ্যালয়, ছুটি দেওয়া হয় দুইটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।
এদিন দুপুর নাগাদ মহকুমা শাসকের পক্ষে মাইকযোগে ১৬৩ ধারা গোটা মহকুমায় বলবৎ করা হয়। পালিয়ে বেড়াচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্বরা। অপরদিকে দোকানিদের বা ব্যবসায়ীদের পাশে না দাঁড়িয়ে পালিয়ে গেলেন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির লোকজনরা। শুক্রবার দুপুর নাগাদ গোটা গন্ডাছড়া মহকুমা শ্মশানে পরিণত হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমায় গত পনেরো দিন যাবত মহকুমার লক্ষীপুর এডিসি ভিলেজের ত্রিশকার্ড এলাকার অন্তর্গত ডিগ্রী কলেজ লাগোয়া ত্রিপুরা ক্রিকেট এসোশিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত গন্ডাছড়া ক্রিকেট মাঠে নাগরদোলা মেলা চলছিল। ওই মেলা শুরুর পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই ছোটখাটো মারপিটের ঘটনা ঘটে আসছিলো। কারণ ওই মেলা প্রাঙ্গনে ছিলোনা পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ছিল না পুলিশ বা অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মী। ছিল না কোন স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা। বেপাত্তা ছিল নাগরদোলা মেলা কমিটিও। এভাবেই ছন্নছাড়া অবস্থায় চলে আসছিলো ক্রিকেট মাঠের মেলা অনুষ্ঠান। প্রতিদিনের মারামারির মতোই সোমবারও রাত আটটায় ঐ নাগরদোলা মেলায় একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, ঐদিন গন্ডাছড়া মহকুমার জগবন্ধুপাড়ার শান্তশিষ্ট সৎ যুবক হিসাবে পরিচিত পরমেশ্বর রিয়াং বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মেলা দেখতে আসে। কোন এক বিষয় নিয়ে জনা কয়েক যুবকের সঙ্গে বাক বিতন্ডা হয়। এই বাক বিতন্ডাকে কেন্দ্র করেই জনাকয়েক জন যুবক সম্মিলিত ভাবে পরমেশ্বরের উপর হামলে পড়ে এবং মারধোর করে। মারধোর চলাকালীন এক সময়ে পরমেশ্বর রিয়াং মেলায় ব্যবহৃত বিদ্যুতের লাইনে শক খেয়ে মাটিতে লোটিয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ। গুরতর আহত অবস্থায় পরমেশ্বরকে আনা হয় গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালে। আহতের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আগরতলা জিবি হাসপাতালে। উক্ত ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত গন্ডাছড়া মহকুমায় উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে চার জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। এরই মধ্যে শুক্রবার খবর আসে গুরুতর আহত পরমেশ্বর রিয়াং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। পরমেশ্বরের মৃত্যুর সংবাদটি গন্ডাছড়ায় ছড়িয়ে পড়তেই একাংশ জনজাতিদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। ভয়ে আতঙ্কে বাজার ছাড়তে থাকে ক্রেতারা। ক্রেতাদের পাশাপাশি দুপুর নাগাদ গন্ডাছড়া মহকুমা সদর বাজার, নারায়ণপুর চৌমুহনি বাজার এবং গ্রামীণ হাট পিছলিগাছ বাজারও ক্ষনিকের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। শ্মশানে পরিণত হয় বাজার গুলি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি করা সেইটুকু জানার জন্যও কোন নেতাকেই খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার কমিটিও প্রায় পলাতক। বাজার ব্যবসায়ীরা যখন নিরুপায় হয়ে দোকানপাট বন্ধ করছিলেন তখনও বাজার কমিটির কোন কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাসটুকু দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ফলে বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা মহকুমা সদর, ত্রিশকার্ড, ষাটকার্ড হরিপুরে বাড়তি পুলিশ, টিএসআর, সিআরপিএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে ঘটনার সার্বিক দিকে লক্ষ রাখতে আইপিএফটি’র বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রেমসাধন ত্রিপুরা গাড়িতে গোটা মহকুমা চষে বেড়াতে দেখা গিয়েছে।